Naya Diganta

আগ্রাসী টাইগারদের বার্তা দিয়ে রাখল কি আয়ারল্যান্ড

ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ের পর টি-২০ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে নাকানি-চুবানি খেয়েছে টাইগাররা। বৃষ্টিবিঘিœত দুই ম্যাচেই করেছে দুই শ’র ওপরে রান। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি আইরিশরা। গতকাল শেষ ম্যাচে টাইগাররা যখন ছক কষছিল বাংলাওয়াশের, তখনি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াল সফরকারীরা। একপ্রকার প্রতিশোধই নিলো আগের ম্যাচগুলোর। আগামী মাসেই আয়ারল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ। সাগরিকার এই জয়ই কি বার্তা দিয়ে রাখল আয়ারল্যান্ড।
ম্যাচে গত ওয়ানডেতে সমীহ জাগানিয়া দল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এবার পরিবর্তনের পরিকল্পনাটা ছিল টি-২০কে ঘিরে। চলতি বছর ভারতে বিশ্বকাপটাও একটা ফ্যাক্টর। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে আভাসটা দ্বিতীয় ম্যাচের পরই দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে। এবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পালা। সেটি দেখা গেল গতকাল সিরিজের শেষ ম্যাচের একাদশেও। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো। তাকে জায়গা করে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলে ফিরেছেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামও, মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় খেলেছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশ দলের সমন্বয়টা হলো ছয় ব্যাটসম্যান ও পাঁচ বোলারের।
একাদশ ও সমন্বয়ে পরিবর্তন এলেও বদলায়নি বাংলাদেশ টি-২০ দলের ব্যাটিং স্টাইল। ২০ ওভারের খেলাটা যেভাবে খেলা উচিত, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচের মতো গতকালও প্রথম বল থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের। আগের দুই ম্যাচ জিতে মনে হয় একটু অহঙ্কারও করছিল। সব বলই মারার ইচ্ছাশক্তি দেখা গেছে সবার মাঝে।
সব দিন তো আর সমান যায় না। প্রথম দুই ম্যাচে সেটি কাজে দিয়েছে, গতকাল সেটি কাজে দেয়নি। টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৬১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একটা সময় ধরেই নেয়া হয়েছিল শত রানের আগেই গুটিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশের রানটাকে ১২৪-এ নিয়ে যান শামীম হোসেন। তার ৪২ বলে ৫১ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে এনে দেয় মোটামুটি লড়াই করার মতো স্কোর।


বাংলাদেশ দল টি-২০ ক্রিকেটটা রিস্ক নিয়েই খেলতে চায়। লিটন দাস শুরুতেই ফিওন হ্যান্ডের প্রথম বলটি স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠান। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনাটা ওই প্রথম বলেই স্পষ্ট। তবে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখেছে বাংলার ক্রিকেটাররা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মার্ক এডেয়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ আউট হন লিটন। পরের ওভারে হ্যারি টেক্টরকে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন। টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় ডিপ মিড উইকেটে কার্টিস ক্যাম্ফারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। দুই উইকেট হারানোর পরও মেরে খেলার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার রনি তালুকদার। ক্যাম্ফারকে পুল শটে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন তিনিও। ক্রিজে তৌহিদ হৃদয় ও অধিনায়ক সাকিব নিরাপদ ব্যাটিং করলেন না। খেললেন আক্রমণাত্মক, যা হওয়ার তাই। দুইজনই হলেন ক্যাচ আউট। একজন অ্যাডায়ারের বলে, অন্যজন বেন হোয়াইটের বলে। ৪১ রানে যখন ৫ উইকেট নেই তখন অভিষিক্ত রিশাদ এসেই ছক্কা দিয়ে শুরু করেন।
মাঝের ব্যাটার শামিম একাই হাল ধরেন। ইনিংসের শেষার্ধ্বে লেজের দিকের ব্যাটারদের সাথে শামিম ছোট ছোট জুটি গড়েন। প্রথমে রিশাদ, নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদের সাথে যুগলবন্দী বাংলাদেশের রানটাকে নিয়ে যান এক শ’র ওপারে। বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে পেয়ে যান নিজের প্রথম টি-২০ ফিফটিও। তবে ইনিংসের ৫ বল বাকি থাকতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। তার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৫১ রানের ঝলমলে ইনিংস। তবে আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়ে দেন স্টালিং। প্রতিটি টাইগার বোলাদের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছেন। সাকিবের প্রথম ওভারে তো পরপর দু’টি বাউন্ডারি হাঁকান। এটা কি বার্তা দিয়ে রাখলেন আসন্ন বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ড সফরের।