Naya Diganta

জাহান্নাম ও জাহান্নামবাসী


(চতুর্থ অংশ)
যেসব অপরাধে অপরাধী হয়ে মানুষ জাহান্নামে স্থান পাবে, তা থেকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অপরাধ বা পাপকাজের ধারাবাহিকতা পূর্বের প্রকাশিত অংশের পর নিম্নে উল্লিখিত হলো-
১৩. রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধাচরণ এবং মুমিনগণের পথ অনুসরণ না করা : আল্লাহর বাণী- ‘কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে সে যে দিকে যায় আমি তাকে সে দিকেই ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল (সূরা আন নিসা-১১৫)।
আলোচ্য আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয়- কোনো অবস্থাতেই রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধাচরণ এবং মুমিনগণের পথ অর্থাৎ ‘সিরাতুল মুসতাকিম’ ব্যতীত অন্য কোনো পথ অনুসরণ করব না, যাতে করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত না হই।


১৪. কুরআন প্রচারে বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করা : আল্লাহর বাণী- ‘কাফিররা বলে, তোমরা এই কুরআন শ্রবণ করো না এবং এতে গোলমাল করো, এতে আশা করা যায় তোমরা জয়লাভও করবে। সুতরাং আমি কাফিরদেরকে কঠিন আজাবের স্বাদ গ্রহণ করাব এবং তাদের কুকর্মের প্রতিদান দেবো’ (সূরা হা-মিম সেজদাহ : ২৬-২৭)।
আলোচ্য আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয়- কোনো অবস্থাতেই আমরা কুরআন প্রচারে বাধাবিঘœ সৃষ্টি করব না জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
১৫. কুরআনের বাণী উপেক্ষা করা : আল্লাহর বাণী- ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। যখন তাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তারা অহঙ্কার করে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন তারা তা শুনতে পায়নি অথবা তাদের দুই কান বধির। অতএব তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন’ (সূরা লোকমান : ৬-৭)।
আলোচ্য আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয়- কোনো অবস্থাতেই আমরা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করব না অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবো না। তা ছাড়া আমাদের সামনে আল্লাহর বাণীসমূহ পাঠ করা হলে তখন আমরা অহঙ্কার করে মুখ ফিরিয়ে নেবো না জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে।
১৬. আল্লাহর বিধান আংশিক মানা : আল্লাহর বাণী- ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ স্বীকার করো এবং কিছু অংশ অস্বীকার করো? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই। কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন’ ( সূরা আল বাকারা : ৮৫-৮৬)।
আলোচ্য আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয়- আমরা আল্লাহর বাণীসমূহ পরিপূর্ণভাবে স্বীকার করব এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করব জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
১৭. সালাত আদায় না করা : আল্লাহর বাণী- ‘জান্নাতবাসীরা জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞেস করবে, কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছাল? তারা উত্তরে বলবে, আমরা সালাত আদায়কারী ছিলাম না’ (সূরা আল মুদ্দাসসির : ৪২-৪৩)।


আলোচ্য আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয়- আমরা অবশ্যই সালাত, যা সর্বোত্তম ইবাদত, কায়িম করব যথাযথভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বার্থে।
১৮. জাকাত পরিশোধ না করা : আল্লাহর বাণী- ‘হে মুমিনগণ! ইহুদি পণ্ডিত এবং খ্রিষ্টান সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে থাকে এবং লোককে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় (জাকাত প্রদান) করে না, তাদেরকে কঠোর আজাবের সংবাদ দাও। যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের কপাল, তাদের পাঁজর ও পিঠে দাগ দেয়া হবে, সে দিন বলা হবে এটাই তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করেছিলে, তা আস্বাদন করো’ (সূরা আত তাওবাহ : ৩৪-৩৫)।
একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি যদি তার পার্থিব জীবনে এমন একটি পরিস্থিতিতে নিপতিত হয় যে, হয় তার সব সম্পদ বিসর্জন দিতে হবে অথবা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। এমতাবস্থায় স্বভাবতই সে তার সব সম্পদ বিসর্জন দিতে রাজি থাকবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার বিনিময়ে। এ যদি হয় পার্থিব জীবনের অবস্থা, তাহলে ৭০ গুণ বেশি উত্তপ্ত চিরস্থায়ী জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদ থাকার ব্যাপারে আমরা কী করে বছরের পর বছর জাকাত আদায় না করে নির্বোধের মতো মৃত্যুবরণ করতে পারি?
আলোচ্য আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয়- অন্যের ধন-সম্পদ কোনো অবস্থাতেই আত্মসাৎ করব না, আল্লাহর পথে আসাকে বাধাগ্রস্ত করব না বরং আহ্বান করব আদেশ-উপদেশাবলি দিয়ে। তা ছাড়া নিয়মিত জাকাত আদায় করব জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা লাভের জন্য।
হে পরম করুণাময় আল্লাহ! দয়া করে আপনার গোলামগণকে জাহান্নামবাসী হওয়া থেকে রক্ষা করুন এবং জান্নাত দান করুন। আমীন।

লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ