Naya Diganta
পুঁজিবাজারে নাজুক পরিস্থিতি

বিদেশী বিনিয়োগ নেই

পুঁজিবাজারে নাজুক পরিস্থিতি

সার্বিক অর্থনীতির মতো ক্রমেই খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারে দীর্ঘকাল ধরে মন্দাবস্থা চলছে। বাজার চাঙ্গা করতে বিভিন্ন সময় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ অকার্যকর প্রমাণ হয়েছে। এখন শেয়ারের দামের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বলে যে ঠেক দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটিও বাজারের জন্য সুফল দিচ্ছে না। বিদেশী বিনিয়োগ আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
গত কয়েক দিনে নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত আড়াই বছর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এক টাকাও বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি; বরং আগে যেসব বিনিয়োগ এসেছিল সেগুলোও তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা। গত সাত মাসে এ ধরনের পুরোনো বিনিয়োগ কমেছে চার কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার পর্যবেক্ষক, বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারে যে করুণ অবস্থা চলছে এর পেছনে বিদেশী বিনিয়োগ পরিস্থিতিরও অন্যতম ভূমিকা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান উল্লেখ করে পত্রিকাগুলো জানাচ্ছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগের (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) পরিমাণ প্রায় ৩৫ কোটি ডলার থেকে কমে এখন মাইনাস ২৭ কোটি ডলারে এসে দাঁড়ায়। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পুরোনো বিনিয়োগ কমেছে চার কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪-৫ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ থাকা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো। আমাদের বাজারেও সেরকমই আছে। কিন্তু ২০০৯-১০ সালে বাজারে বড় ধসের পর চার-পাঁচ বছর বিদেশী বিনিয়োগ ছিল না বললে চলে। বাজার সুস্থ-স্বাভাবিক না হলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। বাজারে ২০১০ সালের সেই বিশাল ধসের কারণ সবারই জানা। কৃত্রিমভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ ও পুঁজি হাতিয়ে নেয়ার গভীর চক্রান্ত ছিল সেটি। বিশেষ করে ক্ষুদে বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়েছিল সেই লুটপাটের ঘটনা। আর সাধারণভাবে পুরো বাজারের ওপর থেকে আস্থা উঠে গিয়েছিল সবার। আস্থা হয়তো ফিরে আসত। কিন্তু বাজারে হস্তক্ষেপ ও লুটপাটের ঘটনা বন্ধ হয়নি। এসব কারসাজির জন্য দায়ী প্রভাবশালীদের কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি; বরং রাজনৈতিকভাবে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।
কোনো দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অডিটসহ স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্টক এক্সচেঞ্জের পারফরম্যান্স ইত্যাদি তারা খতিয়ে দেখেন। বর্তমানে আমাদের দেশে স্বচ্ছতা বা জবাবদিহির কী বেহাল অবস্থা তা সবার জানা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে গভীর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত সেটিও স্পষ্ট। আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও সুষ্ঠুতার অভাব পুরো অর্থনীতিকে গ্রাস করতে উদ্যত। এরকম এক পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে নতুন বিদেশী বিনিয়োগ আশা করা বাতুলতা মাত্র। তাছাড়া সব দেশে ডলারের বাজার অস্থির থাকলে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কমে। পুঁজিবাজারে শেয়ারের ন্যূনতম দাম নির্ধারিত থাকা অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণেও নতুন বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
মূলত আর্থিক খাতে সরকারের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা পুঁজিবাজার এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ধসের কারণ। পুঁজিবাজারের অবস্থা এখন খুব নাজুক, লেনদেন তলানিতে। দিন যত যাবে অবস্থার তত অবনতি ঘটবে। পুঁজিবাজারে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না এলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসবে না এটি স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ পেতে সম্প্রতি সরকার আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তাতে শৃঙ্খলা কতটা ফেরানো যাবে তা নিয়ে সংশয়ের সঙ্গত যথেষ্ট কারণ রয়েছে।