Naya Diganta

বাখমুত দখলে ব্যর্থ রাশিয়া

ইউক্রেনের দনবাস প্রদেশের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহর দখলে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে রুশ বাহিনী- এমনটাই দাবি করেছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী। এ ছাড়া বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক হচ্ছে’ বলেও দাবি করেছেন দেশটির কমান্ডার ইন চিফ ভেলারি ঝালুঝনি। এ মাসের শুরুতে পশ্চিমা কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, বাখমুত দখলে এসে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার রুশ সেনা আহত বা নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপির।
তীব্র হামলা সত্ত্বেও ‘অসাধারণ প্রচেষ্টার’ মাধ্যমে বাখমুতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো সাফল্য না পাওয়ায় একটি জয় পেতে মুখিয়ে আছে রাশিয়া। এ কারণে বাখুমত দখল করতে চেয়েছিল তারা। যদিও পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, কৌশলগতভাবে বাখমুতের গুরুত্ব কম। এটি দখল করতে পারলে একটি ‘প্রতীকী’ বিজয় পেত রুশ বাহিনী।
বাখমুতের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে এক ফেসবুক পোস্টে ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ বলেছেন, ‘যুদ্ধের সম্মুখভাগে ইউক্রেনের জন্য বাখমুতের দিকটি সবচেয়ে কঠিন। আমাদের সেনাদের অসাধার প্রচেষ্টার কারণে, আমরা সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারছি।’ তার এ মন্তব্যের মাধ্যমে মূলত বাখমুতের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের স্থল সেনা কমান্ডার ওলেক্সান্ডার সারেস্কি দাবি করেন, বাখমুতে যুদ্ধরত রুশ সেনারা ‘ক্লান্ত’ হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়া সত্ত্বেও বাখমুত দখলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই সেনা কমান্ডার আরো জানান, রুশ বাহিনীর শক্তি হ্রাস পাওয়ার বিষয়টির সুবিধা তুলে নিয়ে বাখমুতে শিগগিরিই পাল্টা আক্রমণ চালাবেন তারা।
আইসিসিকে রাশিয়ায় নিষিদ্ধের প্রস্তাব : নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-আইসিসি) এবং এ আদালতের যাবতীয় কর্মকাণ্ড রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব উঠেছে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমায়। দুমার স্পিকার ভিয়েচেসøাভ ভলোদিন নিজে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ভিয়েচেসøাভ ভলোদিন স্থানীয় সময় শনিবার দুমার অধিবেশনে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির সাম্প্রতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রসঙ্গে বলেন, রাশিয়ায় আইসিসির যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এই সংস্থাকে যারা সহায়তা ও সমর্থন করবে তাদের শাস্তির বিধান রেখে পার্লামেন্টে আইন পাস করা উচিত। পরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্টও দেন দুমার স্পিকার। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অভ্যন্তরে আইসিসির যেকোনো কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করা এখন জরুরি।’
ইউক্রেনের ‘অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চল’ থেকে এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি শিশুকে রাশিয়ায় পাচারের অভিযোগে গত ১৮ মার্চ পুতিন এবং রাশিয়ার শিশু বিষয়ক কমিশনের কমিশনার মারিয়া লেভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি। প্রায় ১৩ মাস আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শিশু পাচারের এ অভিযোগ জানিয়েছিল। ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল এটি।
তবে এই পরোয়ানা জারির পর গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। পরোয়ানা প্রথম দিনই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া ঝাখারোভা এই পরোয়ানাকে ‘টয়লেট পেপার’ বলে আখ্যা দেন। দু’দিন পর ২০ মার্চ মস্কোর আদালতে আইসিসির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ হুমকি দেন, পুতিনকে গ্রেফতার করা হলে সেটি হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার শামিল। তার পরের দিন শুক্রবার আইসিসিকে রাশিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানালেন দুমার স্পিকার ভিয়েচেসøাভ ভলোদিন।
চীন এখনো রাশিয়াকে অস্ত্র দেয়নি-বাইডেন : চীন এখনো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে রাশিয়াকে কোনো অস্ত্র দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত শুক্রবার কানাডার পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে এ মন্তব্য করেন বাইডেন। ‘গত তিন মাস ধরেই শুনছি রাশিয়াকে যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে চীন। তারা (চীন) এখনো দেয়নি, এর মানে এই নয় যে তারা দেবে না। কিন্তু এখনো তারা অস্ত্র দেয়নি’, বলেন জো বাইডেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমি চীনকে হালকাভাবে নেই না, রাশিয়াকেও হালকাভাবে নিচ্ছি না। দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার কানাডা পৌঁছেন বাইডেন।
চীন যাচ্ছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী : চীন সফরে যাচ্ছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানসেজ। আগামী সপ্তাহে এ সফরের সময় তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠক করবেন। এ সময় ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন এ দুই নেতা। গত বৃহস্পতিবার পেদ্রো সানসেজ তার এই চীন সফরের কথা নিজেই সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নিয়ে সফরকালে তিনি শি জিনপিংয়ের সাথে আলোচনা করবেন। ব্রাসেলসে পেদ্রো সানজেস বলেন, ‘আমরা (তিনি ও সি চিন পিং) ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলব। ইউক্রেনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটি স্থিতিশীল ও টেকসই শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারা।’ শি জিনপিংয়ের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিংয়ে যাচ্ছেন পেদ্রো সানসেজ।