Naya Diganta
ভবদহের বিলে ফসলের হাতছানি

এমন সম্ভাবনা সর্বত্র বাস্তবায়িত হোক

ভবদহের বিলে ফসলের হাতছানি

নয়া দিগন্তের মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, পাঁচ বছর পরে ভবদহ অঞ্চলের দু’টি বিলে এখন ফসল হাতছানি দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে ভবদহের বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বিল দু’টিতে দিগন্তজোড়া বিরাট মাঠে বোরো ধানের সমারোহ। ভবদহের ‘জাঁতাকলে পিষ্ট’ এই দুই বিলের কৃষকের উদ্যোগে বিল থেকে পানি নিষ্কাশনের ফলে সবুজ বিপ্লবের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
ভবদহের জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে সংগঠিত হন। তাদের কোটি টাকা ব্যয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ সংস্কার করে বিএডিসির সহায়তায় পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়। এরপর বোরো মৌসুমে প্রায় ৮৬ শতাংশ জমিতে আবাদ হয়েছে।
২০২০ সালের শুরুতে বিল কপালিয়া থেকে পানি সরাতে ইউপি চেয়ারম্যান মশিয়ূর রহমান, কালিপদ মণ্ডল, পরিতোষ বিশ্বাসসহ অনেকে সংগঠিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করেন। তাদের উদ্যোগে কৃষকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেচপাম্প স্থাপন করে বিল থেকে পানি নিষ্কাশন শুরু করা হয়। শুরুতে ফল না হলেও পরবর্তীতে সুফল আসতে শুরু করে। তাই প্রতি বছর বিল কপালিয়ায় বোরো আবাদ বাড়তে থাকে। এরপর পাউবো বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) কাছে সেচপাম্প কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আবেদন করে। তারা ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে ৩০ এইচপির (হর্স পাওয়ার) ২০টি পাম্প সরবরাহ করেছে। পাউবো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আরো চারটি পাম্প সংযুক্ত করে। আরো পাম্প কিনতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরপর বিল কেদারিয়ায় বোরো আবাদে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হুসাইনের নেতৃত্বে কৃষকরা সংগঠিত হন। প্রতি কৃষক দুই হাজার টাকা দিয়ে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে লখাইডাঙ্গা থেকে টেকারঘাট ব্রিজ পর্যন্ত পাউবোর বেড়িবাঁধ সংস্কার করেন। এতে টেকা নদী থেকে নোনা পানি আসা বন্ধ হয়। এরপর বিএডিসির সহায়তায় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প দিয়ে সেচ শুরু করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সুফল পেতে যাচ্ছেন তারা। বিল কেদারিয়ার পানি নিষ্কাশনে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য ইসহাক গাজী, নাজমুল হোসেন টিটোসহ অনেকেই জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসাইন তখনো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হননি। তার পরও তার নেতৃত্বে সেচ কার্যক্রমের দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ধানের আবাদ শুরু হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৮ হাজার ১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গত অর্থবছরে চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। ভবদহ প্রভাবিত উপজেলার ছয় ইউনিয়নের (কুলাটিয়া, মনোহরপুর, খানপুর, নেহালপুর, হরিদাসকাটি ও দুর্বাঙ্গা) বিল কপালিয়া, বিল রোকড়, বিল কেদারিয়া, ডুমুর বিল, বিল আড়পাতা, বিল শালিখা, বিল সম্বলডাঙ্গা, বিল হরিণাসহ ২৬টি বিলের মধ্যে বোরো মৌসুমে বিল কেদারিয়া ও বিল কপালিয়ার বেশির ভাগ জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। বিল কেদারিয়ার কুলটিয়া ও নেহালপুর অংশের ৫৮০ হেক্টর জমির ৪৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল মাত্র ২৪০ হেক্টর। বিল কপালিয়ার ৯৭৮ হেক্টর জমির মধ্যে এবার ৬০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে, যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে চাষ হয়েছিল ৪২১ হেক্টরে।
পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, তাদের সেচ কার্যক্রমের কারণেই এবার ভবদহ এলাকায় বোরো আবাদ বেড়েছে। চাষিরা সরকারি পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন। কিন্তু পাউবোর দাবি মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। তাদের কথা, নিজেদের শ্রম, উদ্যোগ আর ঐক্যের কারণেই ভবদহে সবুজ বিপ্লব হতে চলেছে।
এমন সম্ভাবনা বাস্তবে সর্বত্র রূপায়িত হোক- এটিই আমাদের কামনা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সরকারের। কারণ জনবান্ধব প্রশাসন ছাড়া এটি সম্ভব নয়। জনগণের স্বার্থই সর্বোচ্চ।