Naya Diganta

‘আমার বুকের মানিক কি বিনা চিকিৎসায় মরে যাবে?’

মা মাজেদা খাতুনের সাথে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত শিশু মেহেদী হাসান

‘মাথার যন্ত্রণা শুরু হলে ছেলেটা আমার পাগলের মতো হয়ে যায়। যাকে সামনে পায় তারই হাত-পা ধরে কেঁদে কেঁদে বলে আমাকে ডাক্তারের কাছে নেন, আমাকে বাঁচান। অস্থির হয়ে বমি করে। মা হয়ে এমন দৃশ্য কেমনে সহ্য করি?’

চোখের পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত শিশু মেহেদী হাসানের মা মাজেদা খাতুন।

মেহেদী বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের ফেরিওয়ালা নজরুল ইসলামের ছেলে।

জানা যায়, মানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত মেহেদী। বছর তিনেক আগে একদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সাথে বমি শুরু হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী বেসরকারি পপুলার হাসপাতালে ভারতের নয়াদিল্লি অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বলাই চন্দ্র সরকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে তিনি জানান, মেহেদী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। এ খবরে হতদরিদ্র পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মলিন মুখে বাড়িতেই বসে আছে মেহেদী। অর্থাভাবে সঠিক চিকিৎসা করাতে না পারায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে শিশুটি। ঠিকমত খেতে পারে না। এক সময় ষ্পষ্ট ও সুন্দরভাবে কথা বললেও ধীরে ধীরে তার কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মেহেদীর মা মাজেদা খাতুন জানান, তাদের কোনো জমি নাই। বড়াল নদীর তীরে খাসজমিতে বসবাস করতেন। নিজেদের সামান্য উপার্জন থেকে ছেলের চিকিৎসায় খরচ করতে গিয়ে ঘর সংস্কার করতে পারেননি। এতে ঘরবাড়ি বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই বর্তমানে একই গ্রামে ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকছেন তারা। তার স্বামী গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাঙারি জিনিসপত্র কেনাবেচা করে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ করেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা খাসজমিতে থাকি। যদি একটু ভিটাও থাকত, তাহলে তা বেচেই ব্যাটার চিকিৎসা করাতাম। কিন্তু আমি তো হতভাগী, বিনা চিকিৎসায় বুকের মানিক আমার ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। আপনারা দয়া করে একটু সাহায্য করলে আমার ছেলেটা প্রাণে বেঁচে উঠবে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা: মারিয়াম খাতুন বলেন, শিশুটির বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সহযোগিতা করব। এছাড়া সমাজের দানশীল মানুষেরা একটু সাহায্যের হাত বাড়ালে মেহেদী হাসান আবার সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশা আল্লাহ।

শিশুটির বাবা নজরুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে মেহেদীকে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সাইন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক সব কাগজপত্র দেখে তাকে ভারতে নেয়ার পরামর্শ দেন। এজন্য দরকার কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু এত টাকা যোগানোর সাধ্য নেই তার। তাই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কেঁদেই দিন কাটছে তার।

ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান মানুষদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা- জনতা ব্যাংক, বনপাড়া বাজার শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ০১০০২৩০৯১৮৩৬২ অথবা বিকাশ নম্বর ০১৮৫৯৯২৬৮৩২