বর্বরতার জঘন্য নজির
কাল পঁচিশের গণহত্যা- ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০৫
আজ শনিবার ২৫ মার্চ। ভয়াল এক কালরাতের দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত ও পৈশাচিক হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাঙালির স্বাধিকার চেতনা চিরতরে মুছে ফেলার ঘৃণ্য লক্ষ্য নিয়ে সেই রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা যেন উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল। লেলিয়ে দিয়েছিল সশস্ত্র সেনাবাহিনীকে নির্বিচার বাঙালি নিধনে। ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর যখন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল, সেই মুহূর্তে কোনো রকম পূর্বঘোষণা ছাড়া শাসকগোষ্ঠী রাতের আঁধারে মারণাস্ত্র নিয়ে বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদরত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয়। এ হিংস্র আক্রমণ ছিল বাঙালির রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি চরম প্রতারণার শামিল।
১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতি অনুযায়ী এই দল সরকার গঠন করবে এবং এর শীর্ষ নেতা বঙ্গবন্ধু হবেন সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এটাই ছিল স্বাভাবিক। আলোচনা সেভাবে এগুচ্ছিল বলে জাতি আশায় বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু এ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করে দেয় পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী। পরবর্তী আলোচনার কথা বলে ইয়াহিয়া-ভুট্টোসহ পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা রাতের অন্ধকারে ঢাকা ছাড়েন। আর সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হত্যা ও ত্রাসের মাধ্যমে বাঙালিকে দমন করার পথ বেছে নেন। এতে স্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন বাঙালিরা। সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্টি হয় গুরুতর রাজনৈতিক অচলাবস্থা। এর নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে ঢাকায় নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে হত্যা করা। তারা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে অসংখ্য ছাত্রসহ সাধারণ মানুষকে। নির্মম এ হত্যাযজ্ঞই কার্যত বাঙালিদের বাধ্য করেছিল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করতে। নির্মমতার সমুচিত জবাব দিয়ে আমরা ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম নতুন দেশ, বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ তথা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ কালো দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে অস্ত্র দিয়ে দমনের চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যা শুরু করার দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয়ে আসছে। একটি সশস্ত্র আক্রমণের জবাবে বীর বাঙালির লৌহকঠিন প্রতিরোধের অনন্য দৃষ্টান্ত ওই রাতের ঘটনাবলি। ২৫ মার্চের কালরাতের সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজো দেশবাসীকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কিন্তু সেটি প্রতিরোধের সাহস ও প্রেরণার উৎস হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে চিরজাগরূক।