Naya Diganta

আমার দেখা সাংবাদিক মিয়া ভাই

আব্দুল কাদের মিয়া

প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক ও অনুবাদক মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া ( ৮২) কুষ্টিয়া জেলার অধিবাসী। তিনি ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে টাইটেল ডিগ্রি অর্জন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় সিনিয়র সাব এডিটর হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৭১ সালে দৈনিক সংগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদপত্রসহ একটি এনজিওতে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরে দৈনিক সংগ্রাম পুনরায় প্রকাশিত হলে ১৯৮০ সালে তিনি নিউজ এডিটর হিসেবে সেখানে যোগদান করেন এবং সম্ভবত ২০২৩ সালে সাংবাদিকতার এই অবস্থান থেকে অবসরগ্রহণ করেন। অবসরগ্রহণের পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ক্রমে ক্রমে শারীরিকভাবে দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের অনুবাদসহ কয়েকটি মননশীল বইয়েরও লেখক। তিনি দুজন সিনিয়র চিকিৎসকসহ পাঁচজন উচ্চ শিক্ষিত সন্ততি ও একজন গুণী পেশাজীবী সন্তানের জনক।

সারাটি জীবন তিনি নিভৃতে অবস্থান করে নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী পেশজীবী হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহলে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। কায়ক্লেশে সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবন অতিবাহিত করেছেন কিন্তু আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য কোথাও ছুটেছুটি করেননি। একটানা প্রায় ৪৫ বছর একই সংবাদপত্রে একই পদে অবস্থান করে ত্যাগের এক উজ্জ্বল আদর্শ স্থাপন করেছেন। সম্মান ও সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তার ছিল। কিন্তু সেসবে তিনি ফিরে তাকাননি। এক মনে এক ধ্যানে কষ্টকর অধ্যাবসায়ের সাথে বিলীন হয়ে জনসেবার সমুজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ওই সময়ে, যখন নাগরিক সমাজ অর্থ-বিত্ত ও সম্মান-সমৃদ্ধির জন্য শুধু ছুটাছুটি করছে। তিনি শোকর ও সবর গুজার ছিলেন। অল্পেতুষ্ট ছিলেন। লোভ ও মোহ তাকে কখনো বিভ্রান্ত করতে পারেনি। সৎ ও সৌম্য জীবন ধারণের জন্য অনেকটা একাকী জীবন তিনি অতিবাহিত করেছেন।

তার অনেক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব ছিল না, তবে অল্প যে কয়েকজন ছিল, তাদের কাছে তিনি ছিলেন একজন মুহসিন বান্দার আলোকিত প্রতীক। সদাকর্মে অবগাহনরত স্বল্পভাষী এই মানুষটিকে সংশ্লিষ্টজনেরা কখনো ভুলতে পারবে না।

আমরা যেমন সাধারণত বলি, 'তিনি কারো সাথেও নেই, পাঁচেও নেই'- এটাও এ যুগে এক ধরনের সংযম। এই সংযমকে তিনি বাস্তব আদর্শ হিসেবে মূল্যায়ন করেছিলেন। দায়িত্ব ও পেশাকে তিনি সীমাহীন মূল্য দিয়েছেন। এর বাইরে চোখ মেলে তাকানোর কসরত তিনি করেননি। এ কারণে তাকে মূল্যায়ন করা বা তার সম্পর্কে কিছু বলা বেশ কঠিন কাজ। কারণ, তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। সাধারণভাবে খোলামেলা বা আড্ডাপ্রবণ ছিলেন না। ছিলেন গবেষক ও চিন্তাশীল মানুষদের মতো। মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে আলহামদুলিল্লাহ তিনি সফল ব্যক্তি ছিলেন। মহান মাবুদ তার এই নতুন সফরকে মহিমান্বিত করবেন, তাকে জান্নাত নসিব করবেন- এটাই এখন আমাদের প্রত্যাশা ও প্রার্থনা।

আমরা তার জীবনসঙ্গী, সন্তান-সন্ততি, জামাই, নাতি-নাতনিসহ সকল আত্মীয়, বান্ধব, সহযোগী, সহকর্মীজনকে আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের সবার জন্য পরম করুণাময় মহান আল্লাহতালার দরবারে দোয়া-খায়ের করছি। ফি আমানিল্লাহ।