Naya Diganta
স্বাগত মাহে রমজান

লক্ষ্য হোক আত্মশুদ্ধি

স্বাগত মাহে রমজান

প্রতি বছরের মতো আবারো আমাদের দোয়ারে এসে হাজির হয়েছে সংযম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাস পবিত্র মাহে রমজান। আজ পয়লা রমজান। দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট থাকায় এবারের রমজান মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে ধরা দিক গতানুগতিকতার বাইরে আল কুরআনের প্রকৃত শিক্ষায়। সাধ্যমতো অভাবীদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসবেন সম্পদশালীরা; যাতে দরিদ্রদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়।
সিয়াম অবশ্য পালনীয় একটি বিধান। সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আল্লাহতে বিশ্বাসীরা, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ আর কুরআন এ মাসে নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির হেদায়াতের একমাত্র অবলম্বন। যে কেউ সহজ সরল পথ পেতে চাইবে, তাকে নিবিড়ভাবে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। কেউ মানবতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে চাইলে কুরআনই একমাত্র অবলম্বন। লক্ষ্য হলো তাকওয়া অর্জন। রোজার মাধ্যমে বিশ্বাসীরা অর্জন করেন তাকওয়া বা খোদাভীতি।
সিয়াম সাধনার মূল প্রতিপাদ্য হলো সংযমের শিক্ষা। রোজা পালনের মাধ্যমে প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে মানুষের ফিতরাতে যে পাশবিক শক্তির উপস্থিতি আছে তা অবদমিত হয়। আধ্যাত্মিক বা রুহানি শক্তি বাড়ে। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসায় মানুষের জৈবিক চাহিদা খর্ব হয় এবং মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য অবলম্বন, সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্ভ্রমবোধ ও সৌজন্য প্রদর্শন, সর্বোপরি সব কাজে বুদ্ধি-বিবেচনাপ্রসূত মাত্রা ও মূল্যবোধের অনুসরণ ব্যক্তি তথা সমাজজীবনের অনিবার্য অবলম্বন হওয়া আবশ্যক। সিয়াম সাধনায় এ শিক্ষা মানুষ অর্জন করতে পারে।


বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও বাস্তবতা ভিন্ন। এ দেশে রোজার মাস হওয়ার কথা শান্তিময়। কিন্তু রমজানে যেন সংযমের পরিবর্তে ভোগের বাধভাঙা জোয়ারে ভাসে জনজীবন। সংযম ও ত্যাগের মানসিকতার পরিবর্তে দেখা যায় বল্গাহীন ভোগের উদগ্র বাসনা। সবাই খাদ্য উৎসবে মেতে ওঠে। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। রোজাকে আমরা আত্মিক উন্নতির বাহন হিসেবে না নিয়ে ভোগের উৎসবে পরিণত করি। আত্মসংযমের মাসকে যে যার মতো স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানিয়ে নিই। তবে মুনাফাখোরদের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিলে দায় মেটে না। প্রকৃত রোজাদার হওয়ার সাধনায় নিমগ্ন থেকে নৈতিক এ অবক্ষয় মোকাবেলা করতে হবে।
পবিত্র এ মাসে আল্লাহর সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতে ধন্য হয়। পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা বিশ্বাসীর জন্য খুলে যায়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃত সব কিছু থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও কল্যাণে পরিপূর্ণ। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা পালন করেন, তারাই দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়ার আশা করতে পারেন। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করবেন অসীম রহমত। যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিনরা আত্মিকভাবে নিজেদের আত্মোন্নয়নের চেষ্টা করেন।
রমজান মাসে মুসলিমদের অঙ্গীকার করা উচিত, আমরা সত্যিকার উপলব্ধির সাথে রোজা পালন করব। এর শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত ঘটাব। মানুষে মানুষে বৈষম্য, শোষণ ও অন্যায়ের অবসান ঘটাতে যথাসাধ্য কার্যকর ভূমিকা রাখব। সর্বদা সবার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করব।
সব অসঙ্গতি দূর করে রোজা সবার জীবনে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ফল্গুধারা বয়ে আনুক; পবিত্র রমজানের শুরুতে এটা হোক সবার কামনা। সাথে সাথে রোজার সামগ্রিক পরিবেশ কাক্সিক্ষত মানে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো সবার দায়িত্ব হওয়া উচিত।