Naya Diganta

নির্বাচন নিয়ে কাদের ও হাসের আলোচনা

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় আওয়ামী লীগের নেতারা : সংগৃহীত


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
গতকাল বুধবার ফেসবুকে নিজেদের অফিসিয়াল পেজ থেকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এ খবর নিশ্চিত করে লিখেছে, রাষ্ট্রদূত হাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং বাণিজ্য থেকে শুরু করে জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিধি নিয়ে আলোচনা করেন।
মার্কিন দূতাবাসের পোস্ট করা ছবি থেকে দেখা যায়, ওই প্রতিনিধিদলে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক খান এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন।


গতকাল দুপুরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানকার আলোচনা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এ দিকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় দুই পক্ষের আলোচনা এসেছে। বিএনপির নেতাদের সাথে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন যে বিরোধী দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী, সেটা জানতে চান পিটার হাস।


জবাবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাটি আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। কিন্তু বিএনপি ২০০১ ও ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে। এর ফলেই এক-এগারোর মতো অনির্বাচিত সরকার এসেছে। এখন পাকিস্তান ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বে এ ধরনের সরকারের অস্তিত্ব নেই। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না- এটা পরিষ্কার। তবে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।


বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সূত্র আরো জানায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, আইনি ও আর্থিকভাবে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। কমিশনকে বর্তমান সরকার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। এ ছাড়া অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো যে সুষ্ঠু হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়। সূত্র আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই বেশি শুনতে চেয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তারা প্রত্যাশা করে। এর আগে গত ১৬ ফেব্র“য়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেন। ওই দিন ওবায়দুল কাদের বৈঠক শেষে বেরিয়ে বলেছিলেন, তারা চায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে ব্যক্তিগতভাবেও অনেক কূটনীতিক সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদল নিয়েও বৈঠক করছেন। বিএনপিও সম্প্রতি একাধিকবার মার্কিন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছে।


এ দিকে গতকাল ঢাবির অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, বিএনপির মতো সাড়াশব্দ দিয়ে নয়, নীরবে মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আবার বিএনপির মতো মিডিয়া-টিডিয়া নিয়ে যাই না। তারা ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে গিয়েছিল, সেখানে বোধ হয় মিডিয়ার বুম ছিল না। পরে তারা সবাইকে ডেকে নিয়ে যা কথা হয়েছে, সেটাও বলেছে; যে কথা হয়নি, সেটাও বলেছে। অবস্থাটা এমন দেখলাম যে মনে হয় যেন ভারত জয় করে এসেছে। আমরা সেটা না। আমরা নীরবে গিয়ে নিঃশব্দে চলে এসেছি।


বিএনপির আন্দোলন চোরাবালিতে আটকে গেছে
ঢাবি প্রতিবেদক জানান, আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন এখন চোরাবালিতে আটকে গেছে। সামনেও যায় না, পেছনেও যায় না; ডানেও যায় না, বামেও যায় না। তাদের আন্দোলন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা চিত্রকর্ম কাদায় পড়া গরুর গাড়ির মতো। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা মেরামত করেছেন। তাদের হাতে আর দেশ যাবে না। তাদের আন্দোলন, পদযাত্রা, মিছিল, নেতা, ১০ দফা সব ভুয়া। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।


ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপকর্মের সাথে জড়িত কাউকে নেতা বানানো যাবে না। যারা ছিনতাই করে, চাঁদাবাজি করে, সিট বাণিজ্য করে, সন্ত্রাসী কাজকর্ম করে তাদেরকে আমাদের দরকার নাই। তাদের বের করে দাও। ছাত্রলীগের নামে যারা এসব করে তাদের স্থায়ী শাস্তি দিতে হবে। সেই সাথে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হবে। শেখ হাসিনার ভালো কাজগুলো যাতে আপনাদের একটা খারাপ কাজের কারণে ঢেকে না যায় এ জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাই। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
আলোচনা সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সদস্য তারানা হালিম।