Naya Diganta

হজ প্যাকেজের দাম কমায় হাজীদের কতটা লাভ হবে?

হজে যেতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে হাজীরা

চলতি বছর বাংলাদেশী হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে হজের প্যাকেজের দাম ১১ হাজার ৭২৫ টাকা করে কমানো হয়েছে। একইসাথে হজের জন্য নিবন্ধনের সময় আগামী ২৭শে মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ যাত্রীদের প্যাকেজ দাম এখন ছয় লাখ ৭১ হাজার টাকার কিছু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এই প্যাকেজের দাম ছিল ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার কিছু বেশি।

অন্যদিকে যারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন তাদের প্যাকেজেও একই পরিমাণ দাম কমেছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের দাম ছয় লাখ ৭২ হাজার থেকে কমিয়ে ছয় লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা করা হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বলেন, সৌদি সরকার মিনার ক্যাটাগরি ফি বা তাঁবুর ক্যাটাগরি ফি ৪১৩ রিয়ালের মতো কমানোর কারণে হজ প্যাকেজের দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এটা শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্বের সব দেশের জন্যই কমানো হয়েছে।

“এখন ৪১৩ রিয়ালে আমাদের বাংলাদেশি টাকায় আসে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা। তো আমরা তো এখন ওই টাকাটা কমাতে বাধ্য। এজন্য আমরা কমিয়ে দিয়েছি,” বলেন তিনি।

চলতি বছর আগের বছরের তুলনায় হজ প্যাকেজের দাম দেড় থেকে দুই লাখ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে হজে যেতে ইচ্ছুক এমন অনেকেই এই খরচ কমানোর দাবি তুলেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি।

শাহীন বলেন, “সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে ভেবে-চিন্তে সরকার যেখানে যেখানে নক করা প্রয়োজন সেখানে নক করে চূড়ান্ত পর্যায়ে সিদ্ধান্তে এসে এই দাম কমালো।”

তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে বিমান ভাড়া ছাড়া আর কিছুই বাড়েনি। আর সৌদি আরবের দক্ষিণ এশিয়া হাজী সেবা সংস্থা যেটি মোয়াচ্ছাছা নামে পরিচিত সেটির খরচ এবং ঘরভাড়া বেড়েছিল। সেখান থেকে মোয়াচ্ছাছার খরচ ৪১৩ রিয়াল কমানো হয়েছে।

বাংলাদেশের অংশ থেকে কমানোর কিছু নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমান ভাড়াটা একটু কমানোর সুযোগ ছিল, কিন্তু বিমান সেটা কমাতে পারেনি।

“এখন যে প্যাকেজ পেলেন সেটাই চূড়ান্ত। বিমান ভাড়া যদি না কমে তাহলে আর এক টাকাও কমার সম্ভাবনা নেই,” বলেন তিনি।

বেসরকারি পর্যায়েও হজ প্যাকেজের মূল্য কমানোর জন্য এরইমধ্যে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (হাব) নেতাদের অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

‘তামাশা মনে করি’
হজ প্যাকেজের দাম বাড়ার কারণে বাধ্য হয়ে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবছর হজের যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাদ করেছেন।

এমন একজন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা আতাউর রহমান। বেসরকারি একটি কলেজে শিক্ষকতা করার পর অবসরে রয়েছেন তিনি। তার স্ত্রীসহ এবার হজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রহমান।

তিনি জানান, হজ প্যাকেজের দাম বাড়ার কারণে এ বছর হজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, শুধু তিনি একাই নন, বরং তার এলাকায় হাইস্কুল ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও তাদের সহধর্মীনীসহ প্রায় ১৬-১৭ জনের একই অবস্থা। তারা সবাই হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রতি হজ প্যাকেজে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা করে কমেছে জানতে পেরে আতাউর রহমান আক্ষেপের সুরে বলেন, “এটা কোনোই লাভ হবে না, একটা কথা হইলো নাকি একটা?”

“আমরা পরিবার নিয়ে একটা আশা করেছিলাম, এবার তো আর হলো না, শেষ করে দিলো আরকি। এটা ১২ হাজার টাকা, এটা একটা তামাশা ছাড়া কিছু মনে করছি না আমি।”

চারঘাট উপজেলার এই শিক্ষকরা বলছেন, আগামী বছর বাড়তি খরচ জোগাড় করে আবারো হজের প্রস্তুতি নেবেন তারা।

তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে যে, ১২ হাজার টাকা কমানোর কারণে বেশ লাভবান হবে হজে যেতে ইচ্ছুক হাজীদের।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীন বলেন, হাজীদের জন্য এক টাকা কমলেও লাভ হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের হাজীদের জন্য এটা বেশি লাভজনক বলে মনে করেন তিনি।

“অবশ্যই ১২ হাজার টাকার একটা ইফেক্ট পড়বে।”

যেসব হজ যাত্রীরা এরইমধ্যে বেশি টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন তাদেরকে হজে যাওয়ার সময় খাওয়ার টাকার সাথে এই ১২ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

“হজযাত্রীরা যারা অলরেডি নিবন্ধন করেছে তারা হজে যাওয়ার সময় এই ১২ হাজার টাকা হাতে পেয়ে গেলো, তাদের মধ্যে ঈদের আনন্দ হবে।”

নিবন্ধনের সময় আরো বাড়বে?
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে চলতি মৌসুমের হজ যাত্রীদের নিবন্ধনের টাকা জমা নেয়া শুরু হয়। তবে খরচ বাড়ার কারণে এ বছর নিবন্ধনের কোটা পূরণ না হওয়ার কারণে বেশ কয়েক দফা নিবন্ধনের সময় সীমা বাড়ানো হয়।

সবশেষ বুধবার নিবন্ধনের সময় সীমা বাড়িয়ে ২৭ মার্চ করা হলো। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্যাকেজের মূল্য কমায় এবং হজ যাত্রীদের বয়স সীমা না থাকার কারণে অনেক হজযাত্রী নতুন করে হজে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করার কারণে এই সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে এই বছর হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এদের মধ্যে সরকারিভাবে ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন ১৫ হাজার ব্যক্তি, বাকিদের যেতে হবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বলেন, মোট কোটার মধ্যে মাত্র ১০-১২ হাজার অনিবন্ধিত রয়েছে। ২৭ তারিখ পর্যন্ত যে নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে পুরো কোটা পূরণ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়া যেসব ব্যক্তি হজের গাইড বা মোনাজ্জেম হিসেবে যান তাদেরকেও এই কোটার আওতায় গণনা করা হবে। সব মিলিয়ে উল্টো কোটার বেশি নিবন্ধন হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তবে যদি কোটা পূর্ণ না হয় তাহলে এই মেয়াদ আরো বাড়তে পারে। আগামী ৫ই মে পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলেও জানানো হয়।

তার মতে, চলতি বছর বেশ আগে নিবন্ধন শুরু হওয়ার কারণে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। এর আগের বছরগুলো মার্চ মাসে শুরু হলেও এবার ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে।

কোটা পূরণ নিয়ে সরকার চিন্তিত নয় উল্লেখ করে মি. শাহীন বলেন, “অনেকে হাজী পকেটে নিয়ে বসে আছে যে আরেকটু দাম কমে কিনা, মক্কায় বাড়ি ভাড়ার দাম কমে কিনা, আরেকটু প্রফিট করা যায় কিনা, বিমান ভাড়া কমে কিনা ইত্যাদি।”

তিনি বলেন, আজ যেহেতু তারা একটি পরিষ্কার বার্তা পেয়ে গেছে যে এর চেয়ে হজ প্যাকেজের দাম কমার আর কোনো সুযোগ নেই, তাই এখন নিবন্ধন বাড়বে।

সূত্র : বিবিসি