Naya Diganta

বাংলাদেশ সবার কাছাকাছি কারো ওপর নির্ভরশীল নয়

সিএনএন-এর সাথে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু একটি দেশের নয়, সবার কাছাকাছি।
ইউএস-ভিত্তিক ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক (সিএনএন)-কে গতকাল মঙ্গলবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার কাছাকাছি- চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত। যারা আমাদের উন্নয়নকে সমর্থন করে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’ সিএনএন সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্ট যখন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে এবং উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ চীনের খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছে তখন প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। ইউএনবি/ বাসস।

শেখ হাসিনা বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। চীন দেশে বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণ করছে। ‘এটাই সব। আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল নই,’ তিনি বলেন। চীনের ঋণের ফাঁদ এড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য ঋণ নেয়ার ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক আছি’। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয় বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। ‘সুতরাং, আমাদের চীনা ঋণ খুবই কম। এটা শ্রীলঙ্কা বা অন্য কারো মতো নয়,’ তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সবসময় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার আগে প্রকল্প থেকে আয় এবং জনগণের সুবিধা বিবেচনা করে। তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো, আমরা সবসময় আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আমরা কোনো অপ্রয়োজনীয় ঋণ বা বড় প্রকল্প গ্রহণ করি না। আমরা সবসময় বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমাদের জনগণ উপকৃত হবে।’ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বটি গতকাল ভোররাতে সম্প্রচারিত হয়েছে যার চূড়ান্ত পর্বটি শিগগিরই সম্প্রচার করা হবে।
কোনো আক্রমণকে সমর্থন করে না : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনোই কোনো ধরনের আগ্রাসনকে সমর্থন করে না এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি, কোনো সঙ্ঘাত থাকলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা কখনোই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা সঙ্ঘাতকে সমর্থন করি না।’


শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি খুবই স্পষ্ট, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়’। ‘সুতরাং, যখন আমরা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি, আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি,’ তিনি বলেন। তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে বলেছেন। শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমি মনে করি যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ, সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে’।
‘আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখণ্ডে (স্বাধীনতার সাথে) বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষা করার অধিকার রয়েছে,’ তিনি যোগ করেন।
রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশও মিয়ানমারের সাথে সংলাপ শুরু করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে চীন, আসিয়ান দেশ, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সাথে কথা বলেছে এবং তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে অনুরোধ করেছে। ‘দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমার সরকার কারো কথা শুনছে না। এটাই সমস্যা’, তিনি বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে। কারণ দেশটি অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের খাওয়াতে হবে। ‘আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে,’ তিনি বলেন।