Naya Diganta
প্রথমবারের মতো গণশুনানি

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধান ভুক্তভোগী বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো গণশুনানি
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধান ভুক্তভোগী বাংলাদেশ


দেশে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরগ্রাম কুন্দেরপাড়ায় এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিচারক প্যানেলের প্রধান ছিলেন পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।

শুনানি শেষে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। বাংলাদেশের কোনো দায় নেই। বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রধানত ভোক্তভোগী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা ধরনের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। যেসব উন্নত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী সেসব দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্র ও সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জর্নালিস্ট ফোরাম এই গণশুনানীর আয়োজন করে। এতে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার নদী ভাঙ্গনসহ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতির শিকার ১২ নারী ও পুরুষ শুনানিতে অংশ নেন। তাদের কেউ নদী ভাঙ্গন, বন্যা, আগাম বন্যা, খড়া, শীতসহ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতির শিকার হোন।‌ তারা বিচারক মন্ডলীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করেন। গণশুনানিতে পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ছাড়াও সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জর্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট আশীষ গুপ্ত, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান, পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন।

সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জর্নালিস্ট ফোরামের নির্বাহী সভাপতি কেরামত উল্লাহ বিপ্লবের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন গণউন্নয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্ সালাম।

শুনানিতে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলোসহ নদ-নদী অববাহিকায় চর-দ্বীপচরের মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত এসব জনপদের মানুষ।

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে একদিকে যেমন সমুদ্র পৃষ্টের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। বছর বছর বন্যা, নদী ভাঙ্গনসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাখ লাখ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ আদায়ে উন্নত বিশ্বকে সরকারের চাপ আরো বাড়ানোর পরামর্শ দেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ নারী-পুরুষকে  ‘জলবায়ু যোদ্ধা’ পদক প্রদান করা হয়। তাদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান অতিথি।