Naya Diganta

মার্কিন আগ্রাসনের ফল ২০ বছর পরেও ভুগছে ইরাক

২০০৩ সালে ৯ এপ্রিল বাগদাদে স্থাপিত ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের একটি ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দখলদার মার্কিন মেরিন সেনারা : ইন্টারনেট

ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ২০ বছর হয়ে গেল। যে কারণ দেখিয়ে এই আগ্রাসন হয়েছিল, তা ছিল মিথ্যা। তার ফল এখনো ভোগ করতে হচ্ছে। দুই দশক পরেও ইরাকে সহিংসতা-হত্যা থামেনি। গত ফেব্রুয়ারিতেও বোমা, গুলি ও অন্য সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৫২ জন। ২০০৩ সালের ১৮ থেকে ১৯ মার্চে যে আগ্রাসন শুরু হয়েছিল এ হলো তারই প্রভাব।
মার্কিন জোটের আগ্রাসন ও প্রচারের সামনে ইরাক কিছুই করতে পারেনি। ওই জোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ছিল অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ড। তিন সপ্তাহের মধ্যে সাদ্দামের শাসনের পতন ঘটে। এয়ারক্রাফট কেরিয়্যার ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনের ডেকে দাঁড়িয়ে ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘোষণা করেন, মিশন সফল।
ওই সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট সঙ্গীরা ২৯ হাজার ১৬৬টি বোমা ও রকেট ইরাকে ফেলেছিল। ইরাকি পরিকাঠামোর বড় অংশ মাটিতে মিশে যায়। ব্রিটিশ এনজিও বেবিকাউন্টের হিসাবে সাত হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ মারা যায়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ থেকে ১০ লাখের মধ্যে। ২০১১ সালে মার্কিন সেনা ইরাক ছাড়ে। পরে তারা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আবার ফিরে আসে।
যুদ্ধ জয়ের পরেও শান্তি ফিরল না
ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধাঁচে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইরাকের পরিস্থিতি ও সামাজিক অবস্থান ছিল আলাদা। সেখানে ধর্মীয় ও জাতিগত জটিলতা ছিল প্রবল। মার্কিন অধিকারে থাকা প্রশাসনের সেই প্রস্তুতিও ছিল না। ২০০৩ সালের ১৯ আগস্ট বাগদাদে জাতিসঙ্ঘের অফিস চত্বরে বিস্ফোরণে ২২ জনের মৃত্যু হয়। সাবেক ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জাভিয়ার সোলানা বলেছিলেন, যদি এই অভিযানের লক্ষ্য থাকে ইরাককে সন্ত্রাসমুক্ত করা, তার পুনর্গঠন ও সর্বস্তরে সুরক্ষা বাড়ানো, তাহলে এই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ
আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাই অ্যামবোস জানিয়েছেন, ‘যেভাবে ইরাক আক্রমণ করা হয়েছে, তা জাতিসঙ্ঘের চার্টার ও আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব মেনে এই আগ্রাসন হয়নি। তাহলে একমাত্র আত্মরক্ষার জন্যই এই ধরনের আগ্রাসন করা যেতে পারে । ‘অ্যামবোস জানিয়েছেন, ‘এখানে আত্মরক্ষার কোনো বিষয় ছিল না।’ তা ছাড়া ওই সময়ে জাতিসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনান বলেছিলেন, ওই আগ্রাসন ‘বেআইনি’। জার্মানি এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি। তবে জার্মানি এই আগ্রাসন সমর্থন করেছিল এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিল এবং অর্থও দিয়েছিল। এভাবে তারা বেআইনি আগ্রাসনকে সমর্থন করেছিল বলে অ্যামবোস জানিয়েছেন।