Naya Diganta

মিথ্যা প্রচারণায় আইসিটি আইনে মামলা এবং মোবাইল কোর্টে প্রতিনিধি রাখার দাবি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা।

সাম্প্রতিক সময়ে রেস্তোরাঁ খাতে কিছু নেতিবাচক প্রচারণায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেই সংকট থেকে উত্তরণে মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে রেস্তোরাঁ মালিকরা মনে করেন। তারা বলেন, রেস্তোরাঁ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা, মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।

এছাড়া মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি ওসমান গনি, যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ আলম, সমিতির ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান চৌধুরী (বিপু) প্রমুখ।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলেছে, নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন অধিদফতরের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতা। প্রধানমন্ত্রী, ১২টি অধিদফতর আমাদেরকে মনিটরিং করে যাচ্ছে, বছরের পর বছর। আমরা বলে আসছি, আমরা একটি অধিদফতরের অধীনে কাজ করতে চাই। কিন্তু এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বরং উল্টো দিন যত যাচ্ছে প্রত্যেকটা অধিদফতর বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও ক্ষোভ ঝাড়ছে রেস্তোরাঁ মালিকদের উপর। পান থেকে চুন খসলেই বিশাল শাস্তি। কোনো বিশেষজ্ঞ ছাড়াই, কোনো অভিজ্ঞ লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতিসাধন করছে। এভাবে নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

তারা বলেন, ‘আমাদের সেবার ৯৫% কর্মী অদক্ষ ও স্বল্প শিক্ষিত। তাদেরকে আগে ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসেন।

‘আজ পর্যন্ত কোনো সংস্থাই আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট কোনো এসওপি দেয়নি। উপন্তু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র তাদের টিম দিয়ে আমাদেরকে পরিচালনার/মনিটরিং করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যেখানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইসিডিডিআর,বিকে যুক্ত করেছেন। কিন্তু প্রধান স্টেক হোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে যুক্ত করা হয়নি। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনোদিনই সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না,’ বলেন তারা।

নেতারা বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি, প্রতিবারের মতো এবারো রমজানে আমাদের উপর বিশাল খড়গ নেমে আসবে। তাই আমাদের দাবি- সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। হাইকোর্টের অনেক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে মোবাইল কোর্ট চলছে। আমরা মোবাইল কোর্টের বিরুদ্ধে না, মোবাইল কোর্ট চলুক যৌক্তিকভাবে। জামিন অযোগ্য- কালাকানুন ধারা ও বিধি বাতিল করতে হবে।’

‘এছাড়া, করোনা মহামারীতে প্রায় ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। যারা টিকে আছে তারাও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা জরুরি।’

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলেছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে চড়া মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ক্ষমতা কমেছে। এর মধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের নাম দফায় দফায় বাড়ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রেস্তোরাঁ খাতে। ব্যবসায় টিকে থাকতে খাবারের দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অন্যদিকে খাবারের দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারাও রেস্তোরাঁয় খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে রেস্তোরাঁগুলো বড় সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

তারা বলেন, ‘প্রতি মাসে ভ্যাটের সাথে ০.৫% হিসেবে ট্যাক্স প্রদান করতে চাই। এতে বছর শেষে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সময়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।’

তাদের দাবি, ‘রেস্তোরাঁ সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া রেস্তোরাঁয় গ্যাস লাইন ট্রান্সফার কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে লাইন ট্রান্সফার এবং নাম পরিবর্তনের সকল প্রতিবন্ধকতা তুলে নিতে হবে।’

তারা বলেন, ‘মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে প্রতিবছরই মাহে রমজানে রেস্তোরাঁগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমরা আশা করছি, সেক্টর এখন থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ শিল্পের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে।’

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের প্রতি সমিতির আহ্বান- ‘পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে হবে। মাহে রমজানের ইফতারি, সাহরিসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য যেন নিরাপদ হয় সে বিষয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। অধিক মুনাফা লাভের জন্য কোনোক্রমেই ব্যবসার নৈতিকতা হারানো যাবে না। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাইজেনিক উপায়ে ইফতারসহ অন্যান্য সকল খাবার পরিবেশন করতে হবে।’