Naya Diganta

জীবনের গল্প

জীবনের গল্প

এক জোড়া রক্তচক্ষু ক্ষুধার্তের মত তেড়ে আসছে কাছে। এতটুকু কেবল মনে করতে পারছে রিপা। আর কিছু মনে করতে পারছে না কিছুতেই। তারপর কী হলো! কিভাবে কী ঘটে গেলো বুঝতে পারছেনা। চোখ খুলে রিপা আবিষ্কার করলো নিজেকে হাসপাতালের একটি বেডে। শুয়ে আছে চিৎ হয়ে। ব্যান্ডেজ করা শরীরের বেশ ক’টা জায়গায়। এক হাতে স্যালাইন চলছে।
চোখ এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখতে চাইলো রুমে কে কে আছে। দেখতে পেলো একজন নার্স এবং স্বাভাবিক পোশাক পরিহিত একজন সাধারণ লোক। লোকটাকে চিনেনা রিপা। চেনার চেষ্টা করছে,পারছেনা। তবে কি স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে! রিপা ভাবছে।...
নার্স লোকটাকে ডেকে বললো, আপনার রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। রিপা চিন্তায় পড়ে গেলো নার্সের সম্বোধন শুনে। কে তিনি! তার রোগী আমি। এর আগে তো কখনই দেখিনি তাকে। ওদিকে নার্সের সাথে লোকটা কথা বলছে।...
ডান দিকে মাথাটা ঝুঁকিয়ে রিপা পলকহীন অন্যমনস্ক হয়ে সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে কিভাবে কী ঘটলো। শুরু থেকে ভাবতে শুরু করলো সে সেজেগুজে বাসা থেকে বের হয়েছে। বাসার গেট পার হয়ে রিকশায় উঠে রিকশাওয়ালারে মামা সম্বোধনে ডাক দিয়ে জায়গার নাম উল্লেখ করে বললো, চলেন। চলছে রিকশা। যাচ্ছে প্রিয় মানুষের কাছে। আজকে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। ইচ্ছে ছিল না রিপার এই দিনে বাসা থেকে বের হয়ে প্রেমিক জুয়েলের সাথে দেখা করবে। কিন্তু জুয়েলের পীড়াপীড়িতে, সম্পর্ক টিকে রাখতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিকেলে বের হয়েছিল রিপা।


চতুর্দিকে সন্ধ্যা নামা শুরু করেছে। রিকশাওয়ালারে রিপা বলছে, মামা আরেকটু চালু করে যান। রিকশার গতি মনে হচ্ছে একটু বাড়ছে। ভালোবাসা দিবসের সন্ধ্যাটা কিভাবে কাটাবে জুয়েলের সাথে ভাবছে। সেই সাথে জুয়েলের কয়েকটা প্রশ্নের জবাবে উত্তর কি দেবে সেটাও চিন্তা করছে। কারণ, আসতে না চাওয়ায় পরবর্তীতে জোরাজোরিতে আসা হচ্ছে। উত্তর ভেবে পাচ্ছে না রিপা। যা হবার হবে। রিলেশন ভাঙলে ভাঙবে এই বলে এসব চিন্তা দূরে রাখতে চাইলো। উঁহু, এই চিন্তাগুলো ছেঁচড়ামি করে মাথায় থেকেই যাচ্ছে।
রাস্তাটা বেশ ফাঁকা দেখাচ্ছে। বলার আগেই রিকশাওয়ালা তাই হয়ত চলার গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য রিকশা মামাকে বকশিশ দিতে হবে। হঠাৎ সামনে রিপা তাকিয়ে দেখে একটি ট্রাক আসছে অনেক গতিতে। ট্রাকের হেড লাইট দুটো জ্বালানো। লাইটের আলো লাল। দেখে মনে হচ্ছে একজোড়া রক্তচক্ষু রক্তের পিপাসায় খুবই পিপাসিত হয়ে রিপার দিকে তেড়ে আসছে। রিকশাওয়ালারে রিপা ‘এ, এ এই মামা গাড়ি চা....’ বাক্য শেষ করার আগেই কী যে হলো রিপা আর মনে করতে পারছেনা। পরে নিজেকে আবিষ্কার করলো হাসপাতালের বেডে।
অচেনা লোকটি কাছে আসলো। তাকালো রিপা তার দিকে। লোকটা বলা শুরু করলো এক্সিডেন্ট হয়ে রাস্তায় পইড়া ছিলেন। সবাই দেখছিল আর অতিক্রম করছিল। ঢাকায় কেউ কারো বিপদে সেভাবে আগায়া আসেনা জানেন তো আপনি। যারা আসে তারা অনেক ঝামেলা ফেস করতে হয়। ঝামেলার ভয়ে চাইলেও বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারেনা। এড়িয়ে চলতে হয়। কিন্তু আমি পারিনি এড়িয়ে যাইতে। আপনার পরিবারের কাছে ফোন করা হয়েছে। কিছুক্ষণের ভেতর হয়ত বা চলে আসবে। কেউ ফোন করেনি? রিপার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু করেনাই। ফোন করলে তো লোকটি বলতো জুয়েল নামক কেউ ফোন করছিল। কিংবা এখানে লোকটার পাশে জুয়েলকেও দেখা যেতো।
রিপার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে নালার মত ফোমের বালিশে গিয়ে নামছে। যতবার রিপা চোখের পাতা বন্ধ করে খুলছে ততবারই অশ্রু বের হচ্ছে। এ অশ্রু থামবে কি কখনো?