Naya Diganta

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা দিবস আসতে চলেছে। ক্লাসে স্যার ছাত্রদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে পড়াচ্ছেন। স্যার বলেন, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে বাংলাদেশকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক অত্যাচার ও যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়েছে। স্যার ছাত্রদের বোঝালেন স্বাধীনতার চেয়ে বড় সুখ নেই, সোনার খাঁচাও আমাদের সুখ দিতে পারে না। মানুষের পাশাপাশি সব পশু-পাখি তাদের স্বাধীনতা ভালোবাসে। তারাও বন্দী থাকতে পছন্দ করে না।
এসব শুনতে শুনতে রাইয়ান ভাবল, ওই মানুষগুলোও তোতা পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখে। তোতা পাখিও কি আমাদের বাড়ি পছন্দ করবে না? সেও কি উড়তে চাইবে? রাইয়ানের মনে নানা প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে।
বাড়িতে পৌঁছে সে প্রথম যে জিনিসটি দেখল তা হলো তার তোতা পাখি। খাঁচায় এদিক-ওদিক চলাফেরা করতে করতে তোতা পাখি বের হওয়ার চেষ্টা করছে। রাইয়ানকে দেখে তোতা কথা বলতে শুরু করে। রাইয়ান তাকে সবুজ মরিচ খাওয়াল।
রাতে মসুর ডাল-ভাত খাওয়ানোর পর সে তোতা পাখিকে দেখতে থাকে। রাইয়ানের মা বললেন, কী হয়েছে ছেলে, আজ এত চুপ কেন? তোতাকে ঘুমাতে দাও, চলো তুমিও খাবার খাবে।
সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলেও রাইয়ান ঘুমাতে পারলো না। স্যারের কথা বারবার মনে পড়ছে। সে আকাশে উড়ে যাওয়া পাখি আর খাঁচায় বন্দী তার তোতা পাখির কথা ভাবতে লাগল। গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে ফল ও ফুল খেয়ে পাখিরা খুব খুশি হয়। একসাথে কিচিরমিচির পাখি দেখতে খুব সুন্দর। তার তোতা পাখি খাঁচায় একা থাকে, কোনো সঙ্গী নেই। সে উড়তেও পারে না, বাবা তার ডানাও কাটে। আমি যদি আমার বন্ধুদের থেকে দূরে একটি ঘরে একা বন্দী থাকি তবে আমার কী হবে?
এসব ভাবতেই রাইয়ানের চোখ জ্বলে উঠল। সকালে উঠে প্রথমে বন্ধু তোতার কাছে গিয়ে খাঁচার দরজা খুলে তোতা পাখিটিকে মুক্ত করে। তোতাকে খুব খুশি দেখাচ্ছে, উড়তে উড়তে অনেক দূরে চলে গেল।
বাড়ির বাকিরা উঠলে খাঁচা খালি দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। সবাই তোতাকে খুঁজতে থাকে এদিক ওদিক। রাইয়ানের মা তিতু তিতু ডাকলেন। তিতু নিশ্চয়ই কোথাও গেছে। খাঁচার দরজা কে খুলেছে। রাতে দরজা বন্ধ ছিল না?
মনে মনে বিড়বিড় করলেন রাইয়ানের মা।
সবাইকে মন খারাপ দেখে রাইয়ান ভয়ে সব খুলে বলল।
মা, স্বাধীনতাকে সবাই ভালোবাসে, তাই না? মিঠুরও নিশ্চয়ই মনে হয়েছে খোলা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। আমরা স্বাধীন, সে জন্যই আমরা আনন্দে স্বাধীনতা দিবস পালন করি, তাই তিতুকেও মুক্ত করেছি।
পরিবারের সবাই রাইয়ানের কথা শুনে তার প্রশংসা করল। বাবা তার পিঠে হাত রেখে বাহবা দিলেন।