Naya Diganta

ইন্দোনেশিয়ায় জমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কুফল

ইন্দোনেশিয়ায় জমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কুফল।

প্রকৃতির উপর জোর খাটিয়ে সমুদ্র থেকে জমি পুনরুদ্ধারের কুফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, ইন্দোনেশিয়ার রিক্লেমেশন প্রকল্পে তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের উপার্জন কমছে, তারা আশঙ্কা করছেন উচ্ছেদের।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার উত্তরে কাম্পুং কেরাং গিজাউ এলাকার বাসিন্দারা সবুজ ঝিনুক কুড়িয়ে অর্থ উপার্জন করত। কিন্তু ২০১৪ সালে জাকার্তার উত্তর উপকূলে জমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কারণে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, তখন থেকেই সবুজ ঝিনুকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

কয়েক দশক ধরে সবুজ ঝিনুক সংগ্রহ করা সুরইয়াদি বলেন, ‘জেলেদের এখন কঠিন সময় চলছে। আগে কত ঝিনুক, কাঁকড়া আর মাছ পাওয়া যেত। এখন আর কিছুই নেই।’

প্রতিদিন ভোরে সুরইয়াদি ও তার ছেলে সবুজ ঝিনুকের সন্ধানে বের হন। অতি সাধারণ ডুবুরির সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা পানির নিচ থেকে সবুজ ঝিনুক সংগ্রহ করেন।

রিক্লেমেশন প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে সুরইয়াদি দিনে ২০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত সবুজ ঝিনুক ঘরে আনতেন। কিন্তু প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে ঝিনুকের পরিমাণ কমেই চলেছে। এখন দিনে বেশি হলে ৮০ কিলো তোলা সম্ভব হয়।

আগে সুরইয়াদি ও অন্য জেলেদের সবুজ ঝিনুকের খোঁজে বেশি দূর যেতে হতো না। মাত্র আধ ঘণ্টায় তারা ঝিনুকের কাছে পৌঁছে যেতেন। এখন আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়।

নৌকার জ্বালানি তেলের দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। তার ওপর সবুজ ঝিনুকের বিক্রয় মূল্যও কমে গেছে।

সুরইয়াদি ডাঙায় ফিরলেই তার আনা সবুজ ঝিনুকগুলো সাথে সাথে গরম করে পরিষ্কারের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হতো।

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ জেলেই এখন আর মাছ ধরতে যায় না। কারণ তাদের আয় কমে গেছে। একই সাথে জ্বালানির দামও বেড়েছে।’

জাকার্তা প্রশাসনের পুনরুদ্ধার প্রকল্প শুধু সুরইয়াদির মতো জেলের জীবিকারই ক্ষতি করছে না। কাম্পুং কেরাং হিজাউয়ের অন্য বাসিন্দারাও এর প্রভাব টের পাচ্ছে। সবুজ ঝিনুকের সাথে আরো কিছু পেশা জড়িয়ে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ঝিনুকের ডিস্ট্রিবিউটর বা পাইকারি বিক্রেতা।

সুরইয়াদি বলেন, ‘এ মুহূর্তে এক কিলোর মূল্য ১৬ হাজার রুপিয়া। ৪০০ কিলোর জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই। ব্যয় বেশি হলেও আয় কম হয়। টাকা থাকলেও আগের মতো নেই, অনেক কিছু বদলে গেছে। আমরা না গেলে যারা কাজ করছে তাদের জন্য খারাপ লাগে। পরিমাণ কমে গেলেও আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুনরুদ্ধার প্রকল্পের কারণে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ নিরওনো যোগা মনে করেন, ‘যেসব দ্বীপে রিক্লেমেশন প্রকল্প চলছে, সেগুলো আবার উদ্ধার করে উপকূলবর্তী এলাকার সবুজ খোলা জায়গায় ফিরিয়ে দিতে হবে। বসতি স্থাপনের জন্য জোর করে দ্বীপগুলোর জমি বাড়িয়ে এবং বাণিজ্যিক কারণে উপকূল শোষণ করার তুলনায় সবুজ খোলা জায়গা ভবিষ্যতের জন্য অনেক বেশি জরুরি।’

জানা গেছে, শুধু স্থানীয় মানুষের উপার্জনই কমছে না, তাদের উচ্ছেদের ঝুঁকিও বাড়ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে