Naya Diganta

নৈতিকতা ও বিবেকের দায়বদ্ধতা

নৈতিকতা ও বিবেকের দায়বদ্ধতা।

মানুষ এক প্রকার জীব/জন্তু। কিন্তু সামাজিক জীব। জাতি ও গোষ্ঠীগতভাবে একত্রে বসবাস করে কেবল এ জন্য মানুষ সামাজিক জীব হতে পারে না। এটা কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি হতে পারে না। কারণ অন্য প্রাণীকুলও গোষ্ঠীগতভাবে বসবাস করে।

বৈদ্যুতিক লাইনে স্পর্শ হয়ে যদি কোনো কাকের মৃত্যু হয়, তখন বিদ্যুৎ তারের সাথে ঝুলে থাকা মৃত কাকের আশপাশে শতাধিক কাক এসে কা কা শব্দে কম্পমান করে সংশ্লিষ্ট এলাকা। বাঘের প্রিয় শিকার হচ্ছে হরিণ। হরিণ অতিমাত্রায় একটি নিরীহ প্রাণী, তাই বাঘকে মোকাবেলা করতে পারে না। কিন্তু কোনো বন মহিষ, ভাল্লুকজাতীয় প্রাণীকে যদি বাঘ আক্রমণ করে তখন এ প্রাণীগুলো সম্মিলিতভাবেই বাঘকে প্রতিহত করে। জন্তুরাও মানুষের মতোই নিজ নিজ জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সাথে সমাজবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। ইউটিউবে সার্চ দিলে দেখা যায় যে, শত শত বন্যপ্রাণী নিজ শ্রেণীর সাথে একত্রে চলাচল করছে। ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র পিঁপড়া থেকে হাতি পর্যন্ত এই নিয়মটি অনুশীলন করে। এসব কারণেই শুধু সমাজবদ্ধভাবে চলাফেরার কারণেই মানুষ সামাজিক জীব হতে পারে না। বরং ‘বিবেক’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিধায় মানুষ সামাজিক জীব।

বিবেকই মানুষকে অনিয়ন্ত্রিত পাশবিক প্রবণতা থেকে একটি উন্নত জীবনে নিয়ে আসে। এই বিবেক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত, অর্থাৎ নিজের বিচার নিজে করতে পারলে আদালতের বিচারের প্রয়োজন হয় না। একজন অপরাধীর অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনার মূল সাক্ষী সে নিজে। নিজের প্রতি যার আত্মসম্মান বোধ আছে এবং নিজেকে সমাজের কাছে দায়বদ্ধ মনে করে সে অপরাধ থেকে দূরে থাকে। তবে অপরাধ করতে না চেয়েও অনিচ্ছাকৃতভাবে মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেক ব্যক্তিই কোনো না কোনোভাবে ভিকটিম হয়ে পড়ছে। কেউ ব্যক্তিগত কারণে ভিকটিম, কেউবা সমাজের কারণে ভিকটিম, অন্য দিকে ব্যক্তির নিকটও গোটা সমাজ ভিকটিম বা জিম্মি হয়ে পড়ে। সময়ে সময়ে রাষ্ট্র নিজেও ভিকটিম হয়, পক্ষান্তরে পৈশাচিকভাবে রাষ্ট্র নাগরিকদের ভিকটিম করে।

‘সমাজ’ এক দিনে গড়ে ওঠে নাই। রাজা মহারাজাদের কোনো আইন দ্বারাও ‘সমাজ’ গঠিত হয় নাই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে সমষ্টিগতভাবে মানুষের চাহিদার কারণেই সমাজের সৃষ্টি। সমাজ সৃষ্ট আইন যেহেতু কোনো কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রণীত নয় সেহেতু সামাজিক আইন বিলুপ্ত বা কর্তৃপক্ষীয় আদেশ দ্বারা বিলুপ্ত করা যায় না। একজন স্বাভাবিক মানুষ স্বভাবগতভাবে যে পদ্ধতিতে জীবনযাপন করেন, সেই পদ্ধতির সমষ্টিগত বিধি বিধানের প্রতিফলনই হলো সমাজ। প্রতি মানুষেরই একটি নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে এবং মানুষ নিজস্ব সংস্কৃতি দ্বারা পরিবেষ্টিত।

সমাজ ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেই মানুষ সামাজিক জীব। ব্যক্তির জৈবিক চাহিদা পূরণে আকাশচুম্বী অভাব, মানসিক উচ্চাকাক্সক্ষা থেকেই অপরাধ জগতের সৃষ্টি। অপরাধ বিভিন্ন ধরনের। এক এক সমাজের অপরাধ ভিন্নতর। এক দেশের গালি, অন্য দেশের বুলি হিসেবেও চিহ্নিত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরাধের প্রকার রকম চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতি, গোষ্ঠী ও সমাজ সৃষ্টি হওয়ার অনেক পরে রাষ্ট্রের জন্ম। রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে এবং রাষ্ট্রীয় শাসকদের নিরাপদে রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার্থে রাষ্ট্র তাদের চাহিদা মোতাবেক আইন প্রণয়ন করে। এ দুটো পদ্ধতির মধ্যে ভিন্নতা এই যে, সমষ্টিগত মানুষের চাহিদা মোতাবেক সামাজিক প্র্যাকটিসের মাধ্যমে সামাজিক আইন পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি হয়, পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণীত হয় রাষ্ট্রের শাসকদের চাহিদা মোতাবেক, যা জনগণের চাহিদার ধার ধারে না, কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রণীত আইন জারি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সংশোধনী হয়েছে এমন সংশোধনী আইনের অনেক রেফারেন্স রয়েছে।

জনকল্যাণের জন্য আইন পর্যালোচনায় একটু গভীরে গিয়ে বলতে চাই যে, আইন কি মানুষের জন্য, নাকি মানুষ আইনের জন্য? মোটা দাগে বলতে হয় যে, মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই আইনের সৃষ্টি। কথাটি যদি ১০০% সত্য হয় তবে ক্ষেত্রমতে মানুষ আইনের দ্বারা ভিকটিম হয় কেন? ইতালির দার্শনিক সিজার বেকারিয়া বলেছেন ‘আইন ও আদালত দ্বারা সময়ে সময়ে মানুষ ভিকটিম হয়।’ ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে’ দীর্ঘ দিন ধরে এ প্রবাদটি মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে। অথচ ইহা শুধু একটি মিথ্যা উক্তি নয়, বরং নির্বোধের বক্তব্য। কারণ আইন নিজস্ব গতিতে চলতে পারে না, বরং ‘আইন’কে পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ করার ক্ষমতা যারা রাখে তাদের মনোবাসনা মোতাবেকই ‘আইন’ প্রয়োগ ও পরিচালিত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর শাসনব্যবস্থা অনেক নিষ্ঠুর, নির্মম ও বৈষম্যমূলক। যারা শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তাদের জন্য এই পৃথিবীটা একটি স্বর্গরাজ্য, পক্ষান্তরে যারা জনগণ তারা রাষ্ট্রকর্তৃক প্রণীত আইনের প্রতি নিজেকে বিসর্জন দিতে হয়। অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করলে তো ‘আইন’ কারাবন্দী করা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পিঠের চামড়া তুলে নেয়। আইনের যাঁতাকলে প্রতিপক্ষ পিষ্ট হয়।

রাষ্ট্রের নাগরিক বা প্রজাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো কষ্টার্জিত অর্থ শাসক দলের আরাম আয়েশের জন্য লুট হয়ে যায়, অথচ নাগরিক এর প্রতিকার চাইলে বা প্রতিবাদের জন্য গলা উঁচিয়ে কথা বললে গলাচিপে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়। জনগণের জন্য রাষ্ট্র অনেক সময় এতই নিষ্ঠুর হয় যে, যদি রাষ্ট্রের ক্ষমতা থাকত তবে এমন আইন প্রণয়ন করত যে আইনে রাষ্ট্রীয় কর্তাদের বিরোধিতা বা সমালোচনাকারীদের প্রকৃতি থেকে নিঃশ্বাস নেয়া বন্ধ করে দিত। যেহেতু রাষ্ট্র ‘প্রকৃতির’ উপরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে না, সেহেতু নাগরিকদের নিঃশ্বাস বন্ধ করাসহ প্রকৃতি বিরোধী আইন কার্যকর করতে পারে না। তবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করার পরিবেশ বিরোধী অনেক আইন রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত হচ্ছে।

জনগণের জন্য প্রয়োজন একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা একটি লুটেরা বাহিনী সৃষ্টি করেছে যাদের দায়িত্ব শুধু নিরাপদে কোনো প্রকার আইনি বাধা বিপত্তি ছাড়া লুটের পাহাড় গড়া। আইন প্রয়োগকারীরা জনগণের কষ্ঠার্জিত সম্পদ লুটেরাদের পাহারাদার, পক্ষান্তরে যারা প্রতিবাদ করে তাদের ‘নিরাপদ স্থানে’ অন্তরীণ রাখাই আইন প্রয়োগকারীদের প্রধান দায়িত্ব। সে নিরাপদ স্থানের প্রধান ফটকসহ স্থানে স্থানে লিখা রয়েছে যে, ‘রাখিবো নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’। অথচ সেই আলোর পথও অনেক পিচ্ছিল ও কণ্টকময়। যাদের টাকা আছে তাদের কাছে জায়গাটি নিরাপদ হলেও যাদের টাকা কড়ি নই তাদের জন্য নিরাপদ জায়গাটি একটি ‘কবর’ বা কবরের মতোই নিরাপদ। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলখানায় উক্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্লোগান লেখা রয়েছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে উক্ত নিরাপদ জায়গাটি একটি কসাইখানা মাত্র। জেল কর্তৃপক্ষ কয়েদি/আসামিদের নিয়ে ব্যবসা করে, পিসির নামে ব্যবসা, টেলিফোন ব্যবহারের নামে ব্যবসা, সিট বিতরণের নামে ব্যবসা, প্রভৃতি ব্যবসায় কয়েদি বা আসামিরা এখন গিনিপিক মাত্র।

পক্ষান্তরে শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে দেশ, জাতি, সমাজ ও দেশবাসীকে লুটে খাচ্ছে এমন গোষ্ঠী বা শ্রেণী রয়েছে যারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত। দল মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গণমানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য মানুষের মধ্যে থেকেই মানবজাতির কল্যাণের জন্য একটি শ্রেণী রয়েছে যাদের চিন্তাচেতনায় রয়েছে শুধু মানুষের কল্যাণ আর কল্যাণ। এ মর্মে বিশেষত, দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
‘কল্যাণকামী মানুষের ধর্মীয় প্রেরণা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ প্রসূত সাহায্য প্রচেষ্টাতেই সমাজকর্মের ধারণা নিহিত। সমাজকর্ম বিজ্ঞানভিত্তিক যৌক্তিক এবং পেশাগত সেবাকর্ম যা সমস্যাগ্রস্তদের ভূমিকা উন্নয়নে প্রয়োগ করা হয় এবং উন্নয়নমুখী ভ‚মিকা পালন করে। আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক সমস্যা সমাধানকারী প্রক্রিয়া হলো সমাজকর্ম। আধুনিক জীবনের নানাবিধ মনোসামাজিক সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হয়। সমাজকর্ম মূলত পদ্ধতিনির্ভর একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। এর মূল লক্ষ্য সামাজিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রতিটি স্তরের জনগণকে সক্রিয় ও সক্ষম করে তোলা এবং অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। সমাজকর্মের নীতি আদর্শ এবং কৌশল অনুসরণ করে পেশাগত সমাজকর্মীরা আধুনিক শিল্প সমাজের জটিল সামাজিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। চলমান বিশ্বে পেশা হিসাবে সমাজকর্মের স্বীকৃতি সাম্প্রতিক সময়ে, তবে শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রাথমিক অবস্থায় এবং পুঁজিবাদী সমাজের মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জনসমষ্টির বিভিন্ন চাহিদা পূরণ ও আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের সুসংগঠিত প্রচেষ্টার দরুন উনিশ শতকের শেষার্ধে সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে একটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্ম ধারণাটি উদ্ভব ঘটে। তদুপরি, সমাজকর্মের প্রাথমিক উন্মেষ ও বিকাশ পূর্বপরিকল্পিত কোনো ঘটনা নয়। সঙ্গত স্বাভাবিক সামাজিক কারণ ও প্রয়োজনেই তা ঘটেছে। এটি প্রথমত আমেরিকা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ও শ্রেণীর মানুষের যন্ত্রণা ও ভোগান্তি মোকাবেলায় গৃহীত ব্যবস্থা, যা পরবর্তীকালে একটি পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। সমাজ বিজ্ঞান হলো সমাজ সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা, আর সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত, প্রয়োগিক/ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক একটি শাখা হলো সমাজকর্ম। সমস্যা ও সম্ভাবনাময় আধুনিক বিশ্বে সামাজিক বিজ্ঞান ও সামাজিক প্রযুক্তির পরিমণ্ডলে সমাজকর্ম একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রপঞ্চ। আধুনিক জীবনের নানাবিধ মনো-সামাজিক সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে এটি প্রয়াগ করা হয়। সমাজের মানুষের বহুবিধ বহুমাত্রিক সমস্যা মোকাবেলায় সার্থক প্রায়োগিক উৎকর্ষতা ও প্রয়োজনে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের নানাপ্রান্তে সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে অনুশীলন করা হচ্ছে।

সমাজকর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Herbert Bisno বলেন, সমাজকর্ম হচ্ছে বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ সামাজিক ও মানসিক বাধাগুলোর সাথে খাপখাওয়ানোর লক্ষ্যে এককভাবে অথবা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তার জন্য সেবা প্রদানের এক ব্যবস্থা, যেগুলো সমাজে তা পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে বা করতে পারে।

অন্য দিকে সমাজকর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Friedlander বলেন, অর্থাৎ সমাজকর্ম হলো মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক এক পেশাদার সেবা কর্ম যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এককভাবে অথবা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তা করে (বিদ্র: উল্লেখিত তথ্যগুলো ড. মো: নুরুল ইসলাম প্রণীত ‘সমাজকর্ম’ বই থেকে সংগৃহীত)।

দাসপ্রথা পৃথিবী জন্মলগ্ন থেকেই ছিল। বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক আন্দোলনে দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজ-কলমে বিলোপ হলেও মানসিক দাসত্ব থেকে মানুষ মুক্তি পায়নি। মানুষ যখন বিবেক বিবর্জিত হয়ে পড়ে তখনই তার মানসিক দাসত্ব শুরু হয়। মানসিক দাসত্বের কারণে বিবেকের দায়বদ্ধতা ছেড়ে অপশক্তিকে শক্তি মনে করে শক্তি পূজার আত্মনিয়োগ করছে, যার জন্য ক্ষমতার বলয়ে বিবেক বিকশিত হচ্ছে না, বরং ‘শক্তি’ মূল্যায়িত হয়। ফলে ন্যায়নীতির পরিবর্তে জোর যার মুল্লুক তার সে মতবাদই বারবার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

উচ্চশিক্ষা মানুষকে পথ দেখাতে পারে, কিন্তু নৈতিকতা শিক্ষা ছাড়া একজন মানুষের বিবেক বিকশিত হয় না। তখন সে মানুষ তার স্বার্থটাকে আপন ভুবন মনে করে এটাকেই বড় করে দেখে তা পাওয়ার জন্য নৈতিকতাকে ভুলে বিবেককে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। যাদের বিবেকের নিকট কোনো দায়বদ্ধতা নেই তাদের পক্ষে অনৈতিক যেকোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়াকে কোনো বিষয় মনে করে না। তখন তারা দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধকে বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সুবিধাভোগী ও সুবিধাবাদী তারাই যারা এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। বিবেকের মৃত্যু হয়েছে বলে সত্যেরও অপমৃত্যু হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু তারা নিজে কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে সত্য বলতে চায় না, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে চলে। মিডিয়া এখন মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাই লোকে বলে ‘অতীতে লোকে মিথ্যা বলত, মিডিয়া সত্য খুঁজে বের করত, এখন মিডিয়া মিথ্যা বলে, অনুসন্ধানীদের সত্য খুঁজে বের করতে হয়।’ নৈতিকতার বিপর্যয়ের কারণে বিবেকের দায়বদ্ধতা নেই বলেই মিথ্যার নিকট সত্য পরাজিত হয়, কিন্তু সত্যের জয় হয় অনেকটা কাঠখড় পোড়ানোর পর, তাই সত্যকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে বারবার।

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com