Naya Diganta

আজ মহান একুশে : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

অমর একুশে আজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমাদের তরুণ ছাত্র যুবকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। তাদের সেই সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ জাতি হিসেবে আমাদের পৃথিবীর ইতিহাসে অবিস্মরণীয় করেছে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাষা হিসেবে বাংলা আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে এটি শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আজ মঙ্গলবার শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হবে ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরদের। শ্রদ্ধা জানানো হবে ভাষা আন্দোলনের উৎসপুরুষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সংগঠক অধ্যাপক আবুল কাসেম থেকে শুরু করে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল মতিন, গাজিউল হক, অলি আহাদ, শামসুল আলম, গোলাম মওলা, আব্দুল গফুর, আনোয়ারুল হক খান, আলী আজমল, ইব্রাহিম তাহাসহ ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জানা-অজানা সবাইকে।

আজ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিটি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হবে। প্রতিটি শহীদ মিনার ভরে উঠবে ফুলে ফুলে। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীবাসী ছুটে যাবেন ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ঢাকার সব অলিগলি রাজপথ থেকে খালি পায়ে ফুল হাতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ছুটবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ভাষাশহীদদের স্মরণে লেখা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’।

দিবসটি পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদও। হরতাল প্রতিহত করতে তৎকালীন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসেন ভাষা আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কিনা তা নিয়ে নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্রসমাবেশের কর্মসূচি ছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রনেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় পরের দিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাবি আমতলার সমাবেশে এ বিষয়ে উপস্থিত ছাত্রদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে রাতেই অনেক ছাত্রনেতা পরের দিন ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ছাত্ররা আসতে থাকে আমতলায় (বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনের মাঠ)। বেলা ১১টায় বিস্ফোরণোন্মুখ ছাত্র-যুবকদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য দেন শামসুল হক, তোয়াহা, কাজী গোলাম মাহবুব, খালেক নওয়াজ চৌধুরী, শাহাবুদ্দীন আহমদ খালেদ, আব্দুল মতিন। ঘণ্টা খানেক সভার কাজ চলার পর সভাপতির বক্তব্যে গাজিউল হক ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে মত দেন। এতে সম্মতি দেন উপস্থিত সব ছাত্র-জনতা।

পাঁচজন করে ছাত্র বের হলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ হয়। ১০ জনের প্রথম গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র আলী আজমল। তাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়। এভাবে দ্বিতীয় ১০ জনের গ্রুপটির নেতৃত্ব দেন ইসলামী ভ্রাতৃসঙ্ঘের নেতা ইব্রাহিম তাহা ও আব্দুস সামাদ, তৃতীয় দলের নেতৃত্ব দেন আনোয়ারুল হক ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রদের পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় প্রথম ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে ছাত্ররা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিকেল ৪টায় মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন রফিকউদ্দিন আহমদ (তার নাম মুহম্মদ সালাহুদ্দীন নিয়ে বিভ্রান্তি আছে)। রাত ৮টার পরে আহতদের মধ্যে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত এবং গফরগাঁওয়ের আব্দুল জব্বার।

সাংবাদিক মোদাব্বের সে সময় ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং একুশের ঘটনা জানতে পারেন। একুশের রাতে তিনি পুলিশের গাড়িতে ৯টি লাশ তুলতে দেখেন। ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকায় আটজন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। তবে পরে ইতিহাস অন্বেষণে ছয়জন শহীদের প্রকৃত নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। ওপরে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা বাদে বাকিরা হলেন ঢাকা হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান, নবাবপুর রোডের বাসিন্দা সরকারি অফিসের পিয়ন আব্দুস সালাম।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৩ উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষায় শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে। রাষ্ট্রপতি আরো আশা প্রকাশ করেন, মহান একুশের চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ জাগ্রত হবে, গড়ে ওঠবে একটি বৈষম্যহীন বর্ণিল বিশ্ব।


২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল। মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ ধারণ করে, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ যা স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে অর্জিত হবে। সেই সাথে আমরা বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন।

কর্মসূচি
আজ সরকারি ছুটি। প্রতি বছরের মতো এবারো একুশে ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে সঠিক নিয়মে, সঠিক রঙ ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ মিশনগুলো শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনবিষয়ক আলোচনা সভা, পুস্তক ও চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বাঙালি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কুরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়ার আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং দিবসটি পালনে নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপগুলো ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানগুলোতে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষাশহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ইত্যাদি জনসচেতনতামূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোতে ক্রোড়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে গণযোগাযোগ অধিদফতর ঢাকা মহানগরীতে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহর সংলগ্ন নৌপথে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজনসহ জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর তিন ধরনের পোস্টার মুদ্রণ করবে যার মধ্যে প্রথমটি হবে সর্বজনীন, দ্বিতীয়টি স্কুল-কলেজের শিশু-কিশোরদের জন্য এবং তৃতীয়টি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো ও বাংলাদেশে অবস্থিত বৈদেশিক দূতাবাসগুলোতে প্রচারের জন্য।

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা-অধিকার রক্ষা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত শহীদদের রক্তে রঞ্জিত দিবসটি আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির সাথে বরাবরের মতো এবারো স্মরণ ও পালন করবে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং প্রভাতফেরি। এ ছাড়াও ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সব কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান।

এ দিকে ঢাবি প্রতিবেদক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং আজিমপুর কবরস্থানে জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বরাবরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পালন করে আসছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে রাষ্ট্রীয় এ দিবসটি পালনের জন্য বরাবরের মতো এ বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটি নানাবিধ দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিমূল প্রস্তুত করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং যথাসময়েই তা সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। এরপর পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তিন বাহিনীর প্রধান, ভাষাসৈনিকবৃন্দ, ঢাবি ভিসি, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাবি শিক্ষক সমিতি, অনুষদগুলোর ডিন ও হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ।

গত বছরের বিধিনিষেধ এবার থাকছে না উল্লেখ করে ভিসি জানান, এ বছর প্রতিটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। সুষ্ঠুভাবে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অনুরোধ করছি।

রোডম্যাপের ব্যাপারে ভিসি বলেন, সর্বস্তরের জনসাধারণ পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে শুধু প্রস্থান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপও প্রণীত হয়েছে। রুট-ম্যাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করছি। একুশে পালনে সার্বিক ব্যবস্থাপনা সমন্বয়ের জন্য শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে।

ঢাবির পৃথক আয়োজনগুলোর অন্যতম হলো প্রভাতফেরি। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় ভিসির নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে অমর একুশে পালনের লক্ষ্যে শহীদ মিনার এলাকায় কোনো মিছিল বা সমাবেশ করা যাবে না এবং শহীদ মিনার এলাকায় কোনো ব্যানার, পোস্টার বা ছবি টাঙানো যাবে না। প্রবেশপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভিসি ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে দিবসটি পালন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত সব কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সব সদস্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‌্যাব, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং গণমাধ্যমসহ সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।