Naya Diganta

চার মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান করতে হবে নিট রিজার্ভ


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ মনে করে, আগামী মার্চে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ২৯৪ কোটি ডলারে নেমে যাবে। আর এ রিজার্ভ দিয়ে আড়াই মাসের একটু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। আর খাদ্যপণ্য আমদানি করলে চার মাসের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশ খাদ্য আমদানি করে তাই চার মাসের রিজার্ভ থাকতে হবে। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেতে যে কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ। আর আগামী জুনের মধ্যে এ নিট রিজার্ভ প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যবহার করার মতো যে বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে তাই রিজার্ভে দেখাতে হবে। কোনো তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ রিজার্ভে দেখানো যাবে না।


সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত বাংলাদেশকে পরিপালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো খেলাপি ঋণ কমানো, ডলার ও টাকার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। ঋণের সুদহার সীমা তুলে দিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার নিট হিসেবের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে আগামী জুনের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা সংক্রান্ত আইএমএফের প্রধান দুটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। ডলারের বিভিন্ন ধরনের দর তুলে দিয়ে বেচা ও কেনা দাম নির্ধারণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এই শর্ত বাস্তবায়ন করলে ডলারের দাম বেড়ে যাবে। একই সাথে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করতে হবে। এতে রিজার্ভ বেশ কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও আইএমএফের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এসব শর্ত পরিপালনের জন্য। আর এসব বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে। যদিও এসব শর্ত পরিপালন করতে বাংলাদেশ সময় পাবে মাত্র ৫ মাসেরও কিছু কম।


সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে গেলে ডলারের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। কারণ কাগজে-কলমে যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন বৈদেশিক মুদ্রাবাজার হস্তক্ষেপ করে না, তবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা ডলারের যে দর নির্ধারণ করে তার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচ্ছন্ন হাত থাকে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের দর হঠাৎ লাফ দিয়ে বেড়ে যায় না, বা বেশি কমে যায় না। কিন্তু আইএমএফ মনে করে ডলারের বিভিন্ন ধরনের দর তুলে দিতে হবে, করতে হবে বাজারভিত্তিক। যেমন বর্তমানে বাফেদার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাগজে কলমে রফতানিতে প্রতি ডলার ১০৩ টাকা, রেমিট্যান্সে ১০৭ টাকা। কিন্তু এ দর বেশির ভাগ ব্যাংকই মানছে না। রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক ১১৫ টাকা দরে ডলার কিনছে। আবার আমদানির ক্ষেত্রেও ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে। ফলে বাজারের ওপর বাফেদার নিয়ন্ত্রণ কমে যাচ্ছে। আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে হলে ডলারের বাজারভিত্তিক করতে হবে। তখন ডলারের দাম নিশ্চিত বেড়ে যাবে। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে। আর এ কারণে জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়ে যাবে, যা দুর্ভোগ বাড়বে দেশের মানুষের।


আবার, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের অর্থ ছাড় পেতে হলে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ আগামী জুনের মধ্যে দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ রিজার্ভের যে অংশটুকু ব্যবহার করা হয়েছে তা বাদ দিতে হবে। এটা হলে আগামী মার্চে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ আরো কমে হবে ২ হাজার ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। যা দিয়ে দুই মাসের কিছু বেশি আমদানি দায় মেটানো যাবে। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খাদ্য আমদানি করে এমন দেশকে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকতে হবে। আর তা হলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো চাপে পড়ে যাবে। আইএমএফের হিসেব অনুযায়ী মনে করে, আগামী জুনে নিট রিজার্ভ বেড়ে দুই হাজার ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার ও ডিসেম্বরে দুই হাজার ৬৮১ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।


আইএমএফের এ ঋণ পেতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ চার মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান উন্নীত করতে হবে। আর এটা করতে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমাতে হবে। এভাবে চার মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান নিট রিজার্ভ চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিলগুলো সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। স্থানীয় মুদ্রায় বিকল্প তহবিল সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন রফতানি উন্নয়ন তহবিল ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সঙ্কুচিত করে প্রকৃত রিজার্ভ বাড়ানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।