Naya Diganta

নতুনে চমক নেই পুরাতনেই আগ্রহ


এবারের গ্রন্থমেলায় চমক দেখাতে পারেনি নতুন কোনো বই। ফলে নতুনের চেয়ে পুরাতন বইয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। বিক্রেতারা জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার নতুন বইয়ের সংখ্যা একেবারেই সামান্য। তারপরও পাঠক টানতে পারেনি নতুন আসা বই। আগত পাঠকরা ঘুরে ফিরে পুরাতন বই কিনছেন বেশি।


প্রকাশকদের মতে, বিগত বছরগুলোতে মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি থাকত। ফলে ক্রেতা নতুন বইয়ের প্রতি বেশি আগ্রহী থাকতেন। বিক্রিও ছিল ভালো। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো। তাদের মতে, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সবচেয়ে বেশি সমস্যার পেছনে মূল কারণ তৈরি হয়েছে কাগজের দাম বৃদ্ধি। এক দিকে কাগজ, অন্য দিকে ছাপা উপকরণসহ সব কিছুর অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধিতে মুদ্রণ শিল্প এখন ভয়াবহ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে এবারের বইমেলায়।


অতিরিক্ত খরচে বই ছেপে দাম বৃদ্ধির কারণে পাঠক হারোনার আফঙ্কা আগে থেকেই করে আসছিলেন প্রকাশকরা। ফলে এবার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছাড়া এবার তারা নতুন বই প্রকাশ করেননি। কারণ বই প্রকাশের পর যদি ক্রেতা না থাকে তবে তার পুরোটাই লোকসান যাবে এমন আশঙ্কা থেকেই এমনটা হয়েছে। মেলা শুরুর পর সেই আশঙ্কার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কারণ প্রতিদিন পাঠক সমাগম হলেও বিক্রি কম, যা বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে পুরনো বই সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যেহেতু পুরনো বই আগে ছাপানো তাই সেগুলোর দামও কম। আর নতুন বই এক দিকে যেমন দাম বেশি অন্য দিকে ভালো লেখক এবার তেমন বই দেননি। ফলে সব মিলিয়ে এবার মেলায় সুখবর নেই বলা চলে। সামান্য কিছু স্টলে নতুন বই তোলা হলেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা মিলছে না।
মেলায় এসেছে এস এম আকিব মুর্শেদের বই ‘স্মার্ট ফেসবুক মার্কেটিং’। বইটির প্রকাশক ফরিদ পাবলিকেশনস। ‘শয়তান এবং নফসের বিরুদ্ধে লড়াই’। লেখক মাহমুদ বিন নূও, প্রকাশক রাইয়ান প্রকাশন। ‘দ্য সাইকোলজি অব মানি’। লেখক মর্গ্যান হাউজেল, প্রকাশনী মুক্তদেশ প্রকাশন। দ্য সাইকোলজি অব মানি, বইটি অর্থনীতি শিক্ষাবিষয়ক একটি মনোবিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণধর্মী ইতিহাসনির্ভর গ্রন্থ। ‘বিশ্বের বিস্ময়’ লেখক আবদুল হাই সেলিম। প্রকাশক রয়েল পাবলিকেশন।


আদর্শকে নিয়ে আজ আদেশ : বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের ওপর আজ বুধবার আদেশের দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি খসরুজ্জামান ও বিচারপতি ইকবাল কবীর লিটনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বিতর্ক ওঠা তিনটি বই বিক্রি ও প্রদর্শনী না করার শর্তে একটি মুচলেকা চেয়েছেন আদালত। একই সাথে বই তিনটি আদালতে জমা দিতে বলা হয় এ দিন। এ ছাড়াও বই তিনটি বাতিল করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট। এর আগে সকালে রিটের শুনানিতে বাংলা একাডেমি যে তিনটি বই নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দিলে সমস্যা কোথায়, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেন, ওই তিনটি বই বাদ দিয়ে আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দিলে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।


আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
এর আগে গত সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ রিটটি শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করে আদেশ দেন। তারও আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনটি করা হয়। রিটে আদর্শ প্রকাশনীকে পাঠানো চিঠিতে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে না, সেই মর্মে রুল জারিসহ নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও মেলার আয়োজকদের সভাপতিসহ চারজনকে বিবাদি করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো: মাহবুবুর রহমান বাদি হয়ে রিটটি করেন।