Naya Diganta
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প

সতর্কতা ও প্রস্তুতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প

ভূকম্পন একটি সাধারণ ঘটনা। পৃথিবীতে নিয়মিত ছোট-বড় ও মাঝারি ভূকম্পন হয়। এর কারণগুলো বিজ্ঞানীরা দিয়ে থাকলেও বাস্তবতার সাথে সেগুলো সব সময় মেলে না। তবে আসমানি কিতাবের জ্ঞান থেকে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট কারণে এমন হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে। এতে মানুষের বেপরোয়া জীবনযাপনের বিষয়ে স্রষ্টার পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। অতীতে বহু জাতিকে ভূমিকম্প ও ভূমিধস দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সেগুলোর সাক্ষী হয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক স্থান। ইতিহাসেও তার বর্ণনা পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- মানুষ প্রকৃতি থেকে খুব কমই শিক্ষা নিয়ে থাকে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের বিনাশ হলেও এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ও বাংলাদেশে এমনটি ঘটার আশঙ্কাই দেশে বেশি আলোচিত হচ্ছে।
ভূমিকম্প রোধ করার সাধ্য মানুষের নেই। তবে পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও উপদ্রুত মানুষের সহায়তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূকম্পনে আবাসিক ভবন ধসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। যারা ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছে তাদের উদ্ধার ও প্রত্যন্ত এলাকায় সাহায্যে নিয়ে পৌঁছা সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। ভূমিকম্পের পর দেখা গেল, তুরস্কের কয়েকটি অঞ্চলের বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল ধরেছে। বিমান চালনা বন্ধ করতে হয়েছে। একটি নৌবন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে আছে। তাদের যোগাযোগব্যবস্থা আরো করুণ হওয়ার কথা। এমন অবস্থায় তাদের উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় আহত ও আটকে পড়া মানুষের কাছে সাহায্য পাঠানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার ভূমিকম্প-পরবর্তী যে শঙ্কাজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে সেটি আলোচনার দাবি রাখে। বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছেন, ঢাকার আশপাশে কম মাত্রার ভূমিকম্প হলেও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে অকল্পনীয় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে ঢাকা। প্রথমত এ শহরের বেশির ভাগ ভবন ইমারতবিধি মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে এগুলো মাটির সাথে মিশে যাওয়ার শঙ্কা বেশি। সরু রাস্তা ও অপর্যাপ্ত খালি জায়গার কারণে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার দল অকূস্থলে পৌঁছাতেই পারবে না ঢাকায়। অথচ উন্নত দেশ তুরস্কে এ ধরনের সমস্যা না থাকার পরও বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধার কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। ঢাকার পানির স্তর ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এলোপাতাড়ি ভবন নির্মাণের কারণে এখানকার ভূমির পরিস্থিতি আরো নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের সরকারের প্রস্তুতি নেই, তা বলা যায়।
তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে। লক্ষণীয় বিষয় ছিল, মূল কম্পনের পর আরো অর্ধশতাধিক কম্পন। তার মধ্যে দু’টি ছিল ৬ মাত্রার বেশি। ইতোমধ্যে তুরস্কে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে। সামাজিকমাধ্যমে এমন ভবনধসের ভিডিও দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে, একটি অত্যাধুনিক আবাসিক ভবন মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে মিশে গেছে। সেখানে শত শত মানুষ থাকার কথা। বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু ভবন ধসেপড়া ও সেখানে মানুষ আটকে পড়ার খবর আসছে। বেঁচে থাকা মানুষ পরিবারের জীবিত আটকেপড়া সদস্যদের নিয়ে আহাজারি করছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন, এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারাবে।
ইতোমধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়াকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও চীন সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। সাহায্যকারী দেশগুলো তাদের অগ্রবর্তী দল পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোও সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সহযোগিতায় সাড়া দিয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আমাদের মতো দরিদ্র, অনগ্রসর ও ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশকে এ থেকে অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, কোনো বিপর্যয় ঘটার আগে নেয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপে পরের যেকোনো তৎপরতা বহুগুণ কার্যকরী হতে পারে।