Naya Diganta

পুলিশের নির্যাতনে নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ী রবিউলের মৃত্যু

পুলিশের নির্যাতনে নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ী রবিউলের মৃত্যু।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার বলেছেন, গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যু পুলিশের নির্যাতনে হয়নি, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তবে তার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম।

জিএমপি কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ‘অনলাইনে বিট কয়েনের মাধ্যমে জুয়া খেলার অভিযোগে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে আটক করে বাসন থানা পুলিশের দুই এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলাম। ১৭ জানুয়ারি রাতে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। থানা থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। তিনি থানা হেফাজতে বা পুলিশের নির্যাতনে মারা যাননি এটা নিশ্চিত। চিকিৎসকের সার্টিফিকেটে রবিউল ইসলামের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া রবিউলের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় হয়েছে বলে তার পরিবারও দাবি করেছে।’

জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ঘটনার দিন না-কি চার দিন আগে আটক করা হয়েছিল ওই ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্য, তার বাসার আশপাশের মানুষজন ও এর সাথে যুক্ত-অযুক্ত ৮৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে তাদের মধ্য থেকে অনেকে বলেছে রবিউলকে পুলিশ তার মৃত্যুর চার দিন আগেই আটক করেছিল। রবিউল ইসলামকে নিহতের চার দিন আগে আটক করার কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘চার দিন আগেই রবিউল ইসলামকে আটক, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে থানা থেকে রাতে ছেড়ে দেয়া, ছেড়ে দেয়ার সময় দায়িত্ব নিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে না দেয়া, থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এছাড়া রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, ‘বাসন থানায় সিসিটিভির মনিটরিং ছিল। ঘটনার কয়েকদিন আগে কেন সিসিটিভি অকার্যকর ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য জিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাগ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে কে বা কারা ক্যামেরা বন্ধ বা ক্ষতিসাধন করছে অথবা বন্ধ করে রাখছে তা শনাক্ত করা যাবে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় হাতে পেয়েছে তারই আলোকে বাসন থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু খানের ব্যাপারে পুলিশের মহা-পরিদর্শককে (আইজিপি) সুপারিশ করে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘ঘটনায় পরপরই ওই থানার দু’জন এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু খানকে ঘটনার কয়েকদিন পর তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বরখাস্তের সুপারিশ করে আইজিপি বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।’

তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, অধিক মেয়াদে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কিছু বিষয় বেরিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া রবিউলকে জুয়া খেলার যে অভিযোগে আটক করা হয়েছিল ওই অভিযোগ সঠিক ছিল কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা ঘটনা প্রসেডিংয়ের জন্য একটা সুপারিশমালা তৈরি করেছি। এ ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো: শামসুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ) খায়রুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার (শাহনাজ গলি) ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম পুলিশের নির্যাতনে নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা একটি পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ ওই পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় জিএমপির উপ-কমিশনার ও তার দেহরক্ষীসহ পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ দু’টি পৃথক মামলা করে।