Naya Diganta

সখীপুরে বরই চাষে বাম্পার ফলন

সখীপুরে বরই চাষে বাম্পার ফলন

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টাঙ্গাইল জেলার সখীপুরে এবার বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। বরই চাষে এবার কপাল খুলেছে কৃষকদের।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, বরই সাধারণত উঁচু এবং উষ্ণতম অঞ্চলে ফলন ভালো হয়। যদিও উপজেলায় আগে আপেল কুল বরই ও বাউ কুলের চাষ হতো। তবে এখন নতুন জাত বল সুন্দরী বরইয়ের চাষ বেড়েছে। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউ কুলের চেয়ে আকারে বেশ বড় এই বল সুন্দরী বরই।

জানা গেছে, নতুন এ জাতের বরই চাষ করে সফল হয়েছেন অনেকেই। সেজন্য আপেল কুল বা বাউ কুলের পরিবর্তে উপজেলায় বাড়ছে বল সুন্দরী বরই চাষ। বল সুন্দরী বরই আকারে বড়, অধিক মিষ্টি, রসালো, পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং ফলনও হয় বেশ ভালো। তাই কৃষকরা এই বরই উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন বেশি।

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বরই চাষি চাষি মাস্টার শহিদুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, তিন বন্ধু মিলে আট বিঘা জমিতে বরইয়ের চাষ করেছি। থোকায় থোকায় বল সুন্দরী বরই ধরেছে। প্রতি গাছে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ কেজি করে কুল বরই পাওয়া যাবে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা। তবে বর্তমান বাজার দর হিসাবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে কুল বরই বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রায় ১০-১১ লাখ টাকার করা বিক্রি করা সম্ভব বলে আশা করেন তিনি। অল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়াই কুল বরই চাষে ঝুঁকছেন তরুণ উদ্যোক্তারা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জাতের এই বল সুন্দরী কুল গাছে থোকায় থোকায় বরইয়ে বাগান ভরে গেছে। ফলের ভারে গাছগুলো মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাগানে কুল বরই তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যাস্ত সময় পার করছেন তিনি।

বরই চাষি সাবেক মেম্বার ময়না মিয়া দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি কুল বরইয়ের সাথে মাল্টা ও পেয়ারা চাষ করেছি। মাল্টা ও পেয়ারা চাষে একবারই ভালো ফলন হয় না। কিন্তু বল সুন্দরী কুল বরই চাষে কয়েকবার ফলন পাওয়া যায়। সহজেই পরিচর্যা করা যায়। উৎপাদন খরচও কম আবার তেমন পোকার উপদ্রব নেই। ফলনও বেশি, খেতেও সুস্বাদু।

সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কুল বরই বাগান গড়ে উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি আড়তগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে সখীপুরের সুস্বাদু এই কুল ও টক বরই। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কিনে ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যান এই কুল ও টক বরই। সখীপুরের এই কুল ও টক বরই প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার কেনাবেচা হয়।

উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, উঁচু এবং উষ্ণতম অঞ্চলগুলোতে কুল বরই চাষ ভালো হয়। সে দিক থেকে সখীপুরে ভালো কুল বরই চাষ হয়ে থাকে। গত বছরের তুলনায় এবার কুল বরইয়ের ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য বাগানের তুলনায় কুল বরই বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে।

তিনি জানান, ভালো মানের কুল বরই উৎপাদনে চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যার কারণে কুল বরই চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।

আয়েশা আক্তার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেশ কয়েক জাতের আপেল ও বল সুন্দরী কুল বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর বেড়েছে বরই আবাদের পরিমাণও। এবার সখীপুর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়েছে।