Naya Diganta

ডার্ক ওয়েব থেকে তথ্য হাতিয়ে শালা-দুলাভাইয়ের প্রতারণা

রনি ও শাকিল সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। রনি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনাবেচা করত। কিন্তু সৎভাবে ব্যবসা করে টাকা উপার্জনে তার মন ভরছিল না। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার নেশা জাগে তার। কম্পিউটার যন্ত্রাংশ বেচাকেনার একপর্যায়ে প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়ে। শালা-দুলাভাই মিলে যোগ দেয় হ্যাকারদের দলে। বিভিন্ন মেইল আইডি হ্যাকসহ ভিসাকার্ড, মাস্টারকার্ডের তথ্য নিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তারা।
এমনই প্রতারক চক্রের সদস্য শহীদুজ্জামান ওরফে রনি (৩৮) ও তার শ্যালক মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডার্ক ওয়েব থেকে তথ্য নিয়ে জার্মানভিত্তিক কার্গো কোম্পানির সার্ভারে প্রবেশ করে ই-মেইল হ্যাক করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছিল তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ গতকাল রোববার সকালে চাঁদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, তিনটি মোবাইল ফোন, সিমকার্ড ও রাউটার জব্দ করা হয়।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো: সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, সম্প্রতি এম এ আহসানুল বারী নামে এক ব্যবসায়ী গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্ত শুরু করি আমরা। তদন্তের একপর্যায়ে প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের দুইজনকে চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সম্পর্কে শালা-দুলাভাই।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদি এম এ আহসানুল বারী জার্মানিতে অবস্থিত কারকন কার্গো লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও কারকন কার্গো কন্ট্রোল বিডির স্বত্বাধিকারী। তিনি অভিযোগ করেন, কেউ সম্প্রতি তার মেইল আইডি হ্যাক করে জার্মানিতে অবস্থিত মূল কোম্পানির কাছে কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে খরচ বাবদ চার হাজার ৮০০ ডলারের ডিমান্ড নোট পাঠিয়ে মেইল করেছে।
তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রনি ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন সাইট থেকে ই-মেইলের তথ্য সংগ্রহ করেন। ডার্ক ওয়েব থেকে এম এ আহসানুলের ই-মেইলের তথ্য পান। এই তথ্য দিয়ে তিনি কোম্পানির ই-মেইল অ্যাড্রেসে প্রবেশ করে জার্মানিতে অবস্থিত মূল কোম্পানির কাছে খরচ বাবদ চার হাজার ৮০০ ডলার চেয়ে মেইল করেন। মেইলে রনি প্রতারণা করে এম এ আহসানুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে টাকা পাঠাতে অনুরোধ করেন জার্মানির কোম্পানিটিকে।
নতুন অ্যাকাউন্ট দেখে জার্মানি থেকে আবারো অ্যাকাউন্টটি কনফার্ম করার জন্য বলা হয়। রনি আবার কনফার্ম মেইল করে। তারপর পাঠানো সব মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেয়। কোম্পানি তার দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এরই মধ্যে এম এ আহসানুল বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে। এম এ আহসানুলের মাধ্যমে জার্মানির কোম্পানি প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে সুইফট সিস্টেম থেকে লেনদেনটি স্থগিত করে দেয়।
এডিসি মো: সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, তারা ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন সাইট থেকে ই-মেইল এবং ভিসা, মাস্টারকার্ড, পেপালসহ বিভিন্ন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে। এসব তথ্য দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মেইল আইডি হ্যাক করে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে নিজেদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতি নেয়। এ ছাড়াও বিদেশীদের বিভিন্ন কার্ডের তথ্য দিয়ে ইউএসএ, ইউকে, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য অনলাইনে অর্ডার করত। অনলাইনে আইফোন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য, উন্নতমানের কসমেটিকস পণ্য অর্ডার করে তারা। কিছু কিছু পণ্য ইতোমধ্যে শিপমেন্টও হয়েছে। কিছু পণ্য শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৪-৫ লাখ টাকা।