Naya Diganta

ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে কবে বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে?

ভারতে আদানি পাওয়ারের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র

ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি গোষ্ঠীর গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে কবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে, তা নিয়ে আবারো অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই চলছে বলে বাংলাদেশ সরকার ও আদানি গোষ্ঠীর সূত্রে দাবি করা হলেও বিবিসি জানতে পেরেছে, আগামী মাসে (মার্চ) গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে, সেই সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ।

এর আগে আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি নিজেই গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরের ডেডলাইন ঘোষণা করেছিলেন, যেটা ইতোমধ্যেই ‘মিস’ হয়ে গেছে। এখন নতুন ডেডলাইন ধরা হয়েছে ‘মার্চের মাঝামাঝি’।

তবে এই অনিশ্চয়তার সাথে শেয়ার বাজারে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বর্তমান সঙ্কটের কোনো সম্পর্ক নেই বলেই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জানাচ্ছে।

বরং বাংলাদেশের দিকে ট্রান্সমিশন লাইন তৈরির কাজ শেষ হয়নি বলেই প্রকল্পর বাস্তবায়ন ‘অল্প কিছুটা বিলম্বিত’ হতে পারে বলে দিল্লিতে সরকারি সূত্রগুলো বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন।

উপরন্তু গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড আদানি পাওয়ারকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, তারা প্রতি টন পিছু ৪০০ ডলার হারে জ্বালানি কয়লার যে দাম ধার্য করেছে, বাংলাদেশ মনে করে সেটা আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি।

কয়লার দাম পুনর্বিবেচনার এই দাবি ওঠার ফলেও গোড্ডার বিদ্যুৎ নিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

তবে রোববার ঢাকায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য বলেছেন, গোড্ডা থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে ৭৫০ মেগাওয়াট ও এপ্রিলে আরো ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা শুরু হবে।

সমস্যাটা যেখানে
গোড্ডায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদানি গোষ্ঠী ঝাড়খন্ড থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ইন্টারকানেকশন পয়েন্ট পর্যন্ত একটি ১০৬ কিলোমিটার লম্বা পৃথক (‘ডেডিকেটেড’) ট্রান্সমিশন লাইন বানিয়েছে।

দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি অনুসারে, সীমান্তের রোহনপুর সাবস্টেশন থেকে বাকি ২৮ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন বানাবে বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন, যা এটিকে বাংলাদেশের জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত করবে।

ভারত সরকারের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, দু’দেশ মিলিয়ে এই যে মোট ১৩৪ কিলোমিটার লম্বা ট্রান্সমিশন লাইন- সেটার কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি বলেই বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা দেরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাশাপাশি এটাও বলা হচ্ছে, এই কাজ বেশি বাকি আছে বাংলাদেশ অংশেই।

দিল্লির অর্থনৈতিকবিষয়ক সংবাদপত্র ‘দ্য মিন্ট’ রিপোর্ট করেছে, গোড্ডা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড শুরুর তারিখ বা কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট (‘সিওডি’) ছয় মাস পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র যখন দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) আওতায় মুনাফার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে, তখন সেই তারিখটাকেই বলা হয় সিওডি।

এখন ভারতের যে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন (পিএফসি) ও রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন করপোরেশন (আরইসি) গোড্ডার জন্য আদানিকে প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপি ঋণ দিয়েছে, ‘দ্য মিন্ট’ পত্রিকার দাবি অনুযায়ী এই সিওডি পিছিয়ে দিতে হতে পারে বলে তারাই এখন আশঙ্কা করছে।

তবে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর একজন কর্মকর্তা ওই পত্রিকাটির কাছে দাবি করেছেন, গোড্ডা প্রজেক্ট ‘ইজ ইন শিডিউল’, অর্থাৎ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়সূচি মেনেই এগোচ্ছে।

কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হলেও ঠিক কবে থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে, সেটা নিয়ে ভারতে আদানি, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, পিএফসি বা আরইসি- কোনো পক্ষই কিন্তু প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।

গোড্ডা যেহেতু ইতোমধ্যেই একবার ডেডলাইন মিস করেছে, তাই এই তারিখ নিয়ে সংশয় ও অনিশ্চয়তাটাও সহজে কাটছে না।

বাংলাদেশের বক্তব্য
এদিকে ঢাকায় রোববার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, গোড্ডা থেকে আগামী মাসে বিদ্যুৎ আসা শুরু হবে বলে যে কথা রয়েছে, তাতে কোনো নড়চড় হচ্ছে না।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাব, প্রতিযোগিতামূলক দরেই পাব এবং কয়লাও সুবিধাজনক দরেই পাব। এটা নিয়ে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই।”

তিনি আরো জানান, সরকার এ বছরের মধ্যেই অনেকগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করে দেয়ার বা সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখেছে।

হামিদের কথায়, “এর মধ্যে আদানি একটি। আদানির প্লান্টের অর্ধেক ক্যাপাসিটি, অর্থাৎ ৭৫০ মেগাওয়াট মার্চের প্রথম সপ্তাহেই আমাদের গ্রিডে যুক্ত হবে। বাকি ৭৫০ মেগাওয়াট আসা শুরু হবে এপ্রিলে।”

হামিদ আত্মবিশ্বাসের সাথে এই দাবি করলেও তার মন্ত্রণালয়েরই অধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) কিন্তু জ্বালানি কয়লার দাম নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর সাথে গত সপ্তাহে নতুন করে দরকষাকষি শুরু করেছে।

২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সাথে বাংলাদেশের পিডিবি যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল জ্বালানির আমদানি ও পরিবহন খরচ ক্রেতা দেশই (বাংলাদেশ) বহন করবে। ফলে গোড্ডার বিদ্যুতের দামে জ্বালানির খরচ একটা বড় ফ্যাক্টর।

কিন্তু আদানি গোষ্ঠী তাদের ডিমান্ড নোটে প্রতি টন কয়লার যে মূল্য (৪০০ মার্কিন ডলার) ধার্য করেছে, বাংলাদেশ মনে করছে, সেটা আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে অনেকটাই বেশি।

গোড্ডার বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যাওয়া শুরু হওয়ার আগে এই দরাদরিরও যে মীমাংসা হওয়া দরকার, তা বলাই বাহুল্য।

সূত্র : বিবিসি