Naya Diganta

একই সমতলে জাপান ও বাংলাদেশের অর্থনীতি শেখার ও দেখার

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে নির্ণীত উপসর্গের ভিত্তিতে প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। কেননা, নাড়ি টিপে জ্বর পরীক্ষা করে আন্দাজে ‘যদি লাইগ্যা যায়’ প্রকারে ব্যামোর চিকিৎসা এখন অচল ও অগ্রহণযোগ্য। ব্যবহারজীবীরাও অনুরূপ ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের আদালতে ‘মাই লর্ডরা’ কী রায় দিয়েছিলেন এর নজির টেনে আরজি ও সওয়াল-জবাব করেন। যিনি যত উদাহরণ টানতে পারেন তিনি তার সামনের মাই লর্ডকে তত কনভিনস করতে পারেন। কথায় আছে- হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না, এই আপ্তবাক্যের জোরে সমীচীন ফল প্রাপ্তি ঘটে। রাজনৈতিক জেদাজেদির কারণে অনেকে কখনো সখনো রাজনৈতিক ভেদ-বুদ্ধির সন্ধানে নেমে এক যাত্রায় দুই ফলের বিরুদ্ধে মামলার উদাহরণ টেনে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘ইন্নমা’ল আ’মালু (কথা ও কাজ) বিন নিয়্যাৎ ( উদ্দেশ্য) হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে করোনাত্তোর-করোনাপূর্ব অর্থনৈতিক শক্তি ও সামর্থ্য পুনরুদ্ধারকালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামায় সঙ্কটে পৃথিবীর তাবৎ অর্থনীতি। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে সঙ্কট যতটা না বাইরের দ্বারা প্রভাবিত, তার চাইতে অভ্যন্তরে সূচিত সমস্যা বেশি এবং সে কারণে সঙ্কট উত্তরণে ঘরের ভেতর থেকে আসা উচিত উদ্যোগ। অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যা, আর্থিক খাতের সমস্যা, ব্যবস্থাপনার সমস্যা- এ সব সমস্যা মোকাবেলায় নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা যেভাবে করছে, সেটিকে আরো পরিশীলিত অবয়বে আনার আবশ্যকতা রয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায়, একই সমতলে, জাপান পড়েছিল গেল শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে। আশির দশকে জাপানি অর্থনীতিতে যে পরিসম্পদ ফানুস তৈরি হয় নব্বইয়ের দশকে এসে তা ফেটে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা ও অর্থনৈতিক টানাপড়েনের পর্বে প্রবৃদ্ধির মাত্রা নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম জাপানে আবার অব্যাহত মূল্যহ্রাসের কবলে পড়ে। অর্থনীতির সূচকগুলো একটি হতাশাজনক পরিস্থিতি নির্দেশ করে এবং সর্বত্র একটি নৈরাশ্যের ছায়া দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তবু এ সময়ে অনেকে মনে করেন, জাপান এখনো উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে টিকে আছে। আবার কেউ এটিও বলাবলি করতে থাকেন, অদূরে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তাদের মতে, তথাপিও তখনো বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি তলে তলে ভালোও করছিল। কিন্তু সার্বিকভাবে সবার ধারণা এই দাঁড়াল যে, নব্বই দশকের শেষ এবং ২০০০-এর প্রথম ভাগে জাপানি অর্থনীতি যেন একটি অপয়া অবস্থানে, অনেকে মনে করেন পুরো নব্বই দশকটাই ছিল জাপানের হারানোর দশক। স্বাভাবিকভাবে সবার কাছে এ প্রশ্ন এসে ঠেকে যে, ‘অর্থনৈতিক মন্দা’ এতটা কাল কেন অবস্থান করছে এবং এর ক্রান্তিকাল কেন শেষ হচ্ছে না। অর্থনীতির এরূপ স্থবিরতায় সংস্কারের কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে কি হবে না- এটি সবার কাছে ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে অভিমত রাখলেন, যতই বেদনাদায়ক হোক; মন্দার মাহেন্দ্রক্ষণে সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়াটাই যুক্তিসঙ্গত হবে। আবার কেউ বলেন, মন্দার মতো অসুস্থ বা স্থবির পরিস্থিতিকে সংস্কারের ছুরি চালালে হিতে বিপরীত হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কইজুমির সরকার ২০০১ সাল থেকে সংস্কার কর্মসূচিকে এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেন। কইজুমির সরকার ডাক বিভাগকে ব্যক্তি খাতে দেয়া, ব্যয়বহুল হাইওয়ে নির্মাণে ক্ষান্ত দেয়া, পেনশন সংস্কার, স্থানীয় সরকারপদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এবং আবশ্যক ব্যাংক খাতে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রযুক্তি মন্দা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রসার ২০০১ সালের শুরুতে কইজুমি সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে বাদ সাধে। যাই হোক, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে দেখা গেল অর্থনীতির সূচকগুলো মোটামুটি সুস্থতার দিকে এবং সংস্কারের সত্যিকারের ফল ফলতে শুরু করে বলে প্রতীয়মান হয়। ২০০৫ সালে কইজুমি তার নিজ দলে বিরোধিতাকারীদের রাজনৈতিকভাবে ‘সাইজ’ করতে সক্ষম হলেও সরকারের সংস্কার কর্মসূচিগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ে ২০০৬ সালের দিকে এসে। প্রশ্ন উঠতে থাকে, এ সংস্কার জাপানি অর্থনীতির সার্বিক পুনর্জাগরণে কতটুকু ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। দেখা গেল, কইজুমি সরকারের সংস্কার কর্মসূচি মূলত দেশে অভ্যন্তরস্থ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিমিতি বোধের বিকাশ ঘটানোয় নিবেদিত। বলা হলো- হ্যাঁ, এরও প্রয়োজন ছিল বা আছে কিন্তু বৈশ্বিক পরিবর্তন প্রেক্ষাপটে জাপানি অর্থনীতি বিশেষ করে এর বহির্মুখিতার ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা বিবেচনা করা দরকার। দেখা গেল কিংবা মনে হয় সরকার অর্থনীতির বহির্খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খুব একটা পাবঙ্গম নয়, এ ব্যাপারে তাদের নেতৃত্ব দুর্বলতা কিংবা অপারগতা রয়েছে। দেখা গেল, প্রয়োজনীয় এ মুহূর্তে চীনের স্বার্থে উৎপাদনমুখী সম্পর্ক সংস্থাপনে ইস্ট এশিয়া উৎপাদন বলয়কে পুনর্জীবিতকরণ, ডব্লিউটিও ও এফটিএতে জাপানের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ, বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় জাপানের অভ্যন্তরীণ শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দানের ক্ষেত্রে সরকারের যোগ্যতর দক্ষতা নেই। দেখা গেল, সরকার সংশ্লিষ্ট আমলাদের গতানুগতিক কর্মতৎপরতার জালে বন্দী- উপর থেকে নীতি ও নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে তৎপরতা শীতল। একটি পরিমিতি ও পরিশীলিত সরকার ভালো তবে সঙ্কটে নিমজ্জিত একটি অর্থনীতিকে টেনে তোলার জন্য দরকার বলিষ্ঠ নীতি ও নির্দেশনাদানকারী নেতৃত্ব। শিল্প উৎপাদন ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় যদি প্রকৃত পরিবর্তন সূচনা না হয় তাহলে ডুবতে বসা এ তরী টেনে ক্ষমতাসীন দল এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে নীতি নির্দেশনার ক্ষেত্রে দূরত্বটাও একটা কাল হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু যেহেতু কইজুমির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে সেহেতু পার্টির পুরাতন বসরা বাধ্য হয়ে কইজুমির ধ্যান-ধারণা বা কর্মসূচিকে অনিচ্ছা ও দ্বিমত সত্ত্বেও সমর্থন দিতে বাধ্য হচ্ছেন নিজেদের গদি রক্ষার্থে। এর সুবাদে কইজুমি ক্ষমতায় শুধু টিকেই যাচ্ছেন না- নতুন নতুন নীতি ও কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যান।
১৯৮০ সালের প্রথম থেকে জাপানি স্টক মূল্যসূচক বাড়া শুরু করে এবং দশক শেষ হওয়া পর্যন্ত তা ১৯৮০-এর মূল্যমানে প্রায় পাঁচগুণ বাড়ে। এরপর নব্বইয়ের দশকে এই মূল্য নিম্নগামী হতে হতে একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছে। আশির দশকে জমির দাম ক্রমশে বাড়তে বাড়তে আকাশচুম্বী হয়। সব জমির দাম গড়ে দ্বিগুণ তিনগুণ বাড়ে। ১৯৯১ সালের পর থেকে জমির দাম নামতে নামতে নাজুক পর্যায়ে চলে আসে। গ্রামের জমির তুলনায় শহরের জমির দাম বাড়েও যেমন বেশি, নামেও তেমন বেশি। এ অ্যাসেট বাবলের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে দুটো ধারণা বলবৎ পাওয়া যায়-
১. ব্যাংক নীতির পরিবর্তনজনিত কারণে অ্যাসেট বাবলের বিকাশ। অতীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কড়াকড়ি আইনে ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রিত হতো। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সৃজনশীল বা উৎপাদনমুখী কর্মসূচি নেয়ার এখতিয়ার ছিল না বটে, তবে তাদের মুনাফা ও বিপদে ত্রাণ প্রদান করার নিশ্চয়তা ছিল। আশির দশকে পূর্বতন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তিরোহিত হয়। এরপর ব্যাংকগুলোর মধ্যে কে আগে বড় হবে কিংবা অন্যকে ল্যাং মেরে কে গ্রাহক ভাগাতে পারে- এ ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। অধিক মুনাফার লোভে ব্যাংক এবং এর গ্রাহকরা সাধারণ অর্থনৈতিক বিনিয়োগের পরিবর্তে ডেড স্টক বা সম্পত্তিতে বিনিয়োগের প্রবণতায় ঝুঁকে পড়ে। এর ফলে ব্যাংকগুলো বড় কোম্পানিগুলো থেকে ব্যক্তি ও ছোট ব্যক্তি খাতকে জমি কেনার মতো অনুৎপাদনশীল খাতে অর্থলগ্নির জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার পন্থা অবলম্বন করে।

কিন্তু বিপুলসংখ্যক মধ্য ও নিম্নপর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দেয়ার মতো যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে ব্যাংকগুলোর দক্ষতা তেমন না থাকায় অপাত্রে ও অযোগ্য খাতে ঋণ প্রবাহিত হয়। ব্যাংকগুলো বড় বড় কোম্পানির সাথে লেনদেনে নিমগ্ন ও অভ্যস্ত হওয়ায় এসব ঋণগ্রহীতাদের হ্যান্ডেল করতে যথা মনোযোগ দিতে পারে না। ফলে ব্যাপক ঋণ চলে যায় অলাভজনক কিংবা অদক্ষ বিনিয়োগকারীর হাতে। বাবল বার্স্ট হওয়ার পর দেখা গেল, খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাহাড় সমান এবং আদায় অযোগ্য।
২. দ্বিতীয় ধারণা বাবলের মনিটারি সম্প্রসারণ সংক্রান্ত। আশির দশকে তহবিলের সহজপ্রাপ্যতা জমির মূল্য বৃদ্ধিজনিত বাবল-এর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ১৯৮৫ সালে ইয়েনের মূল্য হঠাৎ চড়া হয়ে গেলে তাকে নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক অব জাপান স্বল্পমেয়াদি সুদের হ্রাস করে এবং মুদ্রা সরবরাহ সহজ করে দেয়। প্রথাগতভাবে যখন ইয়েনের মূল্য বাড়ে তখন ব্যাংক অব জাপান সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি অবলম্বন করে থাকে। ১৯৮৫ সালে এবং তার পরের বছরগুলোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত এ পথ বেছে নেয়। কিন্তু এর তীব্র সমালোচনা হয় ব্যাংকের গভর্নর সাতোশি সুমিতার বেশি দিন ধরে বড্ড বেশি হালকা মুদ্রানীতি অনুসরণের জন্য। যেহেতু মূল্যস্ফীতি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে ব্যাংক অব জাপানের পক্ষে কঠোর মুদ্রানীতি অবলম্বনের সুযোগও সীমিত হয়ে আসে। এর ফলে জমির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং কিছু পক্ষ তার ফায়দা লুটতে থাকে। এটি ছিল সমস্যার পূর্বাভাস নির্ধারণের সমস্যা যখন স্থায়ী পরিসম্পদের দাম বাড়ছে হুহু করে, অথচ দ্রব্যমূল্য মোটামুটি স্বাভাবিক- তখন লিক্যুইডিটি বাড়ছে কি বাড়ছে না তা বোঝা দরকার ছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ব্রড মানি ১৯৮৭-৮৯ সময়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে; এটি ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে-এমন এক অর্থনীতির জন্য একটু বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি বলে প্রতীয়মান হয়। ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে, ব্যাংকের নতুন গভর্নর ইয়া সুমি মিয়েনো ইচ্ছা করে যেন লাগাম টেনে ধরলেন এবং সুদের হার বাড়িয়ে দিলেন। ফলে হঠাৎ করে বাবল থেমে গেল। অনেকে মিয়েনোর এ নির্দয় আচরণকে সমালোচনা করেন ঠিক কিন্তু প্রশ্ন তো থেকে যায়, এভাবে বাবল কতদিন থাকা যুক্তিযুক্ত হতো। যৌক্তিকতা বাবলকে এক সময় থামতে হতো, থামাতে হতো। ফলে শুভস্য শীঘ্রমের পথ বেছে নিয়েছিলেন মিয়েনো। ব্যাংকগুলোর অদক্ষতায় অস্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ ও সহজভাবে মুদ্রা সরবরাহ- এ দুই নীতি বা পরিস্থিতিকে বাবলের বিকাশের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। এ দুই অবস্থায় আবর্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আর্থসামাজিক পথপরিক্রমা জাপানি অর্থনীতিকে একটি অপার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে পশ্চাৎযাত্রীতে পরিণত করে।

অন্য ব্যাখ্যায় বলা হয়- আসলে জাপানি অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা ক্রমে অকেজো বা অচল হয়ে পড়েছে। ’৫০ ও ’৬০-এর দশকে জাপানি অর্থনীতির কয়েকটি মৌলিক ব্যবস্থাপনা যেমন আন্তঃখাতগুলোর সংযোগ সূত্র, জীবনব্যাপী কর্ম সুযোগ, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে মজুরি, কিউরেৎসু গ্র“প, সাব কন্ট্র্রাকটিং ইত্যাদি ভালো কাজ করলেও আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে এসব ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে দাঁড়ায়। কেউ মনে করেন, জাপান তৃতীয় পুনরুত্থানের (প্রথম মেইজি যুগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর) পথে আছে। তবে অন্যরা বলেন, জাপানের উচিত হবে না বিনাবাক্যে আমেরিকান পদ্ধতিতে যাওয়া- কেননা, জাপানের কিছু নিয়ম-কানুন এখনো কার্যকর ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
আরেক ফরানার মতে, জাপানি সমাজে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন প্রবণতা এ অবস্থার জন্য দায়ী। জাপানি সমাজ এখন বয়োবৃদ্ধতার ভারে ন্যুব্জ আর সরকারি ঋণের বাড়াবাড়ি। জাপানিরা এখনো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ সন্দিহান ও উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে করের বোঝা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধিতে, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা সুরক্ষা ও পেনশন স্কিম অব্যাহত থাকা নিয়ে। এ নেতিবাচক মনোভাব কনজ্যুমার ব্যয়ে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগে বেশ বাধার সৃষ্টি করে চলছে।
সম্ভবত উপরোক্ত পরস্পর প্রযুক্ত কারণগুলো জাপানি অর্থনীতির তৎকালীন মন্দার জন্য কমবেশি দায়ী। কিন্তু এসবের ওপর মূল কারণকে আড়াল করা যাবে না তা হলো নেতৃত্বের দুর্বলতা বা শূন্যতা। দুঃখের বিষয়, সরকারের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্বে এমন কোনো নেতা আসেন না যিনি পুরো সমস্যাকে অনুধাবন করে তা সমাধানে বা উত্তরণে কার্যকর ও যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারতেন। উপযুক্ত বাক প্রতিমায় সব পক্ষকে আস্থায় এনে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়াতে নিষ্ঠাবান হতে পারতেন। জাপানের সমস্যাটি এশীয় ক্রাইসিস কিংবা বিশ্বব্যাপী মন্দাক্রান্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় কিন্তু ভিন্ন ছিল। জাপানি সমাজে সৃজিত অনিশ্চয়তার মনোভাবকে কাটিয়ে উঠতে ‘সমস্যা’ সমাধানের ব্যাখ্যা চাইতে নেতৃত্বের আবির্ভাব সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত। গুণসম্পন্ন জাপানি জনগণ সরলীকরণে এ ধারণা পোষণ করে যে, সরকারগুলো যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে অপারগ ছিল।
লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং জাপানে বাংলাদেশের সাবেক বাণিজ্যিক দূত