Naya Diganta

‘সারাদিনের রোজগার দিয়ে চাল কিনলে ডাল হয় না, ডাল কিনলে বাজার হয় না বাপু’

মজিদা বেওয়া

চাল কিনলে ডাল হয় না, ডাল কিনলে বাজার হয় না বাপু (বাপজান)। আগে সারাদিন ঘুরে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ টাকা রোজগার হতো। এখন এক শ’ থেকে দেড় শ’ টাকায় পাওয়া যায় না। মানুষ আগে পাঁচ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ভিক্ষা দিতো, কিন্তু সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো ভিক্ষা দেয় না। এখন এক টাকা, দুই টাকা করে ভিক্ষা দেয়। সারাদিন যে রোজগার হয় তা দিয়ে চাল, ডাল কেনা, বাজার-সদাই করা, এরপর ওষুধ কেনা আর কুলানো যাচ্ছে না!

কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছরের বিধবা মজিদা বেওয়া। তিনি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার চকাদিন গ্রামের মৃত ময়েজ শেখের মেয়ে।

মজিদা বেওয়া জানান, রাজশাহীর পুঠিয়ায় সতীন থাকা ঘরে বিয়ে হয়েছিল তার। কিছুদিন সংসার করার পর স্বামী-সতীনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় সাত মাসের সন্তান কোলে নিয়ে ৩৫ বছর আগে ছাড়াছাড়ি হয়। তারপর থেকে বাবার বাড়িতে থাকেন। সন্তানের কথা ভেবে আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। ধীরে ধীরে সন্তান বড় হলে স্থানীয় স্কুলে প্রাইমারী পর্যন্ত পড়ালেখা করিয়েছেন। ইচ্ছে ছিল সন্তানকে পড়ালেখা দিয়ে মানুষের মত মানুষ করবেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সন্তানকে প্রাইমারি পাশ করানোর পর আর পড়ালেখা দিতে পারেনি।

ছেলে বড় হয়েছে। বিয়ে করেছে। জীবিকার তাগিদে নওগাঁ একটি খাবারের হোটেলে শ্রমিকের কাজ করেন। কিন্তু হোটেল থেকে যে মজুরি পান তা দিয়ে ছেলের চারজন সন্তান, স্ত্রী এবং তাকে ভরণ পোষণ করা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে মর্জিনা বেওয়া গত দুই বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন।

তিনি আরো বলেন, বাবার যতটুকু সম্পদ ছিল ভাইয়েরা তা লিখে নিয়েছেন। তাই বাবার বাড়িতেও জায়গা হয়নি। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী আলি হোসেনের বড়িতে থাকেন। গত দেড় বছর আগে ভিক্ষা করতে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটানায় হাত-পা ভেঙে যায়। কোনো রকমে চিকিৎসা করে একটু একটু করে চলাচল করতে পারেন। সকাল হলেই পেটের দায়ে হাত-পায়ের ব্যথা নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হন। সারাদিনের যে রোজগার হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে কোনো রকমে জিবিকা নির্বাহ করেন।

মজিদা বেওয়া বলেন, সরকারিভাবে নাকি ভিক্ষুকদের সাহায্য করে। কিন্তু আমাকে কেউ কিছু দেয়নি। কয়েক মাস আগে আমাকে বয়স্ক ভাতার একটা কার্ড করে দিয়েছে। ওই টাকা দিয়ে ওষুধপত্র কিনতেই শেষ হয়ে যায়। মজিদা বেওয়া সরকারিভাবে সহায়তা কামনা করেছেন।

রাণীনগর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হুসেইন বলেন, উপজেলার অনেক ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবারো একটি তালিকা করা হচ্ছে। তাকেও পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে।