গ্রেট নিকোবরে ভারতের নতুন মেগা বন্দর
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
ভারত মহাসাগর লাগোয়া গ্রেট নিকোবর দ্বীপে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার খরচ করে একটি ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর’ ও সেই সাথে বিমানবন্দর, টাউনশিপ, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিরাট একটি হাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। বাংলা ট্রিবিউন।
বলা হচ্ছে ‘গ্যালাথিয়া বে’ নামে এই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর বাংলাদেশ ও ভারতসহ পুরো বঙ্গোপসাগরে নৌবাণিজ্যের চেহারাই পাল্টে দেবে বলে বলা হচ্ছে। তবে পরিবেশবাদীরা অনেকেই এই মেগা-প্রকল্পে তীব্র আপত্তিও জানাচ্ছেন।
যাবতীয় বিরোধিতা উপেক্ষা করে গত শুক্রবার ভারত সরকারের বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই ‘গ্যালাথিয়া বে’ প্রকল্পের জন্য ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ (আগ্রহপত্র) আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে এই মর্মে পরদিন (২৮ জানুয়ারি) বিজ্ঞাপনও প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই ‘গ্যালাথিয়া বে’ প্রকল্প নিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে কোনো আলোচনা করেছে কি না তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। এই প্রকল্পে ভারতের কলকাতা-হলদিয়া, ভাইজাগ বা চেন্নাই বন্দরের পাশাপাশি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দরও দারুণ লাভবান হবে বলে ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করছেন, কিন্তু বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে তাদের কথাবার্তা হয়েছে কি না এই প্রশ্নের উত্তর তারা এড়িয়ে গেছেন। তা ছাড়া থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার মতো আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশেরই এই প্রকল্পটি নিয়ে আপত্তি আছে।
সার্বিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে স্পষ্ট, ‘গ্যালাথিয়া বে’ ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে অচিরেই তীব্র আলোড়ন ফেলতে যাচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের পক্ষে-বিপক্ষে কী যুক্তি, এই প্রতিবেদনে সেটাই দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্যালাথিয়া বে-তে (উপসাগর) এই ধরনের হাব গড়ে তোলার পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে : এই দ্বীপটি দুনিয়ার অন্যতম ব্যস্ত আন্তর্জাতিক শিপিং রুটের খুব কাছে, মাত্র ৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে। এই রুট দিয়ে প্রতি বছর কম করে ৩৫ হাজার জাহাজ চলাচল করে।
এখানে ‘ড্রাফট’ খুব ভালো, কারণ গ্যালাথিয়া বে-তে সমুদ্রের প্রাকৃতিক গভীরতাই ২০ মিটার। এর ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অনেকগুলো বন্দর- ফলে সেই সব বন্দরের জন্য গ্যালাথিয়া বে থেকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট কার্গো’ আহরণের সম্ভাবনাও বিপুল।
বন্দরের খুব কাছেই গড়ে তোলা হচ্ছে গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট, আধুনিক উপনগরী ও পাওয়ার প্ল্যান্ট। অবকাশ থাকছে শিপইয়ার্ড ও সংশ্লিষ্ট শিল্প গড়ে তোলারও। সব মিলিয়ে চারটি ধাপে মোট ৭২০০০ কোটি ভারতীয় রুপি খরচ করে পিপিপি মডেলে এই মেগা প্রকল্প গড়ে তোলা হবে বলে স্থির হয়েছে। কলকাতা-হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে প্রথম ধাপের জন্য আগ্রহপত্র জমা দিতে হবে মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই।
গ্যালাথিয়া বে নিয়ে আপত্তি কোথায়?
গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডে এই মেগা ইনফ্রা-প্রকল্প পরিবেশের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা যাচাই করতে ভারত সরকার গত বছরই একটি পাবলিক কনসালটেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। বহু পরিবেশবাদী সংগঠন, এনজিও, গবেষক ও বিশিষ্ট নাগরিক তখন থেকেই বলে আসছেন এই ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট একটি বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনবে।