Naya Diganta

আ’লীগ কখনো পালায় না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন : বাসস


আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছে। জিয়া, খালেদা জিয়া কেউ এ দেশের মানুষের খাদ্যের কথা চিন্তা করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বলছে আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। গতকাল বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল আজকে অনেক কথা বলছে। আবার বলছে আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। আমি বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দিয়েছিল দেশে আসতে। আমি বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছিলাম। ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখনো আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল, তার বাচ্চা হয়েছিল, তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছিলাম যাবো, এই কেস মোকাবেলা করব। দেশে ফিরে এসেছি শুধু মানুষের কথা চিন্তা করে।


শেখ হাসিনা বলেন, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না, পালায় আপনাদের নেতারাই। বিএনপির নেতারা কে? তারা নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সে অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তারপর চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে উন্নত করতে। তিনি বলেন, এই রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর কলকারখানা করে দেন। এরপর সব বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ বন্ধ কারখানা চালু করতে কাজ করে। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাঁধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দিই। এই রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে রাজশাহীর মানুষের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। এমনকি খালেদা জিয়া ও তারেক কোকোর মাধ্যমে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। তাদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে দেশবাসীকে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করারও আহ্বান জানান।


জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাতটিসহ মোট ২৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার প্রকল্প ব্যয় প্রায় ১,৩১৬ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা। তিনি ৩৭৬ দশমিক ২৮ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়ে নির্মাণাধীন আরো ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি ক্রসিং সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে রাজশাহী নগরীতে শেখ রাসেল শিশু পার্কের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। প্রায় ২০ কোটি আট লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দফতর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্রায় ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মোহনপুর উপজেলায় ২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ২২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় রাজশাহী শিশু হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।


জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, আমরা পালাব না। প্রয়োজনে মির্জা ফখরুলের বাসায় উঠব। তিনি বলেন, বিএনপি এখন সরকারকে পালাতে বলে। সরকার নাকি পালানোর পথ খুঁজে পাবে না! এ সময় বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব পালিয়ে তো আছেন আপনারা। তারেক রহমান আর রাজনীতি করবে না, মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে আছে। দণ্ডিত পলাতক আসামি আপনাদের নেতা। আমরা পালাতে জানি না।
এ দিকে বেলা ৩টা ১২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভা মঞ্চে উঠলে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় তিনি হাত উঁচিয়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন। এরপর বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি একটি হেলিকপ্টারে করে রাজশাহী পুলিশ লাইনস মাঠে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে জনসভাস্থলে পৌঁছান।


দুপুর ১২টায় মাদরাসা মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। এরপর স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের অন্তত ৩০ জন নেতা বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সংসদ সদস্য মনসুর রহমান, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আ’লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, রাজশাহী জেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, সংসদ সদস্য এনামুল হক, আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। সভা পরিচালনা করেন মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
এতে বক্তারা বলেন, ১০ বছর আগে তারা যে রাজশাহী দেখেছেন, সেই রাজশাহী এখন নেই। এখন রাজশাহী বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বিএনপি সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিয়েছিল, ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সরকারের পতন হবে। সরকারের পতন হয়নি, পতন হয়েছে বিএনপির।


সারদায় কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দিতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণ যেন বিপদে পুলিশকে তাদের পাশে পেয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারে। মানুষ যেকোনো বিপদে পড়লে পুলিশকে পাশে পেলে তারা যেন অন্তত আশ্বস্ত হয়। গতকাল বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের আমি অনুরোধ করব বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়তে চেয়েছিলেন তা গড়ার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা চাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে, বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠী সাথে সাথে আমাদের পুলিশ বাহিনীকেও স্মার্ট পুলিশ বাহিনী আমরা গড়ে তুলতে চাই।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অ্যাড. আইজিপি) আবু হাসান মুহাম্মদ তারেক তাকে অভ্যর্থনা জানান। চৌকস পুলিশ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।


অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে চড়ে পাসিং আউট প্যারেড পরিদর্শন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ এবং সেরা প্রবেশনারি এএসপিদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
১২ জন মহিলাসহ ৯৭ জনের শিক্ষানবিস এএসপি এক বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণে অংশ নেন। পরীক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশ সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সনদও পেয়েছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে এএসপি মো: জাহাঙ্গীর কবির ‘সেরা একাডেমিক’ পুরস্কার, এএসপি মো: সাজ্জাদুর রহমান ‘বেস্ট হর্সম্যানশিপ’, এএসপি শুভ্র দেব ‘বেস্ট ইন ফিল্ড প্রবেশনার’ এবং এএসপি মো: রাসেল রানা ‘সেরা শুটার’ এবং সাকিবুল আলম ভূঁইয়া ‘বেস্ট প্রবেশনার’পুরস্কার পেয়েছেন।