Naya Diganta

টঙ্গিবাড়ীতে জৈব সার ও বালাইনাশকে ফলছে নিরাপদ সবজি

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার করে আবাদ করা সবজি ক্ষেত : নয়া দিগন্ত

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পরিবেশবান্ধব জৈব সার ও জৈব বালাই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ সবজির আবাদ করা হচ্ছে। উপজেলার বেতকা ইউনিয়নে ১০০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে সবজির ফলন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৮-২০ ভাগ বেশি হচ্ছে। ক্ষতিকারক কীটনাশক ছাড়া উৎপাদন হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এ সবজির চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে বেতকা ইউনিয়নের দক্ষিণ রায়পুর, দক্ষিণ বেতকা, উত্তর রায়পুর ও কান্দাপাড়াসহ চাঙ্গুরি গ্রামের প্রায় ১০০ একর জমিতে নিরাপদ সবজির চাষাবাদ শুরু হয়েছে। জৈব সার ও জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে বেগুন, টমেটো, ক্ষীরা, শসা, ফুলকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও শিমসহ বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আলম তালুকদার বলেন, মাটির উর্বরাশক্তি বাড়াতে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যাবহারের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অপর দিকে সবজির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।
দক্ষিণ বেতকা এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, জৈব সার ও জৈব বালাই পদ্ধতিতে ৪২ শতাংশ জমিতে পাঁচ হাজার ফুলকপি আবাদ করেছেন তিনি। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি কপি উৎপাদনে মাত্র সাত-আট টাকা খরচ হয়েছে। বিষক্রিয়া ও রাসায়ানিক মুক্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসে জমি থেকেই প্রতিটি কপি ২৫-২৭ টাকা করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সব খরচ বাদে খুব ভালো লাভ হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন লিপু দীর্ঘদিন মালাশিয়ায় শ্রমিকের কাজ করতেন। দেশে ফিরে তিন ছর ধরে সবজি চাষ করছেন। লিপু বলেন, এবারই প্রথম জৈবসার ও জৈবসার কীটনাশক দিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটো, শসা, ক্ষীরা চাষ করেছেন।
একই এলাকার কৃষক স্বপন খান জানান, এবার প্রথম জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে প্রায় ৮৪ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছেন। তবে স্থানীয়রা বিষমুক্ত সবজির বিষয়টি জানেন না। তাই বিষমুক্ত সবজি চাষের বিষয়টি সর্বসাধারণের মাঝে বেশি বেশি প্রচার করা হলে চাহিদা ও বিক্রি বাড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, মানুষ এখন নিরাপদ খাবারের দিকে ঝুঁকছে। মুন্সীগঞ্জ সদরের বজ্রযোগনী ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেতকা ইউনিয়নে নিরাপদ সবজির ব্যাপক আবাদ শুরু হয়েছে। ঢাকার সেচ ভবনে মুন্সীগঞ্জ থেকে সবজি যাচ্ছে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমেছে। অন্যদিকে এসব সবজির দাম একটু বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে নিরাপদ সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।