Naya Diganta

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারি

সাম্প্রতিক ঘটনাটি দিয়েই শুরু করি। ঘটনাটি নজিরবিহীন এবং অস্বাভাবিক। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত পদটি খালি আছে। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বর্তমান রাষ্ট্রদূত তৌহিদুল ইসলামকে ভিয়েনায় নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ভিয়েনা তাকে গ্রহণ করতে রাজি নয়। বেশ কয়েক বছর আগে ইতালির মিলানে কন্সাল জেনারেল ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। তখন তার বিরুদ্ধে অধীনস্থ এক নারী সহকর্মীর সাথে অসৎ আচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল, তার বিরুদ্ধে। সেই বিষয়ে প্রশ্ন ছিল অস্ট্রিয়ার। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তৌহিদকে প্রত্যাখ্যানের পেছনে সেই অভিযোগ অন্যতম কারণ হতে পারে। তাকেই সেখানে নিয়োগ দেয়ার জন্য গত ছয় মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই কারণে সেখানে আপাতত নতুন কোনো রাষ্ট্রদূত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর এক অনুরোধপত্র পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তাতে তিনি বলেছেন, জনাব ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিস্তৃত তদন্ত করে তাকে প্রমোশন ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এই ঠিঠিতেও মোমেন যথারীতি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের এলোমেলো ও ভিত্তিহীন সংবাদের ভিত্তিতেই অস্ট্রিয়া জনাব তৌহিদকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে।

নিজের অযোগ্যতা ও অক্ষমতা ঢাকার জন্য মোমেন সাধারণত গণমাধ্যমকেই দোষারোপ করে থাকেন। গণমাধ্যম কেন বিদেশী কূটনৈতিকদের প্রশ্ন করে সে বিষয়ে তিনি প্রায়ই উষ্মা প্রকাশ করেন। এই যেমন, সম্প্রতি শাহীনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলার চেষ্টা সম্পর্কে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করে তাদের বিরূপ বক্তব্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। সেই জন্য তারা এত কথা বলার সুযোগ পান। আপনারা যদি তাদের সাথে কথা না বলতেন, তাহলে তারা বাসায় বসে হুক্কা খেতেন। এ ধরনের কথা যেমন কূটনীতিক সুলভ নয়, তেমনি শোভনও নয়। অপর দিকে গণমাধ্যম কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে সে বিষয়েও তার বিন্দু মাত্র ধারণা আছে বলে মনে হলো না। যেখানে ব্যর্থতা সেখানেই গণমাধ্যমের ওপর দোষারোপ করার চেষ্টা মোমেনের ‘ঢং’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তৌহিদুল ইসলামের সাথে মোমেনের কী সম্পর্ক সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই। কিন্তু তৌহিদকে অস্ট্রিয়ায় পোস্টিংয়ের জন্য তিনি নিজের এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক নিচে নামিয়ে ফেলেছেন। তৌহিদকে গ্রহণ করার জন্য অস্ট্রিয়ার ইউরোপিয়ান ও আন্তর্জাতিক অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তা সত্ত্বেও তৌহিদকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি ভিয়েনা। তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি কোনো জবাবও দেয়নি। তার পরও সেখানে নতুন কোনো রাষ্ট্রদূতের নাম প্রস্তাব করলে সেটা হবে চরম বিব্রতকর।

তৌহিদের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যে সাফাইয়ের ঘটনা, কূটনীতির ইতিহাসে মোটামুটি বিরল ঘটনা। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন অস্ট্রিয়ার ফেডারেল মিনিস্টারকে লেখেন, ‘মহোদয়, আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, অস্ট্রিয়াতে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মো: তৌহিদুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টি আপনার বিবেচনায় রয়েছে। তার নিয়োগ প্রস্তাব (এগ্রিমো) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সম্মানের সাথে নিম্নোক্ত পয়েন্টগুলো তুলে ধরছি।’ মন্ত্রী লিখেছেন, ‘বহু পক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় কূটনীতিতে অভিজ্ঞ তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কূটনীতিকদের অন্যতম। এ কারণে অস্ট্রিয়ার জন্য তাকে বাছাই করা হয়েছে। নিউইয়র্কে তিনি আমাদের জাতিসঙ্ঘ মিশনে দীর্ঘ চার বছর আমার সাথে (মোমেন তখন জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন) কাজ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাকে দক্ষ এবং সফল কূটনীতিক হিসেবে আমি নিজে তত্ত্বাবধান করেছি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কূটনীতিতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন পরীক্ষায় তার ব্যাচে প্রথম। মিশন প্রধান হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেয়া বাংলাদেশের একটি বিশাল কাজ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নৈতিকতা বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যক্তিগত আচরণ এবং সার্ভিস রেকর্ডে বড় রকম পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তা তত্ত্বাবধান করে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বডি এবং সরকারের এজেন্সিগুলো। এর সব বাধা পাস করার পর রাষ্ট্রদূত তৌহিদ ইতালি ও চীনে মিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত দুই বছর ধরে তিনি সিঙ্গাপুরে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক ও মূল ধারার মিডিয়াকে পুঁজি করে যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে বেপরোয়াভাবে অভিযোগ উত্থাপন করতে পারে। অতীতে এসব মিডিয়া প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছেন আমাদের অনেক কর্মকর্তা।’


তিনি বলেন, ‘যাই হোক, এসব অভিযোগের প্রতিটিই মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়েছে। তাতে যদি দেখা যায়, এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অসত্য এবং ভিত্তিহীন তাহলেই তাকে পুনর্বাসন করা হয়। পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে তৌহিদও একই রকম জোরালো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তার বর্ণিল ক্যারিয়ারে সব বাধা অতিক্রম করেছেন। তাকে ডিরেক্টর পদ থেকে ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পরে তাকে চীন ও সিঙ্গাপুরে মিশন প্রধান করা হয়। তাই আমি তার উচ্চ নৈতিকতা ও আচরণের বিষয়ে নিশ্চিত। বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া উভয়ের মঙ্গলের জন্য তিনি ভিয়েনাতে উত্তম একজন রাষ্ট্রদূত হবেন। অস্ট্রিয়াতে রাষ্ট্রদূত তৌহিদ সম্পর্কে আর কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে আমি যেকোনো সময় আনন্দের সাথে তা সরবরাহ করব। এমন একজন প্রতিশ্রুতিশীল রাষ্ট্রদূতকে সুযোগ দেয়ার জন্য আপনার সদয় দিকনির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছি যাতে তিনি প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন এবং অস্ট্রিয়াতে স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সম্মানের সাথে কাজ করতে পারেন।’

যখন কোনো রাষ্ট্র কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তখন মোটামুটি ধরেই নেয়া যায় যে, বিষয়টি ফাইনাল। সেখানে মন্ত্রীর এই চিঠি হয় তৌহিদের প্রতি অতিরিক্ত প্রেম অথবা এক ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি। এতে মন্ত্রীর আত্মমর্যাদা বলে কিছু থাকে না। সেই সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়। মোমেনের সেই বোধ আছে বলে মনে হয় না। মন্ত্রীর এই চিঠি সত্ত্বেও রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ না করায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বীকার করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে হয়তো ভিয়েনা মোমেনের চিঠির জবাব দেবে না। আমরাও নতুন নাম পাঠিয়ে এখনই তাদের বিরক্ত করতে চাই না। মন্ত্রীর এই চিঠি বিষয়ে একাধিক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বিস্ময় প্রকাশ করেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমার ৩২ বছরের সার্ভিস জীবনে এমন চিঠি দেখিনি। এটা নজিরবিহীন ঘটনা।

তবে এখানেই শেষ নয়; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নারী কেলেঙ্কারি, যৌন হয়রানি, মাদক, মানব পাচার, প্রতারণাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে বিদেশী মিশনে কর্মরত বাংলাদেশী কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে। কিছু দিন পরপর গুরুতর এসব অভিযোগ উঠলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো নজির নেই। বরং যারা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে তাদের প্রায় প্রত্যকেই দ্রুতগতিতে পদোন্নতি ও পদায়ন পেয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে বিদেশে কূটনীতিকরা এখন অত্যন্ত বেপরোয়া।

সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত কাজী আনারকলির বিরুদ্ধে নিজের বাসায় মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে সেই দেশের সরকারের অনুরোধে আনারকলিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। শুধু তাই নয়, কূটনীতিক হয়েও নাইজেরিয়ান এক নাগরিকের সাথে লিভ টুগেদার করতেন আনারকলি। মারিজুয়ানা পাওয়ার পর কূটনীতিক হিসেবে আনারকলি দায়মুক্তি পেলেও তার নাইজেরিয়ান বন্ধু ইন্দোনেশিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আছেন। এই আনারকলি এর আগে লস এঞ্জেলেসে ডেপুটি কনসাল জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে গৃহকর্মী হিসেবে সাথে নেয়ার জন্য আবেদন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি গৃহকর্মী ছিলেন না। তিনিও ছিলেন আনারকলির বন্ধু। ফলে প্রথম দিকে তাকে ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। পরে অনেক চেষ্টা তদবির করে তাকেও নিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার তদন্ত না করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে লস এঞ্জেলেস থেকে জাকার্তায় পোস্টিং দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা যদি তদন্ত করা হতো এবং আনারকলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশকে লজ্জায় পড়তে হতো না।

২০১৩ সালে চীনের কুনমিনে বাংলাদেশ মিশনের কন্সাল জেনারেল শাহনাজ গাজীর সঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তির ‘বিশেষ সম্পর্কের’ অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে শাহনাজ গাজীকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। বর্তমানে তিনি তুরস্কের আঙ্কারায় বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভারতের আসামে একজন ভারতীয় নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তদানীন্তন সহকারী হাই কমিশনার কাজী মুনতাসির মোরশেদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ২০১৮ সালে। এর পর মোরশেদকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। আর ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের পরও তাকে পদোন্নতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আসামের ওই নারী গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরিচয়ের এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি তাকে দূতাবাসে ডেকে পাঠান মোরশেদ এবং সেখানে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন।

আরেক কূটনীতিক নূরে আলমের বিরুদ্ধেও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি ২০১৫ সালের। নূরে আলম তখন টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত। দূতাবাসের এক নারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। তিনি তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু সেই অভিযোগের তদন্ত তো দূরের কথা, উল্টো ঐ নারী কর্মীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর ২০১৯ সালে নূর আলমকে পদোন্নতি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বানানো হয়। নূরে আলম বর্তমানে তুরস্কের ইস্তামবুলে কন্সাল জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়া চলতি বছর কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে প্রথম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সানিউল কাদের। তার বিরুদ্ধেও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। কলকাতার আলীশা মাহমুদ নামে এক নারীর ভিডিও চ্যাট ও হোয়াটএ্যাপ আলাপের স্ক্রিন শট ফাঁস হওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। যৌন হয়রানি অভিযোগে ২০১১ সালে টোকিওতে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত একে এম মুজিবুর রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি একজন বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত। একজন জাপানি নারীকে যৌন হয়রানি করেন। কিন্তু মুজিবুর রহমানের কোনো শাস্তি তো হয়ইনি বরং তাকে ইরানের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু নৈতিক অবক্ষয় ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তাকে ইরান থেকেও প্রত্যাহার করা হয়।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিককে ২০০৯ সালে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেয় সরকার। দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ভারতের পতাকা নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ, নারী কেলেঙ্কারি, ভিসা দিতে হয়রানি, স্কলারশিপ দিতে ঘুষ এমনকি নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে নাক গলানোর অভিযোগ ওঠে। তিনি নেপালি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী মনীষী কৈরালার সাক্ষাৎ করতে তার বাড়িতে ধরনা দেন। আধা ঘণ্টা পর্যন্ত ফটকে দাঁড়িয়ে দেনদরবার করেন নিম চন্দ্র। তবে ফটক খোলা হয়নি। এ ছাড়াও কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ আছে ভূরি ভূরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ অবস্থা এই রকম লেজেগোবরে। এসব দেখার দায়িত্ব মন্ত্রীরও আছে। কিন্তু সেদিকে তার বিশেষ নজর আছে বলে মনে হয় না।

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com