Naya Diganta

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিজয় কিবোর্ডের কারণ জানালেন মন্ত্রী

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিজয় কিবোর্ডের কারণ জানালেন মন্ত্রী।

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারজাত করার সময় বাংলা লেখার বিজয় কিবোর্ডের বাধ্যবাধকতার কারণ জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার৷

মন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশে মোবাইল কেনার পর সবাই যেন বাংলা লেখার একটি উপায় সেখানে পায়, এবং সেটা যেন বিনামূল্যে হয়, সেটাই সরকার চায়৷ আর বিএসটিআই যেহেতু বিজয় কিবোর্ডকে ‘স্ট্যান্ডার্ড' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সে কারণে বিজয়ের কথাই বলা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশনায়৷

মোস্তাফা জব্বার প্রতিষ্ঠিত আনন্দ কম্পিউটার্স থেকেই ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয় বিজয় বাংলা কিবোর্ড ও সফটওয়্যার, যা পরে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি সফটওয়্যায়র হয়ে ওঠে৷ বিজয় কিবোর্ডের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন মোস্তাফা জব্বার৷

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর ভাষ্য, ‘মোবাইল কোম্পানিগুলোও এগুলো (সফটওয়্যার) ফ্রি পাবে৷ স্পষ্ট, শতভাগ ফ্রি পাবে, বিজ্ঞাপন বা কিছুই থাকবে না৷ ব্যবহারকারী পুরো বিনামূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারবে৷ এই ঘোষণায়, এই নির্দেশনায় মোস্তাফা জব্বার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কিছু নেই৷'

আমদানিকৃত ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সকল অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় সফটওয়্যার থাকা বাধ্যতামূলক করে গত শুক্রবার বিটিআরসির তরফ থেকে ওই নির্দেশনা জারি করা হয়৷ সেখানে বলা হয়, বিজয় অ্যান্ড্রয়েড প্যাকেজ কিট (এপিকে) ইন্সটল করা ছাড়া কোনো স্মার্টফোন বাজারজাত করার অনুমতি দেয়া হবে না৷

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠিও দিয়েছে বিটিআরসি৷ সেখানে বলা হয়, আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সব অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল ব্যবহারের লক্ষ্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বিজয় অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল সরবরাহ করা হবে৷

কমিশন থেকে স্মার্টফোন বাজারজাতকরণের অনুমতি নেয়ার আগে এপিকে ফাইলটি ইনস্টল করে তা প্রদর্শন করতে হবে, না হলে অনাপত্তি দেয়া হবে না৷

ওই নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,‘বিজয় নামটা ব্যবহার হয়েছে কী কারণে আমি জানি না৷ এখানে প্রমিত কোড বা কি-বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে৷ বাংলা লেখার পেটেন্ট কী হবে তা সেট করা আছে, সরকার ২০১৭ সালে সেটি করেছে৷ এটি মনে করবেন না যে মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী এটা করেছে৷ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০১৭ সালে এটিকে স্ট্যান্ডার্ড করেছে, যা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেয়েছে ২০১৮ সালে৷ এটি এখন নিঃসন্দেহে স্ট্যান্ডার্ড৷'

‘এখন সরকার তো চাইবে তার স্ট্যান্ডার্ডটাই ব্যবহার করা হোক৷ এটা স্ট্যান্ডার্ড৷ আপনি আইসিটি ডিভিশনের ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পাবেন, এটির পেটেন্ট... যা বিএসটিআই মানকৃত৷ আমি তো আপনাকে ফর্মুলাটাও বলে দিলাম, যা জাতীয় মান৷ তো সেই মান অনুসরণ করতে না বলে আমরা কি বলব যে যেটা আছে সেটাই ব্যবহার করেন?'

‘সরকার বহু বছর আগে একটি নির্দেশনা দিয়েছে মোবাইলফোনে বাংলার ব্যবহার করতে হবে৷ আমাদের যেগুলো ফিচার ফোন আছে সেগুলোতে অনেক আগেই বাংলার ব্যবহার বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু স্মার্টফোনের জন্য কোনো সলিউশন আগে ছিল না৷ এখন ২০১৭ সালে সরকার একটি প্রমিত কোড বা কিবোর্ড করেছে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে সফটওয়্যারও করা হয়েছে৷ বিজয়ের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন আছে, যে ভার্সনটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়৷ এখানে কোনো ব্যবসার বিষয় নেই৷`

এই বাধ্যবাধতায় ব্যবহারকারীদের কী সুবিধা হবে সেই প্রশ্নের উত্তরে জব্বার বলেন, `ব্যবহারকারীর দিক থেকে সে প্রথমত বিনামূল্যে একটি সফটওয়্যার পাচ্ছে, বাংলা লিখতে পারবে৷ এর বেশি আর কী সুবিধা এখান থেকে পাওয়ার আছে? আমরা বলেছি উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক তারা যেন সফটওয়্যারটা দিয়ে দেয়, যাতে ব্যবহারকারীর হাতের কাছে একটা বাংলা লেখার সফটওয়্যার থাকে এবং সেটা সে বিনামূল্যে পায়৷`

তবে সবাইকে বিজয়েই বাংলা লিখতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কোথাও দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী৷

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যবহারকারী ভিন্ন কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাতে তো কোনো বাধা নেই৷ ফোন হাতে নিয়ে (বিজয়) ডিলিট করে অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও আমাদের কিছু বলার নেই, সেটা তার খুশি৷ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তার কাছে বাংলা লেখার সফটওয়্যার বিনামূল্যে দেয়া, সরকার সেটাই করছে৷ কেউ যেন না বলতে পারে যে `আমি বাংলা লেখার কিছু পাইনি।'

তবে বিজয়ের আদলে সফটওয়্যার নির্মাণ বা ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই এই পেটেন্টের কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব স্বীকার করে তা করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে