Naya Diganta

পশ্চিম তীরে অভিযানের সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি সমির আসলামের লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে গ্রেফতার অভিযানের সময় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহত ব্যক্তিকে সামির আসলান (৪১) বলে শনাক্ত করেছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরো জানান, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গত বছরের শুরু থেকে এই অঞ্চলে প্রায় রাতের বেলা অভিযান চালাচ্ছে। এরই ধারাবিাহিকতায় তারা শেষ রাতের দিকে কালান্দিয়া শরণার্থী শিবিরে প্রবেশ করে এবং ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

নিহত আসলানের বোন নওরা আসলান বলেছেন, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী তার ভাইয়ের ১৮ বছর বয়সী ছেলে রামজিকে গ্রেফতার করতে রাত আড়াইটায় তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। রামজিকে সৈন্যরা নিয়ে যাচ্ছিল। তার বাবা তাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন, এসময় একজন ইসরাইলি স্নাইপার তাকে গুলি করে।

নওরা আরো বলেন, আসলানের স্ত্রী একটি অ্যাম্বুলেন্স কল করেছিলেন। কিন্তু ইসরাইলি সেনাবাহিনী চিকিৎসকদের প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। প্রায় ২০ মিনিট পরে আসলানকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা সম্ভব হয়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবারও অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান চালায়, জেনিনের ফ্ল্যাশ পয়েন্ট শহরের দক্ষিণে কাবাতিয়া গ্রামে প্রবেশ করে এবং শহরের একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী ২৫ বছর বয়সী হাবিব কামিল এবং ১৮ বছর বয়সী আবদেল হাদি নাজালকে গুলি করে হত্যা করেছে।

যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাসী হামলার’ পরিকল্পনার সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি মুহাম্মদ আলাউনাকে গ্রেফতার করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাবাতিয়ায় প্রবেশ করেছে।

সেনাবাহিনী বলেছে, ‘সৈন্যরা অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করেছে। একজন ব্যক্তি আলাউনার সাথে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, একজন বন্দুকধারী তার গাড়ির ভেতর থেকে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলেন। এছাড়া ইসরাইলি সৈন্যদের দিকে ঢিল ছুড়েছিল ফিলিস্তিনিদের একটি দল।’

তবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় কামিল কী করছিলেন তা স্পষ্ট করে বলেনি ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবারের মৃত্যুতে এই বছর পশ্চিম তীরে মোট ৯ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যার মধ্যে বুধবার পশ্চিম তীরে পৃথক ঘটনায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে ভূখণ্ডের উত্তরে সামরিক গ্রেফতার অভিযানের সময় একজন এবং দক্ষিণ বসতিতে একজন ইসরাইলি ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার পরে মারা যান।

ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি হামলায় ১৯ জন নিহত হওয়ার পর ইসরাইল গত বসন্তে তার সামরিক অভিযান জোরদার করে।

ইসরাইল বলেছে, এই অভিযানের উদ্দেশ্য ‘সন্ত্রাসী’ নেটওয়ার্কগুলো ধ্বংস করা এবং ভবিষ্যতের আক্রমণগুলোকে ব্যর্থ করা।

ইসরাইলি মানবাধিকার সংগঠন বি’সেলিম জানিয়েছে, ২০২২ সালে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেমে ইসরাইলি বাহিনীর দেয়া আগুনে প্রায় ১৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। ২০০৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ২০২২।

ইসরাইলের সর্বকালের সবচেয়ে ডানপন্থী নতুন অতিজাতীয়তাবাদী ও অতিঅর্থোডক্স সরকার তার আইন প্রণয়ন এজেন্ডা তৈরি করছে। যা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নেয়ার এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি নির্মাণের জন্য সহিংসতা আরো বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র : এপি/ইউএনবি