Naya Diganta

হিমালয়ের শহর জোশীমঠ মাটিতে ডেবে যাচ্ছে

ডেবে যাচ্ছে হিমালয়ের শহর

জোশীমঠ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ বাড়ি আর অনেক রাস্তায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। শহরটি ধীরে ধীরে মাটিতে ডেবে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে দ্রুত মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী বলছেন, শহরবাসীর জন্য বড় বড় আশ্রয় শিবির খোলা হবে।

জোশীমঠ শহর হয়েই হিন্দুদের পবিত্র চারধাম যাত্রা করতে হয়। প্রতিবছর লাখ লাখ তীর্থযাত্রী ওই চারধাম যাত্রা করেন। ওই যাত্রার জন্য যে রাস্তা চওড়া করার কাজ চলছিল, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

একই সাথে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে জোশীমঠ এলাকায় সব ধরনের নির্মাণকাজও এখন বন্ধ থাকবে। যেসব হোটেলে ফাটল দেখা গেছে, সেগুলোতে পর্যটকদের থাকা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

'সব সময়ে আতঙ্কে আছি, কখন বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে'
যারা এখনো নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন, তাদের সবসময় এই আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে যে হঠাৎ করে যেকোনো সময় তাদের বাড়িঘর বসে যেতে পারে। এমনকি প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও বৃষ্টি পড়লেই তারা বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছেন, কারণ বৃষ্টিতেই ভূমিধসের আশঙ্কা বেশি থাকে।

জোশীমঠের সুনিল গ্রামের বাসিন্দা এক যুবতী সুনাইনা সাকলানির বাড়িতে গিয়েছিল বিবিসি। সাকলানির বাড়ির দেওয়ালে, মেঝেতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। তার এবং তার বোন যে ঘরে থাকতেন, সেখানেও বড় বড় ফাটল।

সুনাইনা সাকলানি বলেন, ‘এই ঘরে আমি আর আমার বোন থাকতাম। একদিকে একটা খাট ছিল, পাশেই ছিল পুজোর জায়গা। অক্টোবর মাসে খুব বৃষ্টি হলো যখন, তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ফাটল দেখা দেয়। আর এখন তো বিরাট বড় হয়ে গেছে সেগুলো’।

রভিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সুমেধা ভাট বিবিসিকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই বাইরে বেরিয়ে যাই আমরা। ঘরের ভেতরে থাকতে খুব ভয় করে, কে জানে কখন সব ভেঙ্গে পড়বে’।

রভিগ্রাম এলাকা কী হারে বসে যাচ্ছে, তা পরিমাপ করার জন্য ভূতাত্ত্বিক স্বপ্নমিতা ভৈদেশ্বরণ পুরনো নথিপত্রের সাথে ব্যবহার করছেন উপগ্রহ চিত্রও।

তার ভাষ্যমতে, গত দু’বছর ধরে পরিমাপ নিয়ে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে রভিগ্রাম এলাকাটি প্রতিবছর ৮৫ মিলিমিটার করে বসে যাচ্ছে।

বাসিন্দারা বলছেন যে তাদের একেকজন একেকরকম পরামর্শ দিচ্ছেন যে এই এলাকা থেকে চলে গিয়ে অন্য কোথাও ঘর বানাতে। কিন্তু তাদের অনেকেরই সেরকম অর্থের সংস্থান নেই যাতে নতুন করে বাড়ি বানাতে পারবেন তারা।

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোকাবেলা দফতরের প্রধান রঞ্জিত কুমার সিনহা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যেসব পরিবারের বাড়িতে বড়সড় ফাটল হয়েছে বা যাদের বাড়ি একেবারেই থাকার অযোগ্য হয়ে গেছে, তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে।

'নাজুক হিমালয় চাপ সহ্য করতে পারছে না'
সর্বশেষ বড় ফাটলগুলো নজরে আসে বৃহস্পতিবার রাতে। তবে গত অক্টোবর মাসে প্রবল বর্ষণের সময় থেকেই ঘরবাড়ি আর রাস্তায় ফাটল দেখা দিতে থাকে জোশীমঠে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৫৬১টি বাড়িতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন হিমালয়ের নাজুক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর এবং অন্যান্য নির্মাণকাজের চাপ পাহাড় আর নিতে পারছে না।

স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট অতুল সাতি বিবিসিকে বলেন, ‘শুধুমাত্র জোশীমঠ এলাকা নয়, পুরো উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতি একইরকম। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো খুবই নাজুক, গোটা হিমালয়ই তো খুব নতুন পাহাড়। এরই ওপরে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ্য করতে হচ্ছে এই অঞ্চলকে।’

জোশীমঠ ডেবে যাওয়ার কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞ দল
কেন দারুণ সুন্দর এই শৈল শহর ধীরে ধীরে ডেবে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী জিওলজিক্যাল সার্ভে, ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট এবং আইআইটি রূরকির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করেছেন।

জোশীমঠে ফাটল এবং ভূমিধসে এলাকা ডেবে যাওয়ার কথা প্রথম সামনে আসে ১৯৭৬ সালে। একটা সরকারি কমিটির নথিতে উল্লেখ আছে যে তারা জোশীমঠ এলাকা ডেবে যাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিল কারণ অনেক বাসিন্দা সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
সূত্র : বিবিসি