Naya Diganta

সারেঙ্গী

সারেঙ্গী

সারেঙ্গী এ দেশের এক অনন্য ঐতিহ্যবাহী লোকবাদ্যযন্ত্র। সারেঙ্গী বহু তারের সমন্বয়ে তৈরী। প্রাচীনকালে সারেঙ্গী তৈরি হতো বড় আকৃতির পাকা লাউয়ের খোল দিয়ে। লাউকে লম্বালম্বিভাবে অর্ধেক চিরে তার ভেতরের শাঁস বের করে শুকিয়ে সারেঙ্গীর খোল তৈরি করা হতো। সেই সারেঙ্গীকে বলা হতো আলাবু সারেঙ্গী। আলাবু মানে লাউ। বর্তমানে এই খোল তৈরি করা হয় কাঠ দিয়ে। খোলের খোলা পাশ চামড়া দিয়ে সমান করে ঢেকে দেয়া হয়। সারেঙ্গীর বক্ষদেশে চিকন তার একটির পর আর একটি থরে থরে সাজানো থাকে। সারেঙ্গীর উপরের অংশ দণ্ড, নিচের অংশ খোল। খোলের উপরে চামড়া, তার উপরে সোয়ারি বসানো থাকে। সারেঙ্গীতে চারটি প্রধান তার থাকে। এই তারগুলো তাঁতের তৈরি। চারটি তার চারটি বয়লাতে লাগানো থাকে। তবে এই চারটি প্রধান তার ছাড়াও সারেঙ্গীতে আরো ৩৫টি তার থাকে। ডান হাতে ছড় টেনে সারেঙ্গী বাজানো হয়। ছড় দেখতে অর্ধচন্দ্রাকৃতি। ছড়ে ঘোড়ার চুল লাগানো থাকে। এসব তারে ছড় টেনে সারেঙ্গীর সুর তোলা হয়। বাম হাতের আঙুল ও নখের চাপে সুর সৃষ্টি করা হয়।
সারেঙ্গী সাধারণত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশন বা গাওয়ার সময় বাজানো হয়। বিশেষ করে খেয়াল ও রাগসঙ্গীতে সারেঙ্গী এক আবশ্যকীয় বাদ্যযন্ত্র। বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়া এই বাদ্যযন্ত্রের তেমন ব্যবহার দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন নাটকে গায়েন চরিত্রের অভিনেতাদের সারেঙ্গী হাতে দেখা যায়। আলাবু সারেঙ্গী অনেকটা বেহালার মতো। ভারতের উত্তর প্রদেশে এই সারেঙ্গীর প্রচলন আছে। মাছের আকৃতির আর একপ্রকার সারেঙ্গী আছে যাকে মীন সারেঙ্গী বলে। বর্তমানে এসব সারেঙ্গী বিলুপ্ত। সারেঙ্গী বাদনে মুন্সিয়ানা না থাকলে তা সহজে বাজানো যায় না।
ছবি : সংগ্রহ