Naya Diganta

যেকোনো মূল্যে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করব : বিক্ষোভ সমাবেশে পেশাজীবি নেতারা

যেকোনো মূল্যে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করব : বিক্ষোভ সমাবেশে পেশাজীবি নেতারা

পেশাজীবি নেতারা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে। যেকোনো মূল্যে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করব। একইসাথে দেশের মানুষকে মুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। এজন্য যত ত্যাগই স্বীকার করতে হয় বুদ্ধুজীবি পেশাজীবিরা করবে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, হত্যা ও দলটির মহাসচিবসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) সমাবেশের আয়োজন করে।

এ সময় পেশাজীবি নেতারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

সমাবেশ বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পর্যন্ত আজ নেই। সভা-সমাবেশ করার অধিকার এমন কি বাক স্বাধীনতাও আজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে পুলিশ ও হেলমেট বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে দেশে গুণ্ডাতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। দেশের মানুষ আজ অসহায়। মানুষের এসব অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করছে, তা আর বিএনপির একার আন্দোলন নেই। এটি জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আর সেই আন্দোলনে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। পুলিশ আজ জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা সহ্য করার মতো নয়।

সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও বিএসপিপির সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রফেসর ড. তাসমেরী এস এ ইসলাম, দ্য নিউনেশ এডিটর মোস্তফা কামাল মজুমদার, অধ্যাপক ডা. আজুজিল হক, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মো: লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, কৃষিবিদ ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম,অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল ও রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, প্রফেসর নুরুল ইসলাম,অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ, প্রফেসর ড. আকতার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, বিপ্লব উজ্জান, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, একেএম মহসিন, শাহিন হাসনাত, রাশিদুল হক, শাহজান আলম সাজু, এম সাঈদ খান প্রমুখ।

প্রফেসর ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সভা-সমাবেশ করার অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এই অধিকার হরণ করে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশ আজ গভীর সঙ্কটে নিপতিত। দেশে চরম অস্থির শাসন চলছে। আর এ কারণেই আজ মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসহ জাতীয় নেতাদের গ্রেফতার করেছে। দেশের সবচেয়ে জননন্দিত নেতা বেগম খালেদা জিয়াকেও তারা গৃহবন্দী করে রেখেছে।

সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ধর্ষণ, বিনাবিচারে হত্যা, আয়নাঘর স্থাপন করে ভিন্নমতের নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন, জুলুম-নিপীড়নের কারণে সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন ভাবছে পুলিশ ও দলীয় অস্ত্রধারীদের লেলিয়ে দিয়ে খুন করে, জেলেপুড়ে, জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে এবং সভা-সমাবেশে পণ্ড করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকবে। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, খুন করে, রক্ত ঝরিয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। দেশের জনগণ আজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। তারা দুঃশাসনের অবসান চায়। তারা বাঁচার মতো বাঁচতে চায়। তারা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। তা-ই জনগণ মনে করে সরকারের পতনই হচ্ছে মুক্তির একমাত্র পথ। জনগণের এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।

ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, একনায়কতন্ত্র চলছে। দলীয়করণের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই বলে আজ বিএনপিকে গণসমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

প্রফেসর ড. তাসমেরি এসএ ইসলাম বলেন, দেশ এখন গণতন্ত্রহীন, মানুষ অধিকার হারা। হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একাত্তর ও নব্বইয়ের মতো পেশাজীবি ও বুদ্ধিজীবীদের লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, দেশে শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুন ও লুটপাটের রাজত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে দেশ মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতি আড়াল করতেই সরকার একের পর এক ইস্যু তৈরি করে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ না করলেও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দিচ্ছে না। অঘোষিত একদলীয় শাসন চলছে।

মিডিয়াকেও আজ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেন কেউ তাদের লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে সেজন্যই এমনটি করছে।

এদিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-জেটেব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।