Naya Diganta

৭৬ বছর বয়সেও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে

৭৬ বছর বয়সেও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে

‘আমাকে একটু দেখিয়ে দেবে মিডিয়া বাস কোথা থেকে ছাড়ে। আমি মেইন মিডিয়া সেন্টারে যাবো।’ বেশ কয়েক দিন আগে স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ খেলা শেষের পর মিডিয়া সেন্টারে আমাকে অনুরোধ বৃদ্ধ এক স্বেচ্ছাসেবকের।

একটু বিস্মিতই হতে হলো এমন অনুরোধে। কারণ তারাইতো সবাইকে পথ দেখিয়ে দেয়। একটু পর তরুণ এক স্বেচ্ছাসেবকের অনুরোধ, তাকে যেন নিরাপদে মেইন মিডিয়া সেন্টারে নামিয়ে দেয়। বয়স্ক এই ব্যক্তির নাম হুবার্ট বিহলার। বয়স ৭৬। এই বয়সেই জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট থেকে কাতারে এসেছেন বিশ্বকাপে আসা অতিথিদের গাইড করতে।

হুবার্ট হলেন ২০২২ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবক। গত বছর স্ত্রী মারা যাওয়া এই সাবেক ফুটবলারের এটি পঞ্চম বিশ্বকাপে ভলেন্টিয়ারের কাজ করা। শখের বসে তার এই স্বেচ্ছায় কাজ করা।

হুবার্টের দুই ছেলে। একজন থাকেন সুইজারল্যান্ডে। অপরজন ফ্রাঙ্কফুটেই। তবে এই বৃদ্ধ বাবা থাকেন আলাদা। জানান, ‘আমি একা থাকতেই পছন্দ করি। তাই আদালা থাকা’। এখন তার অবসর জীবন। এর আগে ছিলেন ফুটবলার। তবে জার্মানির শীর্ষ লিগের খেলোয়াড় হতে পারেননি। বিখ্যাত ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের পাশেই থাকা একটি ক্লাবে খেলতেন। কিন্তু হাঁটুর ইনজুরি তাকে ফুটবল ক্যারিয়ার সম্পন্ন করতে বাধ্য করে। এরপর করেছেন রেফারিং। ছিলেন ক্লাব টিমের ফটো সাংবাদিকও।

২০০৫ সালে জার্মানি বিশ্বকাপের আগে ওই দেশে বসেছিল ফিফা কনফেডারেশন কাপ। যে আসরে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন ক্লাব গুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকে। ওই আসরে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ দিয়েই তার শুরু। এরপর ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ, ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ, ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ হয়ে এখন তিনি কাতার বিশ্বকাপে ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্বে। ছিলেন ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসের স্বেচ্ছাসেবকও। ফিফার শর্ত হলো এই বিনা বেতনের কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্টদের নিজেকেই বিমান ভাড়া বহন করতে হবে। সাথে থাকা খাওয়াও। এভাবেই প্রতি বিশ্বকাপে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন । হুবার্টও সেসব শর্ত মেনে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে কাতারে তিনি থাকা-খাওয়ার সুবিধা পেয়ে সন্তুষ্ট।

তিনি জানান, বাজে অভিজ্ঞতার মুখে তাকে পড়তে হয়েছিল ২০১৪ সালে ব্রাজিলের পোর্তো আলেগ্রেতে। সেখানে তিনি এক ব্রাজিলিয়ান পরিবারের সাথে থাকতেন। বিশ্বকাপের শুরু থেকে সবই ভালোভাবে চলছিল। কিন্তু যেই সেমিতে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ১-৭ গোলে হার তখনই সেই ব্রাজিলিয়ানরা তাকে অপছন্দ করতে শুরু করেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাদের এই গোসসা উঠে যায় ফাইনালে জার্মানি ১-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর। কারণ আর্জেন্টিনা যে ব্রাজিলের চিরশত্রু। হুবার্ট দিলেন এই তথ্য।

এই বয়সেও বাড়িতে বিশ্রামে না থেকে কেন স্বেচ্চায় সেবা দিয়ে যাওয়া। হুবার্টের জবাব, ‘এই কাজের মাধ্যমে মানুষের সাথে মেশা যায়। একটি বন্ধন তৈরি হয়। দেখুন সেই ব্রাজিলিয়ান পরিবার পরে জার্মানিতে আমার বাসায় বেড়াতে এসেছিল।’

তবে আর বেশি দিন এই কাজ করবেন না। জানান, আগামী বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মহিলা বিশ্বকাপে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেই আমি অবসরে যাবো।

এরপর সাথে থাকা একটি ছোট ফুটবল দেখিয়ে বলেন, ‘আমি এই ফুটবলটা উপহার পেয়েছি। এটি আমার ছোট ছেলের সন্তানকে দেবো। খুব খুশি হবে আমার নাতি ’।