Naya Diganta
যৌথসভায় শেখ হাসিনা

মারতে এলে হাত ভেঙে দিতে হবে

যৌথসভায় শেখ হাসিনা
যৌথসভায় শেখ হাসিনা


আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগ বসে মাইর খাবে তা আর হবে না। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হলে আওয়ামী লীগ আর বসে থাকবে না। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তার জবাব দিতে হবে। বারবার আঘাত করলে আমরা সহ্য করব না। আমরা ২০২২ পর্যন্ত সহ্য করেছি। এখন আর করব না। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। আগুন দিয়ে পোড়াতে এলে, যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই হাতটা ওই আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। ওদের কিসের ক্ষমা। আর কোনো ক্ষমা নাই। কোনো দিন বলিনি এখন বলব, আর মার খাওয়ার সময় নাই। অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না।


গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সাথে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের এক যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে দেশে যাতে আর কেউ কোনো নৈরাজ্য ঘটাতে না পারে সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিটি এলাকায় প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে তারা আবার নিপীড়নের পথ অবলম্বন করতে না পারে। সবার মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি, কারো পকেট থেকে আসেনি। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতের সংগঠন। আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারো পকেটের সংগঠন না। সবাই প্রস্তুত থাকবেন বাংলাদেশের কোনো মানুষের একটা ক্ষতিও যেন তারা করতে না পারে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্র মানায় না। জিয়াউর রহমান কারফিউতন্ত্র দিয়ে গেছে। আর খালেদা দিয়েছে দুর্নীতিতন্ত্র। বিএনপির দুই গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন। তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল, সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনব। ব্রিটিশ সরকারকে বলব, তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাকে হ্যান্ডওভার করতে হবে বাংলাদেশের কাছে। দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব। তারেক জিয়ার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো আমি তখনই দেশে চলে আসছি। ওর বাপও তো আমাকে ঠেকাতে পারেনি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনো পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেয়ার শখ দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।


এ সময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসীর এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না, এটা পরিষ্কার কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকে বলতে হবে, তারা কি শান্তিতে থাকতে চায়, নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়? তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা, খুন, মানিলন্ডারিং এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। আমার কৃষক শ্রমিক, আমাদের নেতাকর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ভোট চুরি করেছিল বলেই তাদেরকে জনগণ ২০০৮ সালে ভোট দেয়নি। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে না, জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। তারা আওয়ামী লীগকে ভোট চুরির অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। দেশের আর উন্নয়ন হবে না। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। বিএনপির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি আবারো বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। রাস্তায় পুলিশের ওপর হামলা করছে। চালডাল দিয়ে খিঁচুড়ি রান্না করে খেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে সরকারের পতন ঘটাবে! সরকার পতন করা এত সহজ কাজ নয়।


যৌথসভায় আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী বিএনপি আমলে নির্যাতন মারধরের শিকার হয়েছে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের আহ্বান জানান দলটির প্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীই হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। আওয়ামী লীগ কোনো বাধা দিচ্ছে না। হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারো হাওয়া ভবন আসলে, এখন আরেকটা নাম দিবে, আবারো চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না। আজ বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। গণমাধ্যমের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, যে সমস্ত মিডিয়া এখন বিএনপির কাছে ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন, এ তো আমারই দেয়া। আমি যদি উন্মুক্ত করে না দিতাম এত মানুষের চাকরিও হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না। বিএনপি আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই মিডিয়া একটা উল্টা-পাল্টা লিখলেই তো তারা মারত। তারপরও এত আহ্লাদ কিসের, এত তেল মারা কিসের। কত তেল আছে আমি দেখব।


রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশে চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশ এবং তারা সে দেশের অধিবাসী। কিন্তু তারা এখন খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের জন্য বিশাল বোঝায় পরিণত হয়ে আছে। আমরা মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। এখন তাদের নিজ দেশে চলে যাওয়া উচিত।’ মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আগামী বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আগামী বছর নিজ দেশে যাওয়া শুরু করবে।’


বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে তার মেয়াদ সম্পন্ন করায় অভিনন্দন জানান এবং তার পরবর্তী দায়িত্ব পালনে সফলতা কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ভূমিকা রাখায় বিদায়ী চীনা দূত লি জিমপিংকে ধন্যবাদ জানান। চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, একমাত্র আপনার জন্য এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন ব্যক্ত করায় চীনা প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ী মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।


সরকার সাংস্কৃতিকভাবে মেধাবীদের মেধা বিকাশে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার তৃণমূলে সাংস্কৃতিকভাবে মেধাবীদের মেধা বিকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব সংস্কৃতিমনা মানুষ আছে তাদের মেধা, মনন, জ্ঞান ও ক্ষমতা বিকশিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসব্যাপী ‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০২২’ উদ্বোধনকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আর্ট গ্যালারিতে ৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশের প্রায় ৪৯৩ জন শিল্পীর মোট ৬৪৯টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।
‘১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০২২’ এর প্রধান সমন্বয়কারী লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।