Naya Diganta

ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে পুঁজিবাজার

-ফের ৩০০ কোটি টাকার নিচে ডিএসইর লেনদেন
-কৃষিবিদ ফিডের শেয়ার বিক্রির ঘোষণায় ব্যাখ্যা তলব

লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজারে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তিন শ’ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে দুই কার্যদিবস তিন শ’ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো। লেনদেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাজারটিতে কমেছে সব ক’টি মূল্যসূচক।

ডিএসইর পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সব ক’টি মূল্যসূচক কমেছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারটিতে যে ক’টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তার চার গুণের বেশি প্রতিষ্ঠানের।

অবশ্য দাম বাড়া বা কমার চেয়ে ডিএসই ও সিএইতে দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে, তারা ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে; যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৫টির। আর ২১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের চেয়ে ১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সব ক’টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৯৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। আগের দিন লেনদেন হয় ৩১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর আগে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার ডিএসইতে ২৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে এক সপ্তাহে দুই দিন তিন শ’ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।

লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকের ১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমরা নেটওয়ার্ক।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মুন্নু অ্যাগ্রো, ওরিয়ন ফার্মা, বসুন্ধরা পেপার, জেনেক্স ইনফোসিস, ইস্টার্ন হাউজিং, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে আট কোটি ৪৬ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ১০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫টির এবং ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ব্যাখ্যা তলব : পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কৃষিবিদ ফিডের উদ্যোক্তা জিন্নাত আরা সম্প্রতি আইনবহির্ভূতভাবে দেড় লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। যদিও পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেন। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষিবিদ ফিডের উদ্যোক্তা জিন্নাত আরা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। তাই এ বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ৬(৩) এর অধীনে ডিএসইকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির বার্ষিক হিসাব সমাপ্ত হওয়ার দুই মাস পূর্ব থেকে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ওই হিসাব বিবেচিত, গৃহীত বা অনুমোদিত হওয়ার সময়কাল পর্যন্ত কোনো পরিচালক, স্পন্সর কেউ শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। যেহেতু কৃষিবিদ ফিড জুন ক্লোজিং বা হিসাব বছর সমাপ্ত হয় জুন মাসে (জুলাই-জুন)। গত জুন মাসে কোম্পানিটির হিসাব বছর সমাপ্ত হলেও আলোচিত সময়ে পর্ষদ সভায় সর্বশেষ হিসাব বছর অনুমোদিত হয়নি। ফলে এই সময়ে কোনো উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।