Naya Diganta

শেরপুরে গলদা-কার্প মিশ্র চাষে সাফল্য একেকজনের মাসে আয় লাখ টাকা

খামার থেকে চাষ করা গলদা-কার্প তুলছেন চাষিরা : নয়া দিগন্ত

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় মৎস্য চাষিরা। গলদা-কার্প মিশ্র চাষ করে ৫০ শতাংশ জমি থেকে একজন চাষি ৫ মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আয় করছেন। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় গলদা-কার্প মিশ্র চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন উপজেলার মৎস্য চাষিরা। এ দিকে উৎপাদন বাড়াতে রাজশাহী বিভাগের মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের গলদা চিংড়ি চাষে সহায়তাও দিচ্ছে উপজেলা মৎস্য দফতর। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করায় আশানুরূপ বড় হয়েছে চিংড়িগুলো।
মির্জাপুর ইউনিয়নের উচড়ং গ্রামের মৎস্য চাষি আব্দুল রাজ্জাক জানান, উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার অনুপ্রেরণায় ৫০ শতাংশ পুকুরে গলদা-কার্প মিশ্র চাষে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। মাছ বিক্রয়ের উপযুক্ত করতে সাড়ে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। ৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন, আরো দেড় লাখ টাকার মাছ বিক্রির আশা করছেন। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অনেকে গলদা-কার্প মিশ্র চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
শুভগাছা গ্রামের ইনছানুর রহমান জানান, তিনি রাজশাহী বিভাগের মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের গলদা চিংড়ি চাষের প্রদর্শনী পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এক লাখ টাকা খরচ করেছেন। এই প্রদর্শনীতে পাঁচ মাসে তার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন। তবে গলদা চিংড়ি চাষে রেডিমেড ফিড খাবার দিয়েছেন।
মৎস্য চাষি সোহেল রানা ও রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা বরিশাল ব্র্যাক হ্যাচারি থেকে পোস্ট লার্ভি এনেছি। ৫ হাজার পোনা ছাড়তে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। এ থেকে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি চিংড়ি পাওয়া যেতে পারে। প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে গড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা করে লাভ হবে।
চাষিরা আরো জানান, প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় চিংড়ির ফিড ছাড়াও বিকেল ৪টার সময় ভাসমান ফিড দেই। প্রতি ১০০ কেজি মাছে দিনে ৩-৪ কেজি ফিড দিতে হয়। এ ছাড়া অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে অ্যারেটর ব্যবহার করে অক্সিজেনের জোগান দিতে হয়। গলদা চিংড়িতে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি। মাছের বাজারজাতকরণ নিয়ে তারা বলেন, স্থানীয়ভাবে গলদা চিংড়ির বাজার সেভাবে গড়ে না ওঠায় উৎপাদিত চিংড়ি শেরপুর ছাড়াও আশপাশের উপজেলার আড়ৎগুলোতে বিক্রি করতে হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা সরকার জানান, পাঁচজন চাষি বরিশাল ব্র্যাক হ্যাচারি থেকে ২৫ হাজার পিএল (পোস্ট লার্ভি) এনেছেন। পানি ও আবহাওয়া গলদা চাষের উপযোগী হওয়ায় উপজেলায় সাফল্য মিলেছে। সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে। সামনে আরো চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। চিংড়ি চাষে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সাবধানতায় ভালো কিছু আশা করা যায় বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে গলদা-কার্প মিশ্র চাষে সাফল্য পেয়েছেন মৎস্য চাষিরা।