Naya Diganta

বিএনপির চলমান আন্দোলন : বাস্তবতা ও করণীয়

নয়াপল্টনে বিএনপির ওপর পুলিশের অ্যাকশন।

সরকার পতন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে বিএনপি, এরই টেস্ট রিহার্সেল হিসেবে সারা দেশে গণসমাবেশ করছে দলটি। জনসমর্থনে বলীয়ান বিএনপি অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবেই একের পর এক গণসমাবেশ সফলভাবে বাস্তবায়ন করে চলছে। রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবে, বর্তমান সময়ে এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটির নাম বিএনপি। চলমান আন্দোলনে সহস্র বাধাবিপত্তি, ক্ষয়ক্ষতি, ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের হামলা-মামলা, গ্রেফতার, বিরোধীদের উসকানি, খুন ও নানামুখী ভয়ভীতি উপেক্ষা করে প্রতিটি গণসমাবেশে সমুদ্র স্রোতের উত্তালতার মতো জনগণের সক্রিয় উপস্থিতিই এই দলটির নির্ভেজাল জনপ্রিয়তার বাস্তব সাক্ষী। আগের আন্দোলনের ব্যর্থতাকে আমলে নিয়ে ব্যর্থতার রিভাইজ দিয়ে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে চলছে বিএনপি। প্রতিটি সমাবেশেই দলের নেতাকর্মীরা যেন নতুনভাবে উজ্জীবিত হন। দলীয় আন্দোলন সংগ্রাম যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আগের তুলনায় নেতাকর্মীরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সরকারের কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে বিচক্ষণতার সাথে আন্দোলন পরিচালনা করছে হাইকমান্ড। দীর্ঘ ১৩ বছর পর এ যেন এক নতুন বিএনপিকে দেখতে পাচ্ছে জনগণ।

চলমান আন্দোলন
বছরের শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে মোট ৭১টি সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ করে বিএনপি। নিজেদের ঘর গুছিয়ে নিয়ে কর্মীদের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করতে নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিক অংশ হিসেবে গত ২২ আগস্ট থেকে জ্বালানি মূল্য, পরিবহন ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা সমাবেশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। মূলত আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জনমুখী দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ধারাবাহিক এই কর্মসূচিতে একেবারে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ পায় দলটি। কয়েকটি উপজেলা ছাড়া প্রায় প্রতিটি উপজেলার সমাবেশে আপামর জনতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো; বিশেষ করে কুমিল্লা হোমনা উপজেলার বিশাল এক সমাবেশ যা বিভিন্ন জেলার সমাবেশকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কর্মসূচি বাস্তবায়নে হাইকমান্ড ছিল সিরিয়াস। তাই কর্মসূচি পালন করতে না পারায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের মাঠে সরব বিএনপি। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মসূচি শেষে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী ঢাকার ১৬টি স্থানে নানামুখী বাধা ও উসকানি উপেক্ষা করে বিপুল জনসমাগম করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। লক্ষ্য ছিল ‘জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে তিনজন বিএনপি কর্মীর হত্যার প্রতিবাদ’। মূলত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সারা দেশে প্রোগ্রাম করে নিজেদের ঝালাই করে নিয়েছে বিএনপি, নিজেদের গোছানো রাজনৈতিক মাঠের ফসল বোনার কাজে সফল বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএনপি, গত ২৮ সেপ্টেম্বর দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সারা দেশে ৯টি বিভাগে গণসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। সব ধরনের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে একের পর এক গণসমাবেশ সফল করে এ দলটি। বারোই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গণসমাবেশ যথাক্রমে-১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর ও ১৮ অক্টোবর সিলেটে গণসমাবেশ সম্পন্ন করা হয়েছে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে হয়েছে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হচ্ছে মহাসমাবেশ। কেন এই গণসমাবেশ? উত্তরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- ‘নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলের পাঁচ নেতাকর্মীকে হত্যার প্রতিবাদ এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে বিএনপি আর এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ গণসমাবেশ’। এ ছাড়াও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষকদলের নিয়মিত সমাবেশ চলমান।

বাস্তবতা
আগেই উল্লেখ করেছি, বিএনপি এখন আন্দোলনের মাঠে, সব ধরনের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মীরা কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন করছে। কর্মীরা রক্ত ঝরিয়েছে, অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে, হামলা মামলার শিকার হয়েছে, অনেকেই কারারুদ্ধ হয়েছে। মামলায় জর্জরিত হয়ে অনেকেই এলাকা ছাড়া; এমনকি আন্দোলন সফল করতে গিয়ে অনেকে জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। বিএনপির গতানুগতিক কর্মসূচিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে, দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে জনগণের বর্তমান দুঃখ-দুর্দশাকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলন করছে। এতে আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস জনজীবনে, বিপর্যস্ত মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। আন্দোলনে এই শ্রেণীর মানুষদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। জনসম্পৃক্ত আন্দোলনে সম্প্রতি পাঁচ নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ সাধারণ মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। ফলে প্রতিটি গণসমাবেশ রূপ নিয়েছে গণজোয়ারে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ এখন পরিবর্তন চায়; তাই তারা পরিবর্তনমুখী। স্বেচ্ছায় সমাবেশে অংশগ্রহণ করে, প্রায় প্রতিটি সমাবেশে দুই দিন আগ থেকেই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। সমাবেশ পণ্ড করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র হলেও কোনো বাধাই নেতাকর্মীদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না; বরং বাধা যত এসেছে গণসমাবেশে নেতাকর্মীর সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দিন আগেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল ও আশপাশে হাজির হয়েছে।

চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের মাঠ থেকেই বিভাগীয় গণসমাবেশের সূচনা। নানামুখী বাধা উপেক্ষা করে চট্টলাবাসী সমাবেশ সফল করেছে। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট দিয়েও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে জনতার ঢল থামানো যায়নি। হেঁটে বহুদূর থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করেছে। খুলনাতেও একই চিত্র, আগের রাতেই দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা- পাটি, ত্রিপল-পলিথিনের বিছানা পেতে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেয়। আগে থেকেই ১০ জেলার স্থলপথ ও জলপথ বন্ধ ছিল, পথে পথে বাধা, হুমকি, সীমাহীন দুর্ভোগ, কোথাও কোথাও পুলিশি হয়রানি, সমাবেশ চলার সময়েও দিনভর শহরে ছিল সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মহড়া। সব ধরনের বাধা ডিঙিয়ে নগরের ‘সোনালী ব্যাংক চত্বরে’ গণসমাবেশ সফল করে বিএনপি। বাস ধর্মঘটে অচল ছিল রংপুর তার পরও ৫০ মাইল পর্যন্ত হেঁটে সমাবেশে যোগ দিয়েছিল লোকজন। চতুর্থ বিভাগীয় এই গণসমাবেশে ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটসহ সব রকম প্রতিকূলতাকে মাড়িয়ে আগের রাতেই সমাবেশস্থল ‘কালেক্টর ঈদগাহ মাঠ’ পূর্ণ করেছে নেতাকর্মীরা। দক্ষিণাঞ্চলে বাধার শঙ্কায় আগের রাতেই সমাবেশ সফল করতে বরিশালে এসেছেন নেতাকর্মীরা। স্থলভাগ ও জলভাগ বন্ধ করেও জনতার স্রোত আটকানো যায়নি নগরীর ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানে’।
সমাবেশের আগে ও পরে পাঁচ শ’ নেতাকর্মী আটক হয়েছে। আটকের ঘটনা ঘটেছে প্রায় প্রতিটি সমাবেশে। শহরে খাবারের হোটেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, এমনকি নেট কানেকশনও বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল ফরিদপুর, তাই তিন ঘণ্টা আগে থেকেই সমাবেশ শুরু হয়ে যায়। নৌকার ঘাঁটিতে ব্যাপক শোডাউন দেখিয়েছে নেতাকর্মীরা, প্রায় লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি নিয়ে সফল প্রোগ্রাম। আগামী দিনে বিএনপির পক্ষে বার্তা দিয়েছে ফরিদপুরবাসী। সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট আমলেই নেয়নি নেতাকর্মীরা। বাস বন্ধ থাকলেও শুধু সুনামগঞ্জ থেকেই প্রায় আট হাজার বাইকের বিশাল শোডাউন নিয়ে নেতাকর্মীরা সিলেট সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশের আগেই সিলেটে জনতার জোয়ার লক্ষ করা গিয়েছিল। নগরীর ‘আলিয়া মাদরাসা মাঠ’ মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ায় আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে লোকজন নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ। সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ করার রেকর্ড বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত কুমিল্লার নেতাকর্মীদের। আগের মতো কোনো বাধাই হয়তো সমাবেশ পণ্ড করতে পারছে না। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী গণসমাবেশ করে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে চূড়ান্ত রাজনৈতিক শোডাউন করছে বিএনপি। গণসমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

এ দিকে ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে পুলিশ ও রথ্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, তৎপরতা বাড়াচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আন্দোলন-সংগ্রাম বা গণসমাবেশ কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে দেশজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে সংস্থাগুলো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপির সবপর্যায়ের পুলিশ সদস্যের ছুটি না দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে আন্দোলন করতে গিয়ে সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনায় ইতোমধ্যে যেসব নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যারা আসামি হয়েছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সব মিলিয়ে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে ব্যাপক সতর্ক পুলিশ। ছুটি নিতে পুলিশ সদস্যদেরও নিরুৎসাহিত করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

করণীয়
গণসমাবেশে লাখ লাখ জনতার উপস্থিতি দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা রাজনীতির খেলার মাঠে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তারা খুব ভালো করেই জানে, কিভাবে রাজনৈতিকভাবে বিরোধীপক্ষকে মোকাবেলা করতে হয়। সুতরাং বিএনপিকেও জনগণের পালস বুঝতে হবে এবং সে আলোকে ময়দানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণের বড় একটা অংশ এখন পরিবর্তন প্রত্যাশী। তারা আগামী ১০ ডিসেম্বরের দিকে তাকিয়ে আছে। জনগণের প্রত্যাশা বিএনপি আশানুরূপ কিছু একটা করবে। অবশ্য বিএনপি মহাসচিব বলেছেন- ঢাকা দখলের চিন্তা আপাতত নেই বিএনপির। তারা অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো করেই একটা মহাসমাবেশ করবে মাত্র।’ যদিও আন্দোলনের কৌশল স্পষ্ট করা উচিত নয়, এমনটিই হয়তো করেছেন মির্জা ফখরুল। গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির বৈঠকের পর মান্না সাহেব বলেছিলেন- “আমরা ভেবেছিলাম, বিএনপি এবারের আন্দোলন নিয়ে সিরিয়াস, কারণ সারা দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। কিন্তু আজ আলাপ করে বুঝলাম, বিএনপি এখনো গতানুগতিক কৌশলেই আগাতে চাইছে। তারা একটি সমাবেশ করেই ক্ষান্ত হবে। এর বাইরে তাদের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।” ধরে নিচ্ছি, মান্না সাহেবের ধারণা ভুল-ও হতে পারে। বিএনপি তার কাছে সব খোলাসা না-ও করতে পারে। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর আসার বহু আগেই যেভাবে মিডিয়ায় এবং মান্না সাহেবদের মুখ থেকে সমান্তরালভাবে বিএনপির আগামী আন্দোলন পরিকল্পনাকে সাদামাটা ও হালকা প্রমাণ করার প্রয়াস চলছে তা পুরো আন্দোলন প্রক্রিয়াকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

যেহেতু ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও আন্দোলন করে ফসল ঘরে তুলতে না পারার একটি ক্ষত এবং অনাস্থা রয়ে গেছে, তাই আগামীর আন্দোলনের সফলতার জন্য বিএনপি যে বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে- (এক) ক্ষমতাসীন দলের কোনো ধরনের উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্ক সজাগ দৃষ্টি রেখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চলমান রাখতে হবে। সঙ্গতকারণেই সরকার ও শাসকদল নানাভাবে আন্দোলন দমন করতে চাইবে, উসকানি ও হামলা মামলার মাধ্যমে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে চাইবে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপির গায়ে আগুন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের তকমা এঁটে দিয়ে আন্দোলনকে কলুষিত করতে চাইবে। (দুই) বিগত আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলো যথাযথ পর্যালোচনা করে চূড়ান্তভাবে মাঠে নামতে হবে, তাহলে আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়বে। (তিন) সরকারবিরোধী সব মত ও দলের সাথে আলোচনা চলমান রাখতে হবে, কারণ- সরকার বিরোধী শিবির যত বড় হবে সরকার পতনের আন্দোলন তত তাড়াতাড়ি সফলতার মুখ দেখবে। (চার) দুর্নীতি ও দুঃশাসনে জনজীবনে যে আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত সাধারণ মানুষের সমস্যাকে আগের মতো ইস্যু করে আন্দোলন চাঙ্গা করতে হবে। তাহলেই আন্দোলনে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা বাড়বে। (পাঁচ) দরিদ্র ও বেকারদের সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে লাখ লাখ তরুণ বেকারদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের যথার্থ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কেননা বর্তমানে যোগ্যতাসম্পন্ন লাখ লাখ যুবক বেকারত্বের কশাঘাতে জর্জরিত, চাকরির আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছে। (ছয়) ছাত্রদল ও যুবদলকে সুসংগঠিত করে দেশব্যাপী তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে এবং কমিটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে কমিটি দিতে হবে যাতে কেউ অভিযোগে বা অভিমানে দূরে সরে না যায়। যুবদলের গেল কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও দেশব্যাপী প্রতিটি ইউনিটে কমিটিতে দিতে তারা ব্যর্থ। ছাত্রদলকে চাঙ্গা করে মাঠে ব্যস্ত রাখতে হবে কেননা ছাত্রদল বিএনপির ভ্যানগার্ড। (সাত) হাইকমান্ডকে বিবৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কারো অহেতুক কথায় পরিবেশ নষ্ট না হয়; কেউ যেন দূরে সরে না যায়।

পৃথিবীতে কোনো বিপ্লবই সংখ্যাধিক্যের বিচারে হয়নি বরং পৃথিবীতে যত বিপ্লবই সংগঠিত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট মানুষদের আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থ মনোভাব আর তাদের রক্তের উপরই বিজয় অর্জিত হয়েছে। বিএনপি লাখ কোটি মানুষের দল; তারা পথসভা ডাকলে জনসভা হয়ে যায়! সুতরাং বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও হাইকমান্ড যদি আত্মত্যাগের মনোভাব নিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে রাজপথে সক্ষমতার জানান দেয় তাহলে সংখ্যায় কম হলেও বিজয় সুনিশ্চিত।

লেখক : সাবেক সভাপতি, ডিবেট বাংলাদেশ