Naya Diganta

স্পেনকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় মরক্কো

সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফেবারিট স্পেনের মুখোমুখি নকআউটে আফ্রিকার দেশ মরক্কো। ম্যাচের শুরুতেই প্রাধান্য বিস্তার করা আফ্রিকান দেশটির সামনে পাত্তায় ছিল না ইউরোপের দেশটির। সময় গড়ানোর সাথে তালমিলিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে স্পেন। অ্যাটলাস লায়ন্সরা নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময় গোলের কোনো সুযোগই দেয়নি লা রোজাদের। গোলশূন্য ড্রয়ের পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। ৩-০ ব্যবধানে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় আফ্রিকার দেশটি। টাইব্রেকারে তিনটি শট ঠেকিয়ে ম্যাচের হিরো বনে যান মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচের চার মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত স্পেন। মরক্কোর এক ডিফেন্ডারকে পাস কাটিয়ে পেদ্রি বল দেন গাভিকে। বলের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নিয়ে গোলমুখে শট নেয়ার আগেই তা ক্লিয়ার করে মরক্কো। একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও গোলের দেখা পাচ্ছিল না কোনো দলই। ম্যাচের ১২ মিনিটে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। আশরাফ হাকিমির শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায় বাইরে।
ম্যাচের ২২ মিনিটে মরক্কোর জিয়েচের দুর্বল ফ্রি কিক ওলমো হেডের সাহায্যে ক্লিয়ার করেন। ২৫ মিনিটে স্পেনের গাভির শট ফিরে আসে সাইডবারে লেগে। যদিও বলটি ছিল অফসাইড। ৩৩ মিনিটে তোরেসের কাছ থেকে মাজরাউই বল ছিনিয়ে নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিলে স্পেনের গোলরক্ষক সিমন কোনোমতে সেভ করেন। ৪২ মিনিটে আবার মরক্কোর আক্রমণ। বাম পাশ থেকে আসা বলে অ্যাগুয়ের্ডের হেড চলে যাই সাইডবারের বাইরে দিয়ে। বল দখলের লড়াইয়ে স্পেন এগিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধে শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলতে থাকে মরক্কো। দলের আক্রমণের ধার বাড়াতে দ্বিতীয়ার্ধে নামানো হয় মোরাতাকে। ছোট ছোট পাসে খেলতে থাকা স্পেনের কৌশল বুঝেই প্ল্যান সাজায় মরক্কো। রক্ষণাত্মক খেলে সুযোগ পেলেই কাউন্টার অ্যাটাক। এই কৌশলেই নির্ধারিত সময় শেষ করে মরক্কো ।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে ডানি ওলমোর ডি বক্সের ভেতর থেকে নেয়া শট দারুণভাবে ব্লক করে অ্যাগুয়ের্ড। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে দানি ওলমোর বাঁকানো ফ্রি কিকে কোনো স্প্যানিশ খেলোয়াড়ই মাথা ছোঁয়াতে না পারায় উলটো বল গোলমুখে গেলে দারুণভাবে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বোনো। কর্নারের বলে লাপোর্ত হেড করলেও মরক্কোর জমাট রক্ষণভাগের কাছে তা পরাস্ত হলে গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ ম্যাচ। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচের ৯৫ মিনিটে চমৎকার সুযোগ মিস করে মরক্কো। গোলকিপারকে সমনে পেয়েও বল জালে জড়াতে পারলেন না অধিনায়ক সাইস। পেছন থেকে এসে স্পেনের ডিফেন্ডার বলে টোকা দিলে চলে যায় গোলরক্ষকের হাতে। ১০৪ মিনিট ওয়ালিদ চেদিরার শট স্পেনের গোলরক্ষক দুর্দান্তভাবে সেভ করেন। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ও গোল করতে ব্যর্থ দুই দল।
ক্রোয়েশিয়া-জাপান ম্যাচের পর আরেকটি উত্তেজনাকর ম্যাচ স্পেন-মরক্কোর। স্পেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেললেও গোল পায়নি আফ্রিকান সিংহ মরক্কো। অতিরিক্ত সময়ও গোল দিতে ব্যর্থ দুই দল। এবারের আসরে দ্বিতীয় ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে টস জিতে মরক্কোর অধিনায়ক সাইস প্রথমে শট নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শট নিতে আসেন মরক্কোর সাবিরি। তিনি গোলরক্ষককে পরাস্ত করে সরাসরি বল জালে জড়ান। জিয়েথের দ্বিতীয় শটেও গোলরক্ষক পরাস্ত। বদর বানৌনের তৃতীয় শটটি স্পেনের গোলরক্ষক সিমোন ঠেকিয়ে দেন। চতুর্থ বলে হাকিমির গোল। স্পেনের পাবলো সারাবিয়ার নেয়া প্রথম শটটি সাইডবারে লেগে প্রতিহত। কার্লোস সোলের দ্বিতীয় ও বুস্কুয়েটের নেয়া তৃতীয় শটটিও মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো সেভ করেন দুর্দান্তভাবে। ফলে টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মেগা আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় আফ্রিকার লায়ন্সরা।