Naya Diganta

লুটেরাদের হাত থেকে দেশ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে : বুলবুল

লুটেরাদের হাত থেকে দেশ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে : বুলবুল।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্ত হয়েছিল। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডব ও ২০০৮ সালে ফখরুদ্দিন ও মঈনুদ্দিনের সাজানো তত্ত্ববধায়ক সরকার পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে দেশকে তুলে দেয়ার মাধ্যমে সেই স্বৈরতন্ত্র আবারো ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। ফলে দেশের ভাগ্য আজ দুর্বৃত্তায়নের কবলে চলে গিয়েছে, গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে। ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকার সকল বিরোধী মতকে দমন-পীড়ন করতে ব্যস্ত। দেশে আজ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যম সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না। গণতন্ত্রের পথ মানেই হচ্ছে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশের জনগণের ভোট সমর্থনকে সম্মান দেখানো। অথচ একটি আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনার দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার যে ভাষায় কথা বলে নির্বাচন কমিশনও সেই একই ভাষায় কথা বলছে। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, এই অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচার আওয়ামী লুটেরাদের হাত থেকে দেশ রক্ষা ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান করছি।

ম্ঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও দেলওয়ার হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন।

উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান, আশরাফুল আলম ইমন, মু. নাসির উদ্দীন, জহিরুল হক সেলিমসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে এই আওয়ামী লীগ। এই সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই মাসের মাথায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলিখানায় নিষ্ঠুর ও অমানবিক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস ও অন্যের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সকল কার্যক্রম বলবৎ রয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যম গুলোকে দখল করে নিজেদের ইচ্ছেমতো তথ্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র এখানেই থেমে নেই, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে অন্যের দাসত্ব করে এরা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়।

তিনি আরো বলেন, সরকার তথাকথিত ট্রাইবুন্যাল তৈরি করে মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করেছে। বিগত ১২ বছরে তারা জামায়াত-শিবিরের সাড়ে তিনশত নেতাকর্মীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। এভাবে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে শুধু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী নয় বরং আওয়ামী সরকারে অপকর্মের বিরুদ্ধে যেই কথা বলেছে তাকেই মিথ্যা মামলা-হামলা দিয়ে শেষ করে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে। লাখ লাখ মামলা দিয়ে অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। মামলা দিয়ে ঘর ছাড়া করে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত করে আওয়ামী সরকার জামায়াতের মতো আদর্শবাদী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর ওপরে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। আজ সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছে। এটা দেশকে বিরাজনীতি করণের একটি অংশমাত্র। শুরুতেই জামায়াতের নেতৃবৃন্দের ওপর সংঘটিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি দেশের মানুষ জেগে উঠতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের এই করুন পরিণতি বরণ করতে হতো না। দেরিতে হলেও দেশের জনগণ সরকারের অপরাজনীতি বুঝতে পেরে তারা জেগে উঠেছে। দেশের গণতন্ত্র ও মানুষকে মুক্ত করতে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ও এই স্বৈরাচার শাসনের পতন নিশ্চিত করা। যা এই জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করবে ইনশাআল্লাহ।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দেশে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি বিদ্যমান। পৃথিবীতে যত শাসক ক্ষমতায় এসেছে, তারা মনে করেছে আমাদের ক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে না! যার মধ্যে জবাবদিহিতা থাকে না, তার দ্বারাই কেবল জুলুম অত্যাচার সংঘটিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়। যারা মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ প্রত্যাশা করে, মানুষকে বিপদে ফেলে, নিজের পকেট ভর্তি করতে জনগণের অর্থ লুট করে তারা গণমানুষের দুশমন, দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু। তাদের হাত থেকে দেশ ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হবে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে বলতে চাই, চোখের পর্দা সরিয়ে দেখুন জনগণ নিজেদের মুক্তির জন্য জেগে উঠেছে। শিগগিরই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন অন্যথায় করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি