Naya Diganta
সাংবাদিককে তথ্য দিলে চাকরিচ্যুতি

অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকাই কী লক্ষ্য

সাংবাদিককে তথ্য দিলে চাকরিচ্যুতি

আমাদের সবার জানা, যথাযথ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। তাই সংবাদমাধ্যমের কাজই হলো সমাজে যত অনিয়ম-অসঙ্গতি আছে, তার বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয় ছাড়া বাদবাকি সব কিছুর অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে সরকারি দফতরগুলোতে তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের নানা ধরনের বাধা মোকাবেলা করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকারও হতে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন বাস্তবতা বাংলাদেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি। দেশে প্রবর্তন করা হয়েছে মুক্ত সাংবাদিকতাবিরোধী ও নিবর্তনমূলক বেশ কয়টি আইন। এর বাইরেও সরকারি দফতরগুলোতে নিজস্ব কায়দায় অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে কর্মীদের নানা ধরনের বিধিনিষেধে আবদ্ধ করে রাখা হয়। এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)।
সহযোগী একটি দৈনিকে ‘সাংবাদিককে তথ্য দিলে জেল!’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকের কাছে তথ্য দিলে চাকরিচ্যুতিসহ জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়েছেন বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা। গত বুধবার দুপুরে সংস্থার আগারগাঁও কার্যালয়ের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। অফিসে নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সময়মতো উপস্থিত থাকার কথা কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। তবে মূল বক্তব্য ছিল কোনোভাবে যাতে তথ্য পাচার না হয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে বলেও কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়।
এ নিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, অফিস শৃঙ্খলার বিষয়টি যথাযথভাবে মেনে চলার বিষয়ে কর্মকর্তাদের সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশের গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা বিষয়ে ১৯ ধারায় বলা হয়েছে। এ ধারায় বর্তমান ও সাবেক এমএলএসএস থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত কর্মকর্তাদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
কমিশন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, অফিস শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি সভায় বলা হয়েছে ঠিকই, তবে ঘুরেফিরে মূল কথা ছিল সাংবাদিকদের তথ্য না দিতে সতর্ক করার বিষয়টি। বলা হয়েছে, প্রমাণ পেলে প্রথমত চাকরিচ্যুত করা হবে। এরপর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, যাতে জেল-জরিমানা উভয়ই হতে পারে।
কমিশনের এক কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি প্রচ্ছন্ন হুমকির মতো ছিল।
১৯৬৯ সালের এসইসি অধ্যাদেশের ১৯ ধারায় তথ্যে গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা হয়েছে ঠিক; তবে এ গোপনীয়তা কারো দুর্নীতি বা অনিয়মের সুরক্ষায় নয়। এতে বলা হয়েছে, কমিশনের অনুমতি ছাড়া কেউ (কমিশন কর্মকর্তারা বা কর্মচারী) কাজের সূত্রে পাওয়া এমন কোনো তথ্য কোনো ব্যক্তির কাছে যোগাযোগ বা সরবরাহ করবেন না, যা তার পাওয়ার আইনগত অধিকার নেই। ১৯(বি)(১) উপধারায় সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা এমন তথ্য যদি প্রকাশ করেন, যা ব্যবহার করে কেউ শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে লাভবান হয়, তবে তা ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অপরাধ বলে গণ্য হবে।
আমরা মনে করি, গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে বিএসইসির সব পর্যায়ের কর্মীদের সতর্ক করার অর্থ সরলভাবে নেয়ার অবকাশ নেই। শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতি, শেয়ার কারসাজির বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশের সাথে এর সংযোগ থাকতে পারে। তাই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়, এ সতর্কবার্তা কি কোনো বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকার লক্ষ্যে বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের করেছেন?