Naya Diganta

কীটনাশক ব্যবহারে বিপর্যস্ত পেঁয়াজের ক্ষেত : চাষিদের মাথায় হাত

কীটনাশক ব্যবহারে বিপর্যস্ত পেঁয়াজের ক্ষেত : চাষিদের মাথায় হাত

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কেমিস্ট ক্রপ কেয়ার কোম্পানির আগাছা দমনের বালাইনাশক ঔষধ স্প্রে করায় পেঁয়াজের চারায় ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে করে মাথায় হাত পড়েছে উপজেলার কৃষকদের।

উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কুশবাড়ীয়া গ্রামের কুশবাড়িয়া দক্ষিণ মাঠে পেঁয়াজের চারাক্ষেতে এমন বিপর্যয় ঘটেছে।

কৃষকদের অভিযোগ, বালাইনাশক ব্যবহার করায় ৬-৭ বিঘা জমির পেঁয়াজের চারা নষ্ট হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাস করা সম্ভব হত। চারা মরে যাওয়ার প্রায় কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। এমন ক্ষতিতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

সরেজমিন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কুশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার ওই মাঠে ১৫ থেকে ২০ জন কৃষক লাল তীর কিংসহ অন্যান্য কোম্পানির ৬০ কেজির মত পেঁয়াজের বীজ বপন করেছিলেন। কয়েক দিন বাদেই পুরোদমে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য মাঠ প্রস্ততও হচ্ছে। পেয়াজের চারায় আগাছা দমনে কেমিস্ট ক্রপ কেয়ার কোম্পানির ক্লিনিক প্লাস ঔষধ স্প্রে করেন কৃষকেরা। এর তিন থেকে চার দিন পরই মাঠের সব চারা মাটিতে মিশে গেছে।

উপজেলার কুশবাড়িয়া গ্রামের খবির শেখ, মো: আজাদ, মো: রাজু, মো: ফজলু বিশ্বাস, কুদ্দুস শেখ, সাবু শেখ, হারুন শেখ, মো: ইদ্রিস, মো: জনি , মো: সনেটসহ ১৫ থেকে ২০ জন কৃষকের জমিতে এই কীটনাশক প্রয়োগ করায় তাদের পেঁয়াজের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে।

কুশবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ পেঁয়াজচাষি খবির শেখ জানান, ‘আমি ৫ কেজি পেঁয়াজের বীজ প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকা দরে কিনে ২৫ শতক জমিতে বপন করেছিলাম। জমিতে আগাছা হওয়ায় কেমিস্ট কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার মিল্টনের কথামতো আগাছা দমনে ক্লিনিক প্লাস স্প্রে করি। এরপর তিন থেকে চার দিন পর এসে দেখি আমার পেঁয়াজের চারা সব মরে গেছে। এখন আমি কী করবো সেই চিন্তায় কোনো কাজ করতে পারছি না। আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল’।

উপজেলার কুশবাড়িয়া গ্রামের আরেক পেঁয়াজচাসি আজাদ বলেন, ‘আমার ২০ শতক জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছিল ও ১০ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ বপন করেছিলাম যা বড় হয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিন পরেই লাগানোর উপযোগী হয়ে উঠতো। আগাছা দমনের জন্য ক্লিনিক প্লাস কীটনাশক স্প্রে করায় পেয়াজের চারা সব মরে গেছে।’

ক্লিনিক প্লাস কীটনাশক বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিক্রয়ের জন্য আমি দোকানে কেমিস্ট ক্রপ কেয়ার কোম্পানির কাছ থেকে ২৭ কার্টুন ঔষধ ক্রয় করেছিলাম। প্রতি বোতল ঔষধের দাম ১৩৫ টাকা ছিল। আমি ঔষধ বিক্রি না করায় কেমিস্ট কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার আমিরুল ইসলাম ১০০ টাকা করে পিস বিক্রি করতে বলেন। সেই মোতাবেক আমি অনেক কৃষকের কাছে এই ক্লিনিক প্লাস ঔষধ বিক্রি করেছি। এখন শুনছি এই ঔষধ ব্যবহার করায় পেঁয়াজের চারা সব মরে গেছে’।

কেমিস্ট কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার মো: মিলটন পেঁয়াজচাষিদের কাছে ঔষধ বিক্রি করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এমন ক্ষতি হয়েছে আমি শুনেছি। আমাদের কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা ২-১ দিনের মধ্যে আসবে তারা এসে সুরাহা করবেন।’

কেমিস্ট এ্যান্ড ক্রপ কোম্পানির ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। কী কারণে এমন ক্ষতি হল তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

শৈলকুপা কৃষি অফিসার মো: আনিসউজ্জামান বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। আমি সরেজমিনে মাঠে যাব, কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে’।

তিনি বলন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোম্পানির কাছ থেকে কিছুটা রিকোভারি করা যায় কিনা সেদিকে চেষ্টা করা হবে। অবৈধ ঔষধ বিক্রেতাদের দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: বনি আমিন বলেন, ‘এ ব্যাপারে অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে কৃষকদের স্বার্থে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে এটা মেনে নেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।