Naya Diganta

স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শনের জমায়েত এক নয়

স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশের সাথে শক্তি প্রদর্শনের জন্য আয়োজিত শোডাউনের মধ্যে প্রকৃতি, গুণ ও বৈশিষ্ট্যগত বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। এই প্রসঙ্গটি এ জন্য তোলা হলো- মাত্র কিছু দিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির ইদানীংকালের বিশাল সব সমাবেশের প্রতি ইঙ্গিত করেই হয়তো সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে সমাবেশগুলোকে শক্তি প্রদর্শনের সাথে তুলনা করে এমন মন্তব্য করেছিলেন। তার সেই মন্তব্য সব জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিক থেকে তার মন্তব্যের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো। ‘রাজপথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে না বলে মনে করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে এসে কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।’ ‘শক্তি প্রদর্শনের’ বিষয়টি তিনি এভাবেই তুলে ধরেছেন। সেই সমাবেশগুলো ভয় ধরিয়ে দিয়েছে কি না জানি না। তবে এ কথা সবারই উপলব্ধি করা উচিত, বিএনপি দেশের কয়েকটি বিভাগীয় শহরে এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলা শহরে যেসব বিশাল সমাবেশ করছে সেসব সমাবেশের ‘নেচার’ বা প্রকৃতি কিন্তু শক্তি প্রদর্শনের জন্য নয়, বোধ-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনো মানুষ এসব সমাবেশকে কোনোভাবে বলতে পারেন না- এসব সমাবেশ শক্তি প্রদর্শনের জন্য হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গণদাবি ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সব সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। অপর দিকে শক্তিমত্তা দেখানোর সব শোডাউনে প্রকৃতি ও লক্ষ্য একেবারে ভিন্ন। সেখানে ‘নর্তন কুর্দন’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ, ভয়ভীতি দেখানোর জন্য বলা হয়, দেখে নেবো, মোকাবেলা করা হবে।’ এমন সব বাক্যই হামেশাই উচ্চারিত হয়; লাঠিসোঁটা থাকে কর্মী-সমর্থকদের হাতে যেসব শোডাউনে। সেসব শোডাউনে স্বাভাবিকতা, স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না যেহেতু শোডাউনে ভাড়া করা মানুষের উপস্থিতির সংখ্যাই বেশি হয়ে থাকে। সে জন্য তাদের শত শত বাসে করে আনা হয় এবং ফিরিয়ে নেয়া হয়। অনেক মানুষই সমাবেশ প্রাঙ্গণে না গিয়ে বাসেই বসে থাকে- এমনটিই দেখা যায় এবং বাকি যারা সভাস্থলে যায়, তারা সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই ময়দান ত্যাগ করে বাসে এসে ঘরে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কেন না তারা তো হাজিরা দিয়েছেন।

দেশের সব মানুষকে অবুঝ, বুদ্ধিমত্তায় খাটো- এসব ভাবার কোনো অবকাশ নেই, তারা সব স্বচ্ছভাবেই দেখে, বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম। তারা দেখেছে, প্রধান বিরোধী দলের এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলোতে মানুষ যাতে অংশ নিতে না পারে সে জন্য কত ছলনা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং হচ্ছে। সেইসব বাধা-বিপত্তিজনিত পথ কষ্ট উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ পতঙ্গের মতো দুই-তিন দিন আগেই ছুটে এসে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। শক্তি প্রদর্শনের অভিলাষ থাকলে সবাই লাঠিসোঁটা নিয়েই হাজির হতো। কিন্তু দেখা গেছে, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের কর্মী-সমর্থকদের হাতে একটি কঞ্চিও ছিল না।

বিএনপির সেসব সমাবেশ থেকে কোনো হুঙ্কার, হুমকি, উত্তাপ বা উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে না। সমাবেশ থেকে যা বলা হচ্ছে, তা মানুষের হৃত অধিকার ফিরিয়ে দেয়া ও বেঁচে থাকার জন্য মহামন্দার হাত থেকে অর্থনীতিকে সুষ্ঠু খাতে ফেরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষমতার পালাবদলের জন্য সুষ্ঠু প্রশ্নহীন নির্বাচনের কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তাদের সব বক্তব্যই সংবাদপত্রসহ সব মিডিয়ায় উঠে এসেছে। ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি দেশের বিরাজমান অবস্থা থেকে ‘বেল আউট’-এর জন্য যেসব কর্মসূচি দিয়েছে, সেগুলো এই মুহূর্তে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। আজকে দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল ক্ষমতাসীনদের অজ্ঞতা, অদক্ষতা, ‘ভালো-মন্দ’কে খারাপ করতে না পারার কারণে। তারা যা কিছু করেছে তার তো সাক্ষী দেশের মানুষ। তাই এখন একটি পালাবদল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, এ জন্য আর কালবিলম্ব হওয়ার অর্থ, পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটানো। এখন আর কারো গোঁ ধরা, অবিবেচকের মতো আচরণ করার কোনো মানে নেই।

এতকাল কে কী করেছে তার কোনো জাজা নেয়া হয়নি। জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই। শত শত নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে হরিলুটের আয়োজন করা হয়েছে; কোথাকার টাকা কোথায় গেছে তার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। অথচ আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ল্যাবেল লাগিয়ে চলি। কিন্তু সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে শৈলী এ দেশ তার ধারেকাছে নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্যের অতি সাম্প্রতিককালের একটি ঘটনার বিষয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেটি উদ্ধৃত করা হলে বিষয়টি সবার কাছে জবাবদিহিতার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য খোলাসা হবে। খবরের শিরোনাম হচ্ছে- ‘ভাস্কর্য কেনার অর্থ নিয়ে বিতর্কে সুনাক’। খবরের বডিতে রয়েছে, বিপুল অর্থ (!) খরচ করে বিখ্যাত ব্রিটিশ ভাস্কর হেনরি স্পেনসার মুরের তৈরি একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর সংগ্রহ করায় যুক্তরাজ্য সরকার ক্ষোভের মুখে পড়েছে। আর্থিক সঙ্কটের এ সময়ে ভাস্কর্যটির জন্য ১৩ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৬ কোটি টাকা) খরচ করায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বেহিসাবি আচরণের অভিযোগ উঠেছে। নিলামে ভাস্কর্যটি কেনার পর এটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারি কার্যালয় ও বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে রাখার জন্য পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যে যখন মূল্যস্ফীতি চলছে, জীবন-যাপনের খরচ বেড়ে গেছে এবং সরকারি তহবিলে কাটছাঁট করা হচ্ছে, তখন এত অর্থ ব্যয় করে ভাস্কর্যটি সংগ্রহ করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ...বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এ ভাস্কর্যের যে খরচ হয়েছে তাকে সরকারি তহবিলের অসংযত ব্যবহার বলা যেতে পারে।

এখন আসুন, আমাদের অবস্থাটা কী। এ দেশে চরম সঙ্কট চলছে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি বহুদিন থেকে। তারপর হাজার হাজার কোটি টাকা অকাতরে দরিয়ায় ফেলা হচ্ছে। তারপরও কি এখানে কোনো জবাবদিহিতা আছে? গণতান্ত্রিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জবাবদিহিতা। সেটা এখন থেকে বহুকাল আগেই উঠে গেছে। দেশে পার্লামেন্ট তথা জাতীয় সংসদ থাকলেও সেটি প্রকৃতপক্ষে অকার্যকর। সে জন্যই দুর্নীতি অর্থপাচার সীমাহীন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

কোনো দায়িত্বশীল মহল থেকে মানুষকে ‘মিস লিড’ তথা বিভ্রান্ত করা কোনোক্রমেই ভালো নজির নয়। এতে হয়তো সব প্রতিষ্ঠানসহ ইসিকে নিয়েও অভিযোগ উঠতেই পারে তারা ‘পার্টিজেন্ট’ বা কোনো দলবিশেষের জন্য বেশি আবেগ অনুরাগ পোষণ করে এবং কোনো দলের প্রতি বিরাগভাজন। উপরে বলা হয়েছেÑ সিইসি এসব বিশাল সমাবেশ দেখে সম্ভবত ভয়ই পেয়েছেন। আওয়ামী লীগও কিন্তু ভীতসন্ত্রস্ত। সিইসি ও আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে এখন যেন সমান্তরালে অবস্থান করছে। আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে এ জন্য যে, এসব সমাবেশ থেকে তাদের স্পষ্ট এবং জোরালো ভাষায় বলা হয়েছে, তাদের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। তাদের এখন বিদায়ের বার্তা দিতে কোটি জনতা একাট্টা। আওয়ামী লীগকে যদি বিদায়ই নিতে হয়, বর্তমান ইসির প্রধানসহ সব কমিশনারকে নির্বাচন কমিশনের ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অবসরের পর এমন কর্মক্ষেত্র হারানো বেদনারই বিষয়।

বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত বিগত দু’টি সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়ম করার শত অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গোটা দেশের মানুষের কাছে তাদের নখদর্পণে সব তথ্যাদি রয়েছে। সে জন্য ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আর কোনো নতুন ‘এলজাম’ দাঁড় করানোর কোনো যৌক্তিকতা বা প্রয়োজন নেই। অপর দিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ বহু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন বর্তমান ইসিই করিয়েছে। এসব নির্বাচনের প্রতিটিতে যে অনিয়ম, অব্যবস্থা, সুষ্ঠু পরিবেশের যে ঘাটতি দুর্বলতা দেখা গেছে সেটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে আছে। ইসির কর্মকর্তা তথা কমিশনারদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা; সর্বোপরি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি তারা করতে পারেননি। সে জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা থাকলেও বহু ব্যক্তি প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। তাই বহু স্থানে একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীনদের মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ঠিক একই কারণে চলতি জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উৎরে গেছেন। এটি কোনো ‘হেলদি সিচুয়েশন’ নয় যা গণতন্ত্র, প্রাণবন্ত নির্বাচনকে হাস্যকর এক প্রহসনে পরিণত করেছে। সংবিধানে ইসিকে যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে সেটি বর্তমান ইসিসহ আগের দু’টি কমিশনের পক্ষে চর্চা করা সম্ভব হয়নি অজ্ঞাত কারণেই।

এসব দুর্বলতা ও তাদের ‘অ্যালিজেন্স’ বা আনুগত্য অন্যত্র থাকায় এসব ইসির কার্যক্রমের ফলেই দেশে গণতন্ত্রের হাল এমন শোচনীয় পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের মানুষকেও এ জন্য ভাবনায় ফেলেছে। তবে আমাদের ইসি এ জন্য খুব একটা চিন্তিত বা বিব্রত, এমন নয়। দেশের সরকারের আচার-আচরণ বিশেষ করে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের কতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যাবে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। ইসি প্রধান জনাব আউয়ালের কথোপকথনের যে বিষয় আগে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে মন্তব্যকালে তিনি বলেছেন, ‘সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা না থাকলে নির্বাচনকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সফল করা যাবে না।’

অর্থাৎ তিনি যদি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাছে অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে যথাযথ সরকারি সহযোগিতা পেতেন, তাহলে এমন মন্তব্য করতেন না। এ দিকে সম্প্রতি পত্রিকার খবরে প্রকাশ- ইসির সাথে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। জানা গেছে, ইসির পক্ষ থেকে বেশ আগে নির্বাচনী আইনের সংস্কারের প্রস্তাবসহ একটি দাফতরিক চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তার জবাব ইসি পায়নি। ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে- নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান মতে, সব নির্বাহী বিভাগের অবশ্য কর্তব্য। ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ৫ (২) অনুচ্ছেদেও এমন দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই বিধির আরো কিছু সংশোধন, পরিবর্ধন সংবলিত পরিপত্র প্রায় চার মাস আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব পায়নি। সে জন্য কমিশন পুনরায় এ বিষয়টি আইন ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তা স্মরণ করিয়ে দিতে চিঠি পাঠিয়েছে।

আগের চিঠিটি প্রায় চার মাস আগে পাঠানো হয়েছিল। যেসব নতুন বিধান সংবলিত সংশোধনী প্রস্তাবে রয়েছেÑ ‘নির্বাচন নিয়ে যেকোনো পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে ভোট বাতিল, নির্বাচনী কাজের অবৈধভাবে বাধা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যোগসাজশ এবং পোলিং এজেন্টদের ভীতি প্রদর্শন বা বাধার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা; এ ছাড়া নির্বাচনের খবর সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের বাধা দিলে জড়িতদের তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রেরিত প্রস্তাব রয়েছে।

আসলে এসব প্রস্তাব ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে প্রচণ্ড আঘাত করবে বিধায় সেই সংশোধনী প্রস্তাব কখনো গ্রহণ করা হবে বলে মনে করার কারণ নেই। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যদি ক্ষমতাসীনদের এতটুকু ইতিবাচক মনোভাব থাকত তবে গত দু’টি সংসদ নির্বাচন নিয়ে এত রঙ তামাশা হয়তো হতো না। আর আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন দাবি-দাওয়া উঠত না বা এত উত্তাপ-উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ ঘটত না। সে জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিরোধী পক্ষগুলোর তরফ থেকে এসব দাবির কোনো যৌক্তিকতা থাকত না। স্মরণ করা যেতে পারে, ইতঃপূর্বে অসাংবিধানিক ও সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছিল সেসব নির্বাচন নিয়ে কোনো তর্ক, দ্বিমত, অভিযোগ উঠেনি। আগামীতে এমন প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন না হলে দেশ যে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, তা বলার অবকাশ নেই। দেশের মানুষই শুধু নয়, পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও আশা করে, এ দেশে সংবিধানে ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, সেখানে মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে...।’ এসব কথা যেন কেবল সংবিধানের ভেতরই লিপিবদ্ধ না থাকে। বাস্তবে তা পরিস্ফুট হয়। সবাই এমন আশা করে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- সরকারের ভাবভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি কোনোটাই ইতিবাচক নয়। তাদের মনে রয়েছে ‘সালিস মানি, তবে তালগাছটি আমার’।

ndigantababar@gmail.com