Naya Diganta
ধর্ষণের পর শিশু খুন

পাষণ্ডদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার

ধর্ষণের পর শিশু খুন

অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের অবহেলা শুধু দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলাকে অবনতিশীল করছে না, কচি শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে উসকে দিচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে আমরা টানা শিশুধর্ষণ ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনা দেখে আসছি। এসব ঘটনায় মানুষের মনে বড় দাগ কাটে। তারা কিছুটা প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের শিথিলতার মতো শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনকারী পাষণ্ডরাও পার পেয়ে যাচ্ছে। এতে করে শিশুধর্ষণ ও পৈশাচিক হত্যার ঘটনা অব্যাহত ঘটে চলেছে। চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নৃশংস দুটো শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও শিশুদের প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনার খবর সারা দেশ থেকে প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা না গেলে নরপশুদের হাত থেকে শিশুদের বাঁচানো যাবে না।
চট্টগ্রামে সংঘটিত প্রথম ঘটনায় শিশুটিকে ধর্ষণ করার পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শহরের ব্যস্ত এলাকায়, জামাল খান এলাকায় এটি ঘটেছে। বর্ষা নামের সাত বছরের শিশুটি পার্শ্ববর্তী দোকানে চিপস কিনতে যায়। মুদি দোকানের কর্মচারী লক্ষণ দাশ তাকে ফন্দি করে গোডাউনে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একপর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। টিসিবির বস্তায় পুরে লাশ ড্রেনে ফেলে দেয়। লাশ উদ্ধার ও সিসিটিভি ক্যামেরা যাচাইয়ের পর লক্ষণকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের কথা স্বীকার করে। দ্বিতীয় ঘটনায় পাঁচ বছরের শিশু আয়াতকে ছয় টুকরো করে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছে খুনি।
খুনের শিকার শিশুদের পরিবার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। শিশুদের নিরাপত্তাহীনতায় অভিভাবকরা উদ্বেগ জানাচ্ছেন। তাদের হাতে থাকা প্লাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘বর্ষা-৭ বছর, ধর্ষণ ও হত্যা। আয়াত-৫ বছর, হত্যার পর ছয় টুকরো করে লাশ গুম।... এরপর কে?’ ভুক্তভোগী পরিবারের এ প্রশ্ন আমরা বহু দেখেছি। ঠিক এরপর অন্য কেউ বলি হয়েছে। অন্য দিকে হত্যাকারী ও তার সহযোগীকে দ্রুততার সাথে বিচার করা যায়নি। বিচারের দৃষ্টান্তমূলক নজির সৃষ্টি করা যায়নি। ফলে নির্ধারিত বিরতিতে শিশুধর্ষণ, হত্যা, গুম হয়েই চলেছে। মঙ্গলবারের খবরে জানা যাচ্ছে, আয়াতের খণ্ডিত লাশ তখনো উদ্ধার হয়নি।
এ দেশে শিশুরা মানুষের লোভলালসা প্রতিহিংসার সহজ শিকার হয়ে চলেছে। সামান্য কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়ার্কশপের মালিক পায়ুপথে পাইপ ঢুকিয়ে এক শিশু হত্যা আমাদের দেশে হয়েছে। গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, হত্যার পর লাশের বিকৃতি করার ঘটনা এর আগে ঘটেছে। এমনকি পারিবারিক বিরোধে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজের শিশুকে হত্যার ঘটনাও এ দেশে ঘটেছে। একটি সমাজে মানুষের চারিত্রিক অধঃপতন কতটা নিম্নপর্যায়ে গেলে এমনটা হতে পারে, আমাদের জানা নেই। বর্ষা ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার আসামি লক্ষণের ব্যাপারে মিডিয়া জানাচ্ছে, এই পাষণ্ডের মধ্যে এই জঘন্য অপরাধের জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই। এ ধরনের লক্ষণ বাংলাদেশে এখন অগণিত। পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের অধিকতর পাপের দিকে পরিচালিত করছে। অপরাধ করতে করতে আমাদের ভেতর থেকে অনুশোচনা বিলুপ্ত হতে চলেছে।
প্রতিদিন আরো হাজারো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে শিশুদের প্রতি। নানা উপায়ে যৌন নির্যাতন, নিষ্ঠুর কায়দায় নির্যাতন, অপমান লাঞ্ছনা সমাজের একটি অংশের শিশুরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে। বাইরের লোকের পাশাপাশি কম জোরির কারণে নিজেদের পরিবারের লোকদের দ্বারাও এমন বাজে আচরণ হচ্ছে। বহু শিশু এসব কারণে মানসিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর বোঝা হবে, হচ্ছে। একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য শিশুদের প্রতি সব ধরনের নির্যাতনের পথ বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণ ও খুনের জঘন্য ঘটনাগুলোর বিচার করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।