Naya Diganta

ফের সূচক পতনে শেয়ারবাজার ডিএসইর লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে

-জাপানে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব’
-৫৫ কোম্পানি পাচ্ছে আইসিএমএবি অ্যাওয়ার্ড

এক কার্যদিবস কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে আবার দরপতন হয়েছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ক’টি মূল্যসূচক কমেছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।


সব ক’টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি দুই বাজারেই দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে তারা ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করতে পারছেন না। এর আগে গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ডিএসইতে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে রোববার সূচক ও লেনদেন কিছুটা বাড়লে ডিএসইতে লেনদেন চার শে’ কোটি টাকার নিচে থাকে।


আর এক কার্যদিবস সূচক কিছুটা বাড়ার পর সোমবার আবার বড় দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের। তবে লেনদেন বেড়ে চার শ’ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে। অবশ্য এই লেনদেন বাড়া বিনিয়োগকারীদের খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে। ফলে শেয়ারবাজারে লেনদেনের আট মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর সূচক কিছুটা বাড়লেও তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি; বরং বেলা ১১টার পর থেকে সূচক টানা নিচের দিকে নামতে থাকে। সেই সাথে বড় হতে থাকে দরপতনের তালিকা। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৩টির। আর ২০৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।


সব ক’টি মূল্যসূচক কমার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৭ কোটি দুই লাখ টাকা।
বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরা পেপারের ৩৬ কোটি আট লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে চটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আমরা নেটওয়ার্ক, ওরিয়ন ফার্মা, ইস্টার্ন হাউজিং, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, সামিট এলায়েন্স পোর্ট, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে সাত কোটি ৩২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৫টির এবং ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।


‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব’: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) জাপানে ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বেলা স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টায় প্রোগ্রামটি শুরু হবে। সোমবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টোকিওতে এএনএ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশ মব অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিনিয়োগকারী এবং শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা এতে অংশ নেবেন। বাংলাদেশ ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাপানে এ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে।


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া ফরিন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট-সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন করবেন। আর বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্ট প্রোপ্রেস-সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন করবেন। আর বিশেষ অতিথি থাকবেন জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।


৫৫ কোম্পানি পাচ্ছে আইসিএমএবি অ্যাওয়ার্ড
১৭ ক্যাটাগরিতে ৫৫ কোম্পানি পাচ্ছে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড। আগামী বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এই অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে।
সোমবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মো: মামুনুর রশিদ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবার আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ডের জন্য ১৬৫টি কোম্পানি আবেদন জানিয়েছিল। আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে ২৮টি মানদণ্ড আমলে নেয়া হয়েছে। ১৭টি ক্যাটাগরিতে, ৫৫টি কোম্পানিকে ব্রোঞ্জ, সিলভার ও গোল্ড পুরস্কার দেয়া হবে।


অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মো: মামুনুর রশিদ বলেন, অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এনজিও প্রতিষ্ঠানকেও এবার অ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে যেসব কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাইলাইজেশন বেশি, আমরা ওই সব কোম্পানিকে প্রাধান্য দেয়। এখানে তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা একটি ব্যাপার। আমরা দেখি যেগুলো ভালো কাঠামোর কোম্পানি তাদের ডিসক্লোজার বা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি। অনেকগুলো মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে আমরা এ পর্যন্ত ১৭টি সেক্টরকে নির্বাচন করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতি বছর নতুন সেক্টর সংযুক্ত করি। শুরু করেছিলাম ১০টি সেক্টর দিয়ে। এরপর ১২, ১৩টি করে এবার ১৭টি সেক্টরকে নির্বাচিত করেছি। আশা করি সামনে ২০ সেক্টর হতে পারে। এগ্রো, গার্মেন্ট, সিমেন্ট, বহুজাতিক কোম্পানি, পাওয়ার সেক্টর, টেলিকম সেক্টর, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, ওষুধ, টেক্সটাইল এগুলোকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দেয়।


সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়া-উল-ইসলাম। এ সময় আইসিএমএবি অ্যাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান মো: আবদুল আজিজ, সাফা উপদেষ্টা ও সাবেক সাফার প্রেসিডেন্ট এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, আইসিএমএবি সেক্রেটারি এ কে এম কামরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ মো: আলী হায়দার চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।